শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সততার সাহসে রূপালী সকাল

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত ২৮ আগস্ট ‘ভগ্নপ্রায়’ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে যোগদান করেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন ব্যাংকে আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ওপর। ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা ও তাঁর অবস্থান নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের


নিজের সততার ওপর ভর করে যেদিন রূপালী ব্যাংকের সকল অনিয়ম দূর করে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন, সেদিন নিজেকে সফল মনে করবেন রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান। গ্রাহকের অবস্থানে থেকে রূপালী ব্যাংকের সেবায় সন্তুষ্ট তিনি। অনলাইন এবং কুইক সার্ভিস হলো রূপালীর গ্রাহকদের সন্তোষের মূল কারণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান রূপালীর ৫০৬টি শাখা সিবিএস। অর্থাৎ এই শাখাগুলোর গ্রাহক যেকোনো শাখায় লেনদেনসহ সব ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। বাকি ৪৯টি শাখা মার্চের মধ্যে সিবিএস-এর আওতায় আসবে। রূপালী ব্যাংককে শতভাগ প্রযুক্তি-বান্ধব করতে সামনে ঋণের আবেদনও অনলাইনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
তবে গ্রাহক হিসেবে আতাউর রহমানের অসন্তোষের জায়গা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে না নিতে পারা পঞ্চাশোর্ধ কর্মকর্তারা যারা ব্যাংকের মোট জনবলের ৪০ ভাগ। পঞ্চাশোর্ধ জনবল প্রযুক্তিবান্ধব না হওয়ায় তিনি নতুন জনবল কাঠামো পাশ করেছেন তরুণদের নিয়োগের জন্য।
২০১৭ সালে রূপালী ব্যাংকের ভালো অবস্থানে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত আতাউর রহমান জানালেন, মার্চের মধ্যে বাকি ৪৯টি শাখা অনলাইনের আওতায় আসবে। ব্যাংক ফুল অটোমেশনে যাওয়ায় গ্রাহক লেনদেন বাড়বে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করতে পেরেছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যে নন-পারফর্মিং ঋণ ৩শ’ কোটি টাকা কমিয়ে এনেছেন। চলতি বছরের মধ্যে এই ঋণ ১০ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনবেন প্রধান, যে হার বর্তমানে ১৭ শতাংশ। তাই চলতি বছরে রূপালী ব্যাংকের ভালো অবস্থানে না যাওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না সোনালী ব্যাংকের সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত এমডি।
তাঁর দৃষ্টিতে, রূপালী ব্যাংকের সবচেয়ে শক্তির জায়গা ৬০ ভাগ তরুণ জনশক্তি। এদের দিয়েই ব্যাংকের উন্নয়ন সম্ভব। দায়িত্ব গ্রহণের পর শুরুতেই এদের নিয়ে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম করেছেন আতাউর রহমান। কিভাবে কাজ করতে হবে সেটা ৫৬২ জন ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি, যাদের ৯০ ভাগ তরুণ।
রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা এমন কিছু নন-পারফরমিং লোন যা কোনোভাবেই নিয়মিত করতে পারছেন না তিনি। “বর্তমানে ব্যাংকের ১৭ শতাংশ খেলাপি ঋণের অর্ধেক নিয়মিত করা খুব কঠিন হবে”, বলেন আতাউর।
প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিজেকে কখন সফল মনে করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর ‘খুব কঠিন’ উল্লেখ করে আতাউর রহমান বললেন, “ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেদিন বলবেন, রূপালী আমার মাতৃসম প্রতিষ্ঠান, সেদিন ব্যাংকের সকল অনিয়ম-অন্যায় দুরীভূত হবে। রূপালী ব্যাংকের পুরো জনশক্তির মধ্যে যেদিন এই মনোভাব সৃষ্টি করতে পারবো, খেলাপি ঋণের হার স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারব, পুরো ব্যাংকে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পারবÑ সেদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিজেকে সফল মনো করবো।”
নিজ ব্যাংকের বোর্ডকে ‘অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন’ উল্লেখ করে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, “আমার ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ নিয়ে আমি খুব খুশি। আমি এর আগে ২/৩টা বোর্ডে কাজ করে এসেছি। কিন্তু এরকম ভালো বোর্ড এর আগে পাইনি। আমার জানামতে দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম সেরা বোর্ড এটি। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দৈনন্দিন কোন কাজে বোর্ডকে হস্তক্ষেপ করতে দেখিনি। বর্তমান বোর্ড আমার জন্য খুবই ‘সাপোর্টিভ’।”
ব্যাংকের মোট ঋণের ৮০ ভাগ গ্রামে বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে প্রথম দিন থেকেই কাজ করছেন আতাউর রহমান। থানা ও জেলা পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সব শাখা ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দিয়েছেন, ঋণের প্রস্তাব নিয়ে হেড অফিসে পাঠাতে। শাখা ব্যবস্থাপকদের সম্মেলনে নতুন উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন তিনি। শাখা পর্যায়ে ‘ঋণ বিশেষজ্ঞের’ ঘাটতির কথা স্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, সব বিভাগীয় অফিসে ঋণপ্রস্তাব নিষ্পত্তি করার মতো জনবল দেয়া হবে।
দায়িত্ব নেয়ার পর পরই শীর্ষ ২০ খেলাপির সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন আতাউর রহমান। ফলও পেয়েছেন। ২০১৫ সালে এদের থেকে যেখানে আদায় ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা, সেখানে তার দায়িত্ব গ্রহণের পর আদায় হয়েছে ১শ’ কোটি টাকা। মোট খেলাপি ঋণ আদায় করেছেন ৩শ’ কোটি টাকা যেটা আগের বছর ছিল ১২০ কোটি। তিনি আর নতুন কোন ঋণ ‘রাইট অফ’ করবেন নাÑ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সবাইকে।
২০১৫ সালে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ব্যাংকের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। কারণ ‘অসত্য’ মুনাফা দেখানোর কারণে সরকারকে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়েছে যা আরও ক্ষতির কারণ হয়েছে। আগে কর্মকর্তাদের মাঝে সঠিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের বিষয়ে সচেতনতা ছিল না। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর তারা সচেতন হয়েছেন। তারা এখন সঠিক তথ্য উপস্থাপন করছেন।
প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিজের শক্তির জায়গা ‘সততা’। বলেন, “আমি যদি সৎ না হই তাহলে সততার কথা বলতে পারবো না। আমার সেই সৎসাহস আছে।”
শুধু গ্রাহকদের জন্য নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও সুখবর দিয়েছেন  তিনি। নিয়মিত পদোন্নতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে অবশ্যই এটা ‘গণহারে’ নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে। এখন থেকে শুধু যোগ্যরাই প্রণোদনা পাবেন।
লোকসানে থাকা শাখাগুলোকে মুনাফা ফেরানো প্রসঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপকদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজারের দায়িত্ব ডিপোটিজ কাজে লাগানো। কিছু ব্রাঞ্চ আছে ডিপোজিট নিতে পারে কিন্তু বিনিয়োগ করতে পারে না। এসব ব্রাঞ্চ থেকে ডিপোজিট নিয়ে ব্রাঞ্চকে কিছু ইন্টারেস্ট দেয়া হতো। এখন এটা বন্ধ করা হয়েছে। আমি ব্রাঞ্চগুলোকে বলে দিয়েছি, তোমাদের অর্থায়ন করে আয় তোমরা করে নাও। “ম্যানেজারকে শাখা লাভজনক করতে হলে সর্বোৎকৃষ্ট উপায়ে আমানত অর্থায়ন করতে হবে”, বলেন কর্মজীবনে সফল এই সিনিয়র ব্যাংকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Altaf hossain ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:৫৯ পিএম says : 0
Honorable MD sir has rightly n timely felt the pulse of RBL. Under his competent guidance n leadership RBL will be the one of the best bank in the field of state own banks very soon. Every employee should work to achieving this goal accordingly.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন