নিয়মকানুন এমনকি উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির নামে চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, তথা ভর্তিবাণিজ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও সেই নীতিমালা মানছে না অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে বাড়ানো হয়েছে মাসিক বেতন। কোথাও বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এদিকে বলা হচ্ছে কোচিং নিষিদ্ধ হলেও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাববকদের ঘাড়ে বাধ্যতামূলক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কোচিংয়ের বাড়তি টাকা। ইংলিশ মিডিয়াম চলে গেছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বিদ্যমান বাস্তবতায় শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, শিক্ষা বাণিজ্যের পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন, শিক্ষার এই বাণিজ্যকরণের কারণেই সমাজের একটি বিরাট অংশের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মাশিউ’র চেয়ারম্যান একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, আমরা বিষয়গুলো মনিটরিং করছি। তার মতে, স্কুলগুলোর বাড়তি ফি আদায়ের প্রবণতা এখন নেই বললেই চলে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্কটকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই ভর্তিবাণিজ্যের ব্যাপারটি ওপেন-সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। দেখা যায়, শিক্ষার্থী ভর্তির সময় এলেই শুরু হয় নানা অনিয়ম। এসব দেখার কেউ না থাকাতেই প্রকৃত অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এখানে সরকারি আইনকানুন এবং বাস্তবতার মধ্যেও নানা ফাঁকফোকর রয়েছে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থ গ্রহণ করে না তাদের ব্যাপারে সরকারি নিয়মনীতির বাধ্যবাধকতাও শিথিল। এটাও অস্বীকারের উপায় নেই, সরকারি অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার নামে চলছে এক ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থ গ্রহণ করে না তাদের মধ্যেই একটি বড় অংশের প্রতি অনেক অভিভাবকের ঝোঁক। কারণ শিক্ষার মান। দেখা যায় এসব প্রতিষ্ঠানে কম টাকা-পয়সা নেয়া হয় দেখানো হলেও অপ্রকাশ্যে নেয়া হয় অনেক বেশি। একথাও বলা প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের অনেকের মধ্যে অবৈধ বা বাড়তি অর্থ গ্রহণের এক ধরনের মানসিকতা রয়েছে। এসব টাকা উন্নয়নের নামে নেয়া হলেও কার্যত এসব টাকার অধিকাংশই অপব্যয় করা হয়। দেখভাল করার কেউ না থাকায় এসব টাকায় কোনো কানো কতৃপক্ষের বাসাবাড়িও তৈরি হয়। অন্যদিকে যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার কথা বলে অর্থ নেয়া হয় দেখা যায় তাদের ভাগ্যে সামান্যই জুটে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে প্রতিবারই এসব নিয়ে লেখালেখি করার পরও অদ্যাবধি পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। কেন হয়নি তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
ভর্তিবাণিজ্যের বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। দেশের এবং খোদ রাজধানীর অনেক নামী-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এরপর অনেক ধরনের খবর বেরিয়েছে। প্রকৃত অর্থে অভিভাবকরা তাদের দেয়া বাড়তি অর্থ ফেরত পেয়েছেন কি না তা জানা যায়নি। উচ্চতর আদালত পরিচালনা কমিটিতে সংসদ সদস্যদের না থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। একটা বিষয় পরিষ্কার যে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট। এই প্রবণতার একটি বড় দিক হচ্ছে সরাসরি না নিয়ে বিভিন্ন উছিলায় বাড়তি ফি নেয়া। এর সাথে যে নানা মহল জড়িত রয়েছে তাও অমূলক নয়। এটা কোনো বিবেচনাতেই শিক্ষাবন্ধব নীতি নয়। এর ফলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। যেকারণেই হোক, যেভাবেই হোক এই প্রবণতাকে দুর্নীতি না বলে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। মানসম্মত শিক্ষা এবং একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সকলে অনৈতিক ও অবৈধ অর্থ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন -এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন