শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যারিয়ার

পেওনিয়ার ফ্রিল্যান্সারদের লেনদেনকে সহজ করছে

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রিফাত আহমেদ, যার নেশা ও পেশা দুটোই ইন্টারনেট মার্কেটিং। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তিনি এই সেক্টরের সাথে জড়িত আছেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে। দেশের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন বৃহৎ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিউনিটি, যার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রফেসনালস্ এসোসিয়েশন (বিআইপিসি) কর্তৃক পেয়েছেন আইটি সেক্টরে ‘আইকন’ সম্মাননা এবং তার ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারর্স বিডি’ ‘সোশাল রিকগনেশন’ পেয়েছে। বাংলাদেশের ২৫ জন সফল উদ্যোক্তাদের নিয়ে লেখা ‘টেঁকি সফল উদ্যোক্তা’ বইয়ে এবং পেওনিয়ারের আন্তর্জাতিক ব্লগে তিনি ফিচারড হন। ২০১৫ সালে বেসিস’র ‘ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড’-এর জুরি বোর্ডের মেম্বার হন তিনি। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া থেকেও পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। বর্তমানে তিনি পেওনিয়ারের হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেওনিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা হয় এই কর্মকর্তার। কথোপকথনে ছিলেন নুরুল ইসলাম।

দৈনিক ইনকিলাব: পেওনিয়ার কী?
রিফাত আহমেদ: পেওনিয়ার হচ্ছে আর্থিক লেনদেনে সহায়তা দানকারী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক লেনদেনকে সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ছোট-বড়, লোকালসহ সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজের সুযোগ করে দেয়া- সেটা হোক একজন ফ্রিল্যান্সার অথবা আন্তর্জাতিক কোনো বড় কোম্পানি, যাদের লেনদেন মিলিয়ন ডলারেরও বেশী। যে কোন পরিমাণের লেনদেন যেকোন দেশ থেকে পেওনিয়ারের মাধ্যমে সহজে আদান প্রদান করা যায়। বর্তমানে এটি ‘আইএনসি ৫০০০’ এর সেরা ১০০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে। ‘স্টিভি অ্যাওয়ার্ডস্ - ২০১৬’-এর ‘পিপলস্ চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’-এ বেস্ট ফাইনান্সিয়াল কোম্পানি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ডসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে পেওনিয়ারের মাধ্যমে বিশ্বের দুইশর অধিক দেশে ১৫০টির বেশী কারেন্সিতে লেনদেন করা যায়। পেওনিয়ার গুগল, অ্যামাজন, এয়ার বি এন বি, আপওয়ার্কসহ দুই হাজারের অধিক পার্টনার রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৩ মিলিয়নেরও বেশী।

দৈনিক ইনকিলাব: পেওনিয়ার সাথে আপনার পথ চলা নিয়ে কিছু বলুন।
রিফাত আহমেদ: ২০০৭ থেকে নিজের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে পেওনিয়ার ব্যবহার করা শুরু করি। এর সুযোগ-সুবিধায় সন্তুষ্ট হওয়ায় অন্য বন্ধুদেরকেও পেওনিয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেই। আমার একটি অনলাইন মার্কেটিংভিত্তিক গ্রুপ আছে ‘অ্যাফিলিয়েট মারকেটারস বিডি’ নামে, যেখানে এখন প্রায় ষাট হাজার মেম্বার আছে। আমি আমার গ্রুপের সবাইকেও পেওনিয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দিতাম। শুরু থেকেই আমি বাংলাদেশের পেওনিয়ার ব্যবহারকারীদের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলাম। যার জন্য ২০১৩ সালে পেওনিয়ারের গ্লোবাল ডিরেক্টর অফ গ্রোথ- নিসিম আমাকে ইমেইল করে জানান যে, আমার উপর একটি স্টোরি লিখতে চায় অফিসিয়াল ব্লগে। এর মাধ্যমে অফিসিয়ালদের সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর আমি বাংলাদেশে পেওনিয়ারের মার্কেট উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ার করতাম। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় পেওনিয়ারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বাংলাদেশে পেওনিয়ারকে অফিসিয়ালি রিপ্রেজেন্ট করার জন্য। ২ বছর দায়িত্ব পালন করার পর এখন আমাকে হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

দৈনিক ইনকিলাব: এখানে অ্যাকাউন্ট করার সঠিক পদ্ধতি কী?
রিফাত আহমেদ: পেওনিয়ারে অ্যাকাউন্ট করা অত্যন্ত সহজ এবং সম্পূর্ণ ফ্রি। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য পেওনিয়ার ডটকমে গিয়ে সাইন আপ করলেই হবে। সাইন আপ করতে আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্রের স্ক্যান কপি, অথবা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি, আপনার বাসার ঠিকানা ও একটি ইমেইল এড্রেস লাগবে। আপনার দেয়া তথ্য যাচাই করার পর অ্যাকাউন্টের অনুমোদন দেয়া হবে। আপনি চাইলে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

দৈনিক ইনকিলাব: কোথায় কোথায় পেওনিয়ার ব্যবহার করা যায়?
রিফাত আহমেদ: পেওনিয়ারের সেবা মূলত অনলাইন লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন পার্টনার কোম্পানি (যেমন আপওয়ার্ক, পিপিএইচ, ফাইভার, অ্যামাজন ইত্যাদি) থেকে আপনি সরাসরি আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে পেমেন্ট নিতে পারবেন। এছাড়া পেওনিয়ার থেকে আপনার বিদেশে ক্লাইন্টকে সরাসরি ইনভয়েস পাঠাতে পারবেন এবং ক্লাইন্ট ক্রেডিট / ডেবিট কার্ড / ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবে। পেওনিয়ারের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো এটি খুবই সহজ একটি পেমেন্ট মেথড, পেওনিয়ারের অ্যাকাউন্ট অনুমোদন হবার সাথে সাথেই আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স গ্রহণ করতে পারবেন, আপনার যদি টিম মেম্বার থাকে তার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে চাইলে পরিশোধ করতে পারবেন, এছাড়া মাস্টার কার্ড যেখানেই গ্রহণ করা হবে, সেখানেই আপনি আপনার পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। পেয়নিয়ারে গ্রহণ করা অর্থ আপনি বাংলাদেশে আপনার স্থানীয় ব্যাংকে ট্রান্সফার করতে পারবেন এবং ব্যাংক থেকে এর উপর রেমিটেন্স সার্টিফিকেটও নিতে পারবেন।

দৈনিক ইনকিলাব: পেওনিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
রিফাত আহমেদ:  পেওনিয়ার বিশ্বমাপের প্রযুক্তির মাধ্যমে সব সময় রিস্ক মনিটর করে ও তার ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে থাকে। ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখার জন্য অনলাইন পেমেন্ট রেগুলেসন রয়েছে। তাই ব্যক্তিগত পর্যায় আপনার একাউন্টের তথ্য, কার্ড নাম্বার, জন্ম তারিখ, সিকিউরিটি প্রশ্ন এবং উত্তর কারো সাথে শেয়ার করবেন না। এছাড়া নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যেতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে সহজে অন্যরা ভেবে পাবে না, এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড সেইভ না রেখে, মনে রাখা ভালো।

দৈনিক ইনকিলাব: পেওনিয়ারের কি নতুন কোন আপডেট ফিচার আসছে?
রিফাত আহমেদ: পেয়নিয়ার কয়েক মাস আগে নতুন ১৮০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার কথা অ্যানাউন্স করে। কোম্পানির সিইও স্কোট গ্যালিট জানান, উনি চান এই নতুন ফান্ডিংয়ের একটি বড় অংশ কোম্পানির গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে। আর ভালো মার্কেটগুলোতে পেওনিয়ারের পরিধি আরে বাড়ানো হবে। এছাড়া কিছু দিন আগে পেওনিয়ার চাইনিজ পেমেন্ট সার্ভিস শুরু করে, যার মাধ্যমে যে কোনো দেশ থেকে চায়নার মার্কেট প্লেসের ব্যবসার সাথে সহজে সংযুক্ত হওয়া যাবে। এছাড়া ২০১৬ সালের  শেষের দিকে চালু হওয়া বিলিং সার্ভিসটি ২০১৭ সালে আরো আপগ্রেড করা হবে। পেওনিয়ার কিছু দিন আগে ফিলিপাইনে নতুন অফিস উদ্বোধন করে, জাপান এবং সাউথ কোরিয়াতে টিম প্রসারিত করেছে। আমি আশা করি ২০১৭ সালে আরো বেশ কিছু দেশে লোকাল অফিস খুলে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

দৈনিক ইনকিলাব: বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জন করা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনয়নে পেওনিয়ারের ভূমিকা কতটুকু?
রিফাত আহমেদ: আমার কাছে পেওনিয়ারকে বাংলাদেশের সকল ফ্রিল্যান্সারদের ও অনলাইন প্রফেশনালদের একটি পারিবারিক অংশ বলে মনে হয়। পেওনিয়ার ব্যবহার করে না এমন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বাংলাদেশে খুবই কম। পেওনিয়ার বাংলাদেশে চালু হবার আগে ফ্রিল্যান্সারদের টাকা গ্রহণ করতে অনেক সময় লাগতো, এছাড়া চেকে আনলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকতো। অথচ এখন বিভিন্ন বড় বড় মার্কেট প্লেস (যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার, পিপল পার আওয়ার,  ৯৯ ডিজাইন, এনভাটো ইত্যাদি) থেকে সহজে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে অর্থ গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ক্লাইন্টদের কাছে সরাসরি ইনভয়েস পাঠিয়ে  ডেবিট / ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টে নিতে পারছে। ইউ.এস.ডি, জি.বি.পি, ইউরো, জাপানি ইয়েন ইত্যাদি কারেন্সিতে ব্যাংকে ট্রান্সফার নিতে পারছে। গ্রহণ করা অর্থ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় ব্যাংকে আনতে পারছে। পেওনিয়ারের প্রিপেইড মাস্টার কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারছে, এ.টি.এম বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সারদের লেনদেনকে পেওনিয়ার অনেক সহজ করেছে। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জন করা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনায়নে পেওনিয়ার বিরাট ভূমিকা রাখছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন