রেলের কথিত লোকসান কমাতে ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে। এর অেেগ ২০১২ সালে আরো একদফা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ২০১২ সালে যেখানে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৩৫ টাকা তা ১০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫ টাকা। এদিকে গত ৪ বছরে দু’দু’বার ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও রেলের সেবারমান একটুও বাড়েনি। সেবার মান বৃদ্ধি দূরে থাক, ট্রেনের আগমন ও নিগর্মনের ও সময়ের কোন ঠিক নেই। সপ্তাহে ৫ দিনই ট্রেনের সিডিউল ভেঙ্গে পড়ছে। ফলে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। প্লাটফর্মে নেই বিশ্রামাগার, নেই টয়লেট। মানসম্মত কোন খাবারের দোকানও নেই। এর বাইরে রয়েছে হকারদের উপদ্রব। ট্রেন চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বগি দিয়ে। যাত্রীরা ছারপোকার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে কাগজে-কলমে যে হিসাব দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সাথে তা অনেকটাই অসঙ্গতিপূর্ণ। টিকেট প্রতি সর্বোচ্চ বৃদ্ধির কথা আড়াই থেকে সাড়ে ৩ টাকা। অথচ নেয়া হচ্ছে ৮ টাকারও বেশি। খবরে আরো বলা হয়েছে, যাত্রীদের দেয়া হয়েছে ২০ টাকা দামের বলাকার টিকিট। তাতে সিল মেরে লিখে দেয়া হয়েছে আন্তঃনগর আসনবিহীন বিশেষ টিকিট। বর্ধিত ভাড়ার সাথে লিখিত মূল্যের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়দেবপুর স্টেশন মাস্টার জাানিয়েছেন, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে ২০১২ সালের রেলপথে যাত্রী ভাড়া একলাফে ৫ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির মাত্র তিন বছরের মাথায় আবারো ভাড়া বাড়ানো হলো। এই বৃদ্ধিকে কিভাবে যাত্রীরা দেখছেন সে ব্যাপারে যাত্রীদের মতামত জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটি। জরিপে দেখা যায়, যাত্রীসেবার মানবৃদ্ধির অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে, যাত্রী সাধারণের জন্য কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে ভাড়াবৃদ্ধির বিষয়টি অযৌক্তিক মনে করছেন ৮৫ শতাংশ যাত্রী। অন্যদিকে বর্তমানে রেলের যাত্রীসেবার মান, রেল স্টেশনের সার্বিক পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সন্তুষ্ট নন ৭২ শতাংশ যাত্রী। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রেলের ৭০ শতাংশ যাত্রী নিয়মিত কালোবাজারীর কাছ থেকে টিকিট কিনতে বাধ্য হন। ৩ শতাংশ যাত্রী ঊর্ধ্বতন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেল পুলিশ, আমলা, এমপি-মন্ত্রীর তদবিরে টিকিট পেয়ে থাকেন। রেলের বর্তমান যে পদ্ধতিতে টিকিট ইস্যু হয় তা অনেক জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া বলে মনে করেন ৮৮ শতাংশযাত্রী। এছাড়া যাত্রী সেবা প্রদানের সাথে জড়িত বুকিং সহকারী, অনুন্ধান কর্মকর্তা, স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার ট্রেনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণে সন্তুষ্ট নন ৬৫ শতাংশযাত্রী। জরিপকালে ট্রেনে ছারপোকা তেলেপোকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, টিকিটবিহীন যাত্রী তোলা, ভাঙ্গা আসন, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সঙ্গতভাবেই একথা বলা যায়, আগেরবারের অঙ্গীকার পূর্ণ না করে পুনরায় ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি একবারেই অযৌক্তিক। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি হয়ত অন্যায্য নয় তবে অবশ্যই যাত্রী সুবিধা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধিকে সঠিক বলে মনে করার কোন যুক্তি নেই। বর্তমানে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যে বিতর্ক, তা হয়ত সৃষ্টি হতো না যদি যাত্রী সেবা বাড়ানো হতো।
এ কথা বহুবার বলা হয়েছে যে, যাতায়াত নিরাপদ ও সহজ করতে রেলের প্রতি নজর দেয়ার কোন বিকল্প নেই। শুধু নিরাপদ যাতায়াতের জন্যই নয়, কৃষি জমি সংরক্ষণের বিবেচনাতে রেলকে আধুনিক যাতায়াতের অধিকতর গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হিসেবে মনে করা হয়। দেশে এ পর্যন্ত সড়কের যে মাত্রায় বিস্তৃতি ঘটেছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এক সময় কৃষিজমির সংকট দেখা দিতে বাধ্য। এছাড়া ভারতসহ এঅঞ্চলের দেশসমূহ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রেলকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সে বিবেচনায় আমাদের রেল কার্যত অবহেলিত। দেশে রেল লাইন যেমনি রয়েছে, তেমনি রেলের জমিও রয়েছে। রেলের অনেক জমি অপদখল হয়ে আছে। এ কথাও নতুন কিছু নয় যে, রেল এক ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা মনে করি, দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় রেলকে মানোন্নত করে যাত্রীদের আকৃষ্ট করার সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে রেলকে কায়েমী স্বার্থবাদীদের খপ্পর থেকে মুক্ত করে জনোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন