চট্টগ্রাম ব্যুরো : ২০১২ সালের পরে স্কুল পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদী ও বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা সংযোজিত চরম বিতর্কিত কিছু লেখা বাদ দিয়ে সেখানে নৈতিকতা ও আদর্শিক শিক্ষার জনপ্রিয় কিছু গল্প ও কবিতা পুনরায় চলতি সনের পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করায় ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর গায়ে জ্বালা ধরেছে বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল (শনিবার) এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রতিবাদের পর সরকারের নীতি নির্ধারকগণ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সিলেবাসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে ‘হেফাজতের দাবি শতভাগ পূরণ হয়েছে’ বলে যারা বিতর্ক তুলতে চাইছে, যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষয়বস্তু আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে ইসলামী ভাবধারার গল্প কবিতার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছে, মূলত তারাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধ মুছে ফেলে বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ ও নাস্তিকতা ছড়িয়ে দেয়ার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন। তারা ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত তা-ই শুধু নয়, বরং মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও হুমকি তৈরি করছে। তারা নানাভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে দেশের বৃহৎ মুসলিম জনসমাজকে বিক্ষুব্ধ করে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে আধিপত্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের পথ সুগম করতে চায়। পাঠ্যবইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলাম বিদ্বেষী এই চক্রের বক্তব্য গ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। যারা স্কুল পাঠ্যবইয়ে সামান্য ইতিবাচক পরিবর্তনেও বির্তক তুলতে চাইছে, তাদের ডাকে দেশের একশ’ জন মানুষও সাড়া দেবে না। এরা সমাজ ও জনবিচ্ছিন্ন। এদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।
হেফাজত আমির বলেন, স্কুল পাঠ্যবই নিয়ে আমাদের আপত্তি ও অভিযোগের প্রতি দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠনও দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার ও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের নীতিনির্ধারকগণও পাঠ্যবইয়ের এমন পরিবর্তনে বিস্ময় ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নয়। হেফাজত অরাজনৈতিক অবস্থান থেকেই জাতীয় স্বার্থ, নৈতিক আদর্শ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় নিয়েই কথা বলে। স্কুল পাঠ্যবই নিয়েও হেফাজত চেয়েছে, নৈতিক আদর্শ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতি রেখে সামাজিক চাহিদা অনুপাতে যেন পাঠ্যবই প্রণয়ন করা হয়। গুটিকয়েক দুষ্টচক্রের ষড়যন্ত্রে হিন্দুত্ব ও নাস্তিক্যবাদী ধ্যান-ধারণার শিক্ষা ৯০ ভাগ মুসলিম শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তার তো যৌক্তিকতা থাকে না, মেনে নেয়াও যায় না।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, স্কুল পাঠ্যবই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গণতান্ত্রিক শাসনের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থেকে সরকার যদি ইতিবাচক পরিবর্তন করে, তবে সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এখানে হেফাজতের একার খুশী বা অখুশী হওয়ার প্রশ্ন নয়। আমরা চাই, চলতি সনের স্কুল পাঠ্যবইয়ে কী কী পরিবর্তন হয়েছে, সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাচাই করে দেখা হোক। আমরা আলেম সমাজও যাচাই করে দেখব। ইতিবাচক পরিবর্তন হলে তো ভাল কথা। ভুল কিছু থেকে গেলে সেটা নিয়েও তো আলোচনা হতে হবে।
বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতের দাবি শতভাগ পুরণ হয়েছে’ বলে যারা বিতর্ক তুলতে চাইছে, বাংলাদেশের মানুষ সেই চিহ্নিত গোষ্ঠীকে ভালভাবেই জানে। এরা সমাজ বিচ্ছিন্ন অতিক্ষুদ্র একটা অংশ। যাদের কাজই হচ্ছে নৈতিক আদর্শ ও ইসলামী চেতনাবোধের বিপক্ষে এবং নাস্তিক্যবাদ ও স্বেচ্ছাচারিতার পক্ষে কথা বলে ভোগবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করা। মূলত এরা দেশী-বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে কাজ করে এবং নিজেরা ভোগবাদীতা ও স্বার্থ চরিতার্থ করে। এরা শুধু দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার ক্ষতি করছে তা নয়, বরং তারা ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম চেতনাবোধেরও ক্ষতি করছে। এরা ‘ও’ দিয়ে ‘ওড়না’ লেখায় সাম্প্রাদয়িকতা ও অসামঞ্জস্য খুঁজে পায়, কিন্তু ‘র’ দিয়ে ‘রথ টানি’, ‘ত’ দিয়ে ‘তবলা বাজাই’, ‘ঢ’ দিয়ে ‘ঢাক বাজাই’, ‘ঋ’ দিয়ে ‘ঋষি’র মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও অসামঞ্জস্য খুঁজে পায় না।
আল্লামা শাহ আমদ শফী আরো বলেন, হেফাজতের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক বাংলাদেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। এটা বাংলাদেশ, মিয়ানমার নয় যে, অং সান সুচির মতো মুসলমানদের ও আলেমদের বিরুদ্ধে যা খুশী বলে পার পেয়ে যাওয়া যাবে। প্রয়োজনে ইসলাম বিদ্বেষী ভোগবাদি এই নাস্তিক্যবাদি চক্রকে উৎখাত করতে আওয়াজ তুলতে হবে। কারণ এরা বার বার ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে দেশে গোলযোগ ও প্রশাসনিক সংকট তৈরি করে চরমপন্থার প্রতি উস্কানী দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়।
হেফাজত আমির ‘স্কুল পাঠ্যবইয়ে হেফাজতের দাবি শতভাগ পুরণ হয়েছে’ বলে কয়েকটি পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের উস্কানিমূলক সংবাদ প্রতিবেদন ও চিহ্নিত ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের মুখপত্রের ভূমিকা বাদ দিয়ে দেশের গণমানুষের মুখপত্রের ভূমিকা পালন করুন। অন্যথায় আপনারাও নাস্তিক্যবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত ও প্রত্যাখ্যাত হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন