বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসব করা হলেও কার্যত এখন পর্যন্ত অনেক জায়গায় বই পৌঁছেনি। কোথাও কোথাও কিছু বই পৌঁছালেও বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দুই থেকে সাতটি পর্যন্ত বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। বই দিতে না পারায় ক্লাসই শুরু করতে পারেনি বাগেরহাট রামপাল উপজেলার ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোতে। ঠাকুরগাঁয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানিয়েছে গত সাতদিনে দু’দফায় ৯টি বই দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের তাদের ভাষায় এই প্রথমবার বই দেয়ার কথা থাকলেও নাটোরে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাছে বই পৌঁছেনি। অভিযোগ রয়েছে বই বিতরণের বিশৃঙ্খলা নিয়েও। দেশের ত্রিশটি উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের সব বই পৌঁছায়নি। কেন বই নিয়ে এই বেহালদশা সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য কেউ দেননি। বই যারা সরবরাহ করে সেই জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, সব জায়গায় বই সরবরাহ করা হয়েছে। শিশুদের বই পেতে সমস্যা হয়নি। ভারতে কোন বই নেই। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে সরকার গ্রুপ ও ভারতের শীর্ষাসাই প্রাথমিকের সবপাঠ্যবই সময় মত ছাপাতে পারেনি। সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর সব বই সরবরাহের কথা থাকলেও সরকার গ্রুপ তাতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান গত শনিবার পর্যন্ত ৪৬ লাখ বই দিতে পারেনি। মুদ্রণকারীরা এ প্রসঙ্গে আর্থিক সংকটের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন।
প্রতিবছরই বিনামূল্যের বই সরবরাহ নিয়ে অনিয়মের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কেন এ অবস্থা তা নিয়ে নানা অজুহাত দেয়া হয়। বলা হতো আমাদের দেশি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা না থাকতেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে সময় মত বই তুলে দেয়া যায়নি। সেই অজুহাতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হাতে বই ছাপার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাস্তবত, এতেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাই বলুন না কেন, প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উপজেলায় বই নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারাও বলতে পারছেন না যে কবে নাগাদ বই দেয়া যাবে। অথচ বছরের শুরুতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বইয়ের অভাবে ক্লাস করতে পারছে না। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বশীলরা যেসব বক্তব্য দেন তা যে কার্যক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় না, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই। এমনিতেই আমাদের শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে তার উপর শিক্ষার শুরুতেই যদি কোমলমতির শিক্ষার্থীরা ধাক্কা খায় তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শিক্ষাক্ষেত্রে পড়তে বাধ্য।
সময়মত শিশুদের হাতে পাঠ্যবই না পৌঁছানো দুঃখজনক, সময় মত মনিটরিং থাকলে হয়ত এমন অবস্থা নাও হতে পারত। প্রতিবারের মতো এবারেও সময়মত পাঠ্যপুস্তক নাও পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তখনও সতর্ক হওয়া যেত। এখন যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে আগে থেকে এসব করা গেলে হয়ত পরিস্থিতির সৃষ্টি নাও হতে পারত। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাঠ্যপুস্তক ছাপা নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দুরভিসন্ধি নতুন নয়। ইতোমধ্যে নিয়মের যে ব্যত্যয় ঘটেছে, তা অনাকাক্সিক্ষত। আমরা মনে করি, কেন সময় মতো বই পৌঁছানো যায়নি তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কাল বিলম্ব না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিশুদের হাতে পাঠ্যবই সরবরাহ করা জরুরি। ভবিষতে যাতে এধরনের অবস্থা তৈরি হতে না পারে তার জন্যও সতর্ক হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন