বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

বৃক্ষ মানবের হাতে সফল অস্ত্রোপচার

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : হাতে পায়ে গাছের মত শেকড় গজানো বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষ মানব (ট্রি-ম্যান) আবুল বাজনদারের হাতে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আবুলের ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনীতে অস্ত্রোপচার করা হয়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান প্রফেসর আবুল কালামের নেতৃত্বে ৬ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচার করেন।
এদিকে অপারেশন করে ট্রি-ম্যান আবুল বাজনদারের ডান হাতের কবজি থেকে পাঁচ আঙুলের ডগা পর্যন্ত বর্ধিত অংশ ফেলে দেয়ার সময় যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেটি ভালদিক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া তার হাতের আঙুলের অস্তিত্ব বোঝা গেছে, সেসব নাড়াতেও পারছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষামূলক এই অপারেশন সফল বলে দাবি করেন আবুল কালাম আজাদ। এ হাসপাতালেরই প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান আবুল কালাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আবুল বাজনদারের অপারেশন কঠিন কিছু না হলেও এই রোগ যাতে পুনরায় সংক্রমিত না হয়Ñ তা-ই ভাবনার বিষয়। রোগটি জ্বিনগত সমস্যা থেকে হয়। এরই মধ্যে তার দেহ থেকে সংগৃহীত নমুনা আমেরিকায় একজন বিজ্ঞানীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার উপায় বের করা। একই সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বের করার চেষ্টা চলছে আক্রান্ত জ্বিন শনাক্তের। তখন জ্বিন থেরাপি দিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবুল কালাম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া।কমপক্ষে তিনমাসের আগে আবুলের আর কোনো ধরনের অপারেশন করা হবে না জানিয়ে শমরিতা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও চর্মরোগের প্রফেসর ডা. কবীর চৌধুরী বলেন, ভাইরাসটি আক্রমণ করে চামড়ার ইপিডার্মিস স্তরে। এখানেই অপারেশন করা হয়েছে। এটি সেরে পুনরায় অপারেশনের উপযোগী হতে হবে। ডাইথার্মি নামক যন্ত্র দিয়ে তার আঙুল থেকে বৃক্ষের মতো বর্ধিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই প্রফেসর বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা আবুলের পাশে দাঁড়ান। তার জন্য সহায়তা খুব জরুরি। তার মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান আছে। তাদের ভবিষ্যৎ আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আবুল বাজনদার এখন সুস্থ আছেন। তিন সপ্তাহ পর আমরা তার বাম হাতেও অস্ত্রোপচার করব। এরপর ক্রমান্বয়ে তার দুই পায়েও অস্ত্রোপচার করা হবে। আবুলের হাতের আঁচিলের কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজনদার (২৬) গত কয়েক বছর ধরে হাতে পায়ে গাছের মতো শেকড় গজানোর বিরল রোগে আক্রান্ত। খুলনার চিকিৎসকদের উদ্যোগে আবুলের মা ও বোন গত ৩০ জানুয়ারি তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করিয়েছেন। আবুল এখন ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৫১৫ নাম্বার কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ৪ ফেব্রæয়ারি ঢামেক হাসপাতালে আবুলকে দেখতে এসে জানান, সরকার তার সকল চিকিৎসার খরচ বহন করবে। বার্ন ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আবুল ও তার পরিবারের জন্য সরকার আছে যতদিন তিনি সুস্থ না হন। বর্তমানে আবুলকে রাখা হয়েছে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে। অপারেশন চলাকালে তিনি চিকিৎসদের সঙ্গে কথাও বলেছেন স্বাভাবিকভাবে। অপারেশনে ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রত্যেকেই অংশ নেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন