শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বেক্সিমকো ফার্মার নতুন অধ্যায়

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা মালয়েশিয়ার বায়োকেয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে অংশীদারভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে। দেশের বাইরে এটিই বেক্সিমকো ফার্মার প্রথম ম্যানুফ্যাকচারিং কোলাবরেশন বা সহযোগিতামূলক উদ্যোগ। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জয়েন্ট ভেঞ্চারের আওতায় বেক্সিমকো ফার্মা মালয়েশিয়া সেরি ইস্কান্দর ফার্মাসিউটিকাল পার্কে অত্যাধুনিক কারখানা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব কারিগরি সহায়তা প্রদান করবেÑ যার বিনিময়ে যৌথ উদ্যোগের ৩০ শতাংশ মালিকানা লাভ করবে বেক্সিমকো ফার্মা। কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার সব ব্যয় বহন করবে বায়োকেয়ার। এই উদ্যোগের প্রথম পর্যায়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মিটার ডোজ ইনহেলার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছেÑ যা ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস সনদ লাভ করেছে। বলা হয়েছে, জয়েন্ট ভেঞ্চার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্লান্ট থেকে উৎপাদিত ওষুধ ২০১৭ সালের মধ্যেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ওষুধ উৎপানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মালয়েশিয়ার বায়োকেয়ারের সাথে যৌথ কার্যক্রম তার সাথে আরো একধাপ যুক্ত হলো। গত বছরের শুরুর দিকে দেশের শিল্পবিনিয়োগের বৃহত্তম কনগ্লোমারেট বেক্সিমকো গ্রুপ দেশের প্রথম কোম্পানী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম হাব কুয়েতে ওষুধ রফতানি শুরুর মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের শুভ সূচনা করেছিল। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের হাতে বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত একটি প্যাকেট তুলে দিয়ে ওষুধ রফতানির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। বেক্সিমকো গ্রুপ তার কর্পোরেট মটো হিসেবে টেকিং বাংলাদেশ টু দ্য ওয়ার্ল্ড-এর যে মটো তুলে ধরছে এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সম্ভাবনাকেই মূলত কাজে লাগাতে চাচ্ছে। উদ্যোগ কাজে লাগাতে প্রতিষ্ঠানটির অধিকর্তারা যে বসে নেই তারই আরো একটি প্রমাণ মালয়েশিয়ায় নতুন যৌথ উৎপাদন। এই প্রসঙ্গই তুলে ধরেছেন, বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমূল হাসান পাপন। তিনি বলেছেন, ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশের বাইরে এটাই আমাদের প্রথম কোলাবরেশন। আমার বিশ্বাস, বায়োকেয়ার এবং বেক্সিমকোর এই যৌথ প্রয়াস ওষুধের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা আন্তর্জাতিক বাজারে তার অবস্থান আরো দৃঢ় করবে।
বেক্সিমকোর এই অভিযাত্রা অন্যদেরও উৎসাহিত করবে নিঃসন্দেহে। আশার আলো ছড়াবে। যে পথ সে নির্মাণ করছে তার সূত্র ধরে আরো অনেকেই এগিয়ে আসতে উৎসাহী হবে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শিল্প বিকাশের অঙ্গীকার নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক উদ্যোগ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রফতানিমুখী শিল্প পরিবার বা গ্রুপ অব কোম্পানীতে পরিণত হয়েছে। এজন্য যে রূপরেখা নির্মাণ করেছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের উদ্যোক্তারা তা এখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। এটি দেশের রফতানি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আলোক দিশারী হয়ে উঠছে। একটি সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের সন্তান সোহেল এফ রহমান, সালমান এফ রহমান ভ্রাতৃদ্বয় তিলে তিলে এই প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছেন। তারা এখন যথাক্রমে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাড়ে চার দশক ধরে তাদের হাত ধরে তাদের পরিচালনায় নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গৌরবময় ভূমিকায় রয়েছে। জেনেরিক ওষুধের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিতর্ক কাটিয়ে যে সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, মালয়েশিয়ার সাথে বেক্সিমকোর নতুন উৎপাদন প্রক্রিয়া তাতে অরো নতুন মাত্রাদান করছে। আমরা এই যৌথ অভিযাত্রাকে অভিনন্দন জানাই। বেক্সিমকো গ্রুপের এই অর্জন কেবলমাত্র এটি কোম্পানী বা গ্রুপের অর্জন হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। এটিকে বিবেচনায় নিতে হবে জাতীয় প্রেক্ষাপটে। যেখানে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে বিনিয়োগ করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের একটি কোম্পানীর মালয়েশিয়াতে যৌথ উৎপাদন শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এটি দেশের অর্থনীতি-কর্মসংস্থানের বিবেচনায় অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হবে। যে সম্ভাবনার উন্মোচন হয়েছে তাকে কাজে লাগাতে নিপুণ ও আন্তরিকভাবে সংশ্লিষ্টদের তৎপর থাকতে হবে। বেক্সিমকোর এ ধরনের উদ্যোগের মতো প্রতিটি উদ্যোগকে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতাও দিতে হবে। এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, আমরা এই কামনাই করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammad Mezbahul Islam Nannoo ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৪ পিএম says : 0
I needs bexmico pharma share department address.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন