শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জিম্মি ভুক্তভোগীরা

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেখ জামাল : সাব-রেজিস্ট্রার, নকল নবীশ, উম্মেদার, পিয়ন ও দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। একটি চক্র মিলেমিশে ঢাকার আটটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি-অনিয়ম ও হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ঘুষ গ্রহণ করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শত শত একর জমি, প্লট-ফ্লাট রেজিস্ট্রি করে দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। তাদের এসব কর্মকাÐ ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতা-কর্মী, পুলিশসহ নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকদের পাশে রেখেছেন সাব রেজিস্ট্রাররা। এদিকে বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ মানছেন না সাব-রেজিস্ট্রাররাও। এই বিষয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও কোন পদক্ষেপ নেননি তারা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রæয়ারি গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১৪৩৯ নম্বর কবলা দলিলটি প্রায় ৮ কোটি টাকা মুল্য রেজিস্ট্রি হয়। দলিলটির দাতা ইফতেখার আহম্মদ খান, পিতা-মৃত মমতাজ হক খান। গ্রহীতা-মীর মজিবুর রহমান খান, পিতা-মৃত নুরুল ইসলাম ভুইয়া। গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার মো. কামাল হোসেন খান ও একই অফিসের নকল নবীশ গিয়াসউদ্দিন এবং সোহাগ যোগসাজসে কাগজপত্র জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করে। মো কামাল হোসেন খান ও গিয়াসউদ্দিন এর বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে । এছাড়াও এই অফিসে গুলশান এলাকার এক হাজার শতাংশ জমি রেজিস্ট্রিতে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার মো. কামাল হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি গতকাল বিকালে ইনকিলাবকে বলেন, এটা রাজউকের জমি। এটা জাল হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। রাউকের অনুমতি সাপেক্ষে দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে গতকাল দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে দেখা গেছে, বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার মো.মিজানুর রহমান এজলাসে না বসে তার খাস কামড়ায় দলিল ও নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন। অনেক সময় তিনি জমি ক্রয় ও বিক্রয়কারীকে খাস কামড়ায় নিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে গোপনে কথা বলেন। এর আগে গত ১০ ফেব্রæয়ারি ২টা ৫ মিনিটের সময় দেখা গেছে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট গ্রæপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিনের সাথে খাস কামড়ায় দরজা বন্ধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে কথা বলেছিলেন। এসময় মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিনের ব্যক্তিগত ফোর্স দরজা পাহাড়া দিয়েছিলেন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে। একই দিন মাকসুদা নামের এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে মুল কপি না দেখে দলিল রেজিস্ট্রি করেন সাব রেজিস্ট্রার। দলিলটির অপরপক্ষে ছিলো আইডিএলসি। এই বিষয়ে বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রার মো.মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়াও ১২ টা ১০ মিনিটে তেজগাঁও অফিসেও সাব-রেজিস্ট্রার মো. আকবর আলীকেও খাস কামড়ায় দলিল ও কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ এর অধ্যায়-২৬ এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কঙ্খিত নহে, এই কার্যটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হইবে।
এরপরও সাব-রেজিষ্ট্রাররা নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী নিজেদের কাজ নকল নবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিষ্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না তারা। গতকাল সরেজমিনে গিয়েও নকল নবীশ ও উম্মেদারদের এসব কাজ করতে দেখা গেছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দুপুর ১২ টা ৫৫ মিনিটে দেখা গেছে, গুলশান সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের নকল নবিশ মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লা রেজিস্ট্রি দলিল চেক করছেন। এরপরই কথা হয়েছিল মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনি নৈতিকতা নিয়ে থাকবেন, না অন্য সাংবাদিকদের মতো নিবেন। একই ভাবে নকল নবীশ মো. আব্দুল্লাহ আল সাঈদ দলিল চেক করতে দেখা গেছে। তিনি খিলগাঁও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের নকল নবীশ সমিতির সভাপতি। একইভাবে চলছে ঢাকা সদর, তেজগাঁও, মোগাম্মদপুর, সুত্রাপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস। এছাড়াও রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনের প্রধান সহকারী সালাউদ্দিন, কম্পিউটার অপারেটর মতিউর রহমানও ক্ষমতার প্রভাব চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নকল নবীশদের দুইটি পক্ষ ঢাকা সদর, গুলশান, তেজগাঁও, মোগাম্মদপুর, সুত্রাপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও খিলগাঁও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস জিম্মি করে ফেলেছেন। মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লার পক্ষ প্রভাব বিস্তার করে আছেন। এই প্রভাব ভাঙ্গতে জয়নাল আবেদীন ও সুমন সরকার পক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা সদর, গুলশান, তেজগাঁও, মোগাম্মদপুর, সুত্রাপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও খিলগাঁও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা অভিযোগও করেছেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুল গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে টেবিল চেয়ার নিয়ে সারি সারি বসে আছেন দলিল লেখক হিসেবে পরিচয় বহনকারী কিছু মানুষ। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবুল হোসেন খান নামে এক ব্যক্তি। বছর দেড়েক আগে তিনি তার জমির দলিল হারিয়ে ফেলেন। দলিল হারানোর পর এখন পর্যন্ত তিনি কয়েক দফা বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত কোন সুরাহা করতে পারেননি। ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় এক একর দশ শতাংশ জমির মালিক নবী হোসেন। তথ্য হালনাগাদ করতে যেয়ে তাকে দুই বার এই অফিসে তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে জানান। এই বিষয়ে ঢাকা জেলা রেজিষ্ট্রার মো. আবদুল জলিলের মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন