শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ট্যানারি বর্জ্যে নদীদূষণ

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ট্যানারির বর্জ্যে দেশের বিভিন্ন  অঞ্চলের  ১৪টি নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রাজধানী শহরকে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, সাভারের ধলেশ্বরী, বংশী, গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা, খুলনার রূপসা, কপোতাক্ষ, যশোরের ভৈরব, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদী। ট্যানারি বর্জ্য অন্য কিছু নদী ও খালে পড়ায় ওইগুলোর পানিও কমবেশি দূষিত হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মেঘনা নদী, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদও রয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চামড়ার বর্জ্যে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পানি। এই পানি জোয়ার-ভাটা ও বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গিয়ে পড়ছে তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। ফলে এসব নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। এছাড়া টঙ্গীতে অবস্থিত চামড়ার আড়ত থেকে বর্জ্য মিশছে তুরাগ নদীতে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের চামড়ার আড়তের বর্জ্য মিশছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। রাজধানীর হাজারিবাগের ২৭০টি ট্যানারির বর্জ্য নদীতে মিশে পানি দূষিত করছে।
ট্যানারি বা অন্য বর্জ্যে নদ-নদীর পানি দূষণের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। নদ-নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণেই মূলত এ অবস্থা। সেই সাথে নদীব্যবস্থাপনায় কার্যকর কোন উদ্যোগ না থাকার ফলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল থেকে বর্জ্য অপসারণে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সে সবের মধ্যে নানা ধরনের ফাঁক-ফোকর থাকার কারণেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। যখন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন যদি সংশ্লিষ্টরা মনোযোগী হতে পারতেন বা হতেন তাহলে হয়ত সমস্যা এতটা প্রকট হতো না। এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাহলো শিল্পবর্জ্যরে কারণে নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। নদ-নদীর পানি দূষিত হলে তার বিরূপ প্রভাব জনজীবনসহ সর্বত্র পড়তে বাধ্য। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চামড়া বর্জ্য মানুষকে নানাভাবে আক্রান্ত করে। এর প্রভাবে প্রাণঘাতী ক্যান্সারের আশঙ্কাও রয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের জেনারেল সেক্রেটারি প্রকৌশলী আবদুস সোবহান একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, কেবল হাজারিবাগের ট্যানারি বর্জ্যরে কারণে ঢাকার আশপাশের নদীর পানির ক্ষতি হচ্ছে ৪০ কোটি টাকার বেশি। গত ৩০ বছরে ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এতো কেবল পানির হিসাব। এছাড়া মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়েছে তাতো সীমাহীন। তার মতে, কেবল হাজারিবাগে নয় যেসব জায়গায় ট্যানারি আছে সেসব জায়গায়ও এসব বর্জ্য একইভাবে পানি, পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি করছে। ওইসব এলাকার নদীর পানির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের কোথায় কোন এলাকায় কখন পরিবেশ দূষণ বা পরিবেশের সাথে সাংঘর্ষিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেদিকে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যেই নাব্যতার অভাবে দেশের কোন কোন অঞ্চলে খাবার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এর সাথে বর্জ্য মিশলে পরিস্থিতি আরো গুরুতর হতে বাধ্য। আগে বিষয়টি কেবল রাজধানী ঢাকা বা তার আশপাশ এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে, এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত।
পরিবেশ সংরক্ষণে পানির কোন বিকল্প নেই। আমাদের মতো নদীমাতৃক দেশে যদি পানি দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে যায় তার ব্যাপক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সর্বত্র পড়তে বাধ্য। সে বিবেচনায় নদ-নদী বাঁচাতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। নাব্যতা থাকলে পরিস্থতি হয়ত ভিন্ন্রূপ হতে পারত। নদীর পানি হয়ত সবকিছু টেনে নিয়ে যেত। এখন শিল্পবর্জ্য যাতে কোন অবস্থাতেই নদ-নদীর পানিতে মিশতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন