শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

স্কুলের আগুন : দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুর্গমচর কুন্দিরপাড়ায় গণউন্নয়ন একাডেমি নামের একটি স্কুলের ভবন আগুনে পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লাগা এই আগুনে স্কুলের অফিসকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও লাইব্রেরিসহ ১০টি শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র, শিক্ষাসরঞ্জাম, এসএসসি-জেএসসি পাসের কয়েক হাজার সনদপত্র, এসএসসির প্রবেশপত্র সবকিছুই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এই অভাবনীয় অগ্নিকা-ের ঘটনা কীভাবে ঘটলো এখনো জানা যায়নি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতে কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে স্কুলটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা নাশকতা ছাড়া কিছুই নয়। তাদের কথায় জানা গেছে, কিছুদিন ধরে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী স্কুলের কাজকর্মে বাধা দিয়ে আসছিল। তারা কাছের আরেকটি চরে একটি নতুন স্কুল খোলার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন পায়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা স্কুল ভবনে আগুন দিয়ে থাকতে পারে। অপর একটি আশংকার কথাও তারা বলেছে। জানিয়েছে, সম্প্রতি স্কুলের পাশে যাত্রার আসর ও জুয়ার আড্ডা বসায় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী। এলাকায় এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। প্রশাসন প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে যাত্রার আসর তুলে দেয়। তারাও আক্রোশ বশে একাজ করে থাকতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মতে, নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা কিংবা যাত্রার আসর এই অগ্নিকা-ের কারণ নাও হতে পারে। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কারণ যাই হোক, স্কুলটি যে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। এখন স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব, কারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যত ক্ষোভ ও আক্রোশ থাকুক না কেন, কেউ বা কোনো গোষ্ঠী স্কুল পুড়িয়ে দিতে পারে, এটা অকল্পনীয়। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কখনো কখনো বিরোধ বিসংবাদ দেখা যায়। কিন্তু কেউ বা কোনো পক্ষ স্কুলে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেয়, এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিক দিয়ে এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। শংকার ব্যাপার হলো, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। অতএব, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক, তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আলোচ্য স্কুলটি ওই এলাকায় একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। একটি বেসরকারি সংস্থা স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে আছে। শুধু কুন্দেরপাড়া নয় আশপাশের চরের শিক্ষার্থীরাও ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৬শ’। এ ৬শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি হবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অবধি নেই, ভস্মীভূত স্কুলভবনে এসে শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবকদের কেউ চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনি। স্কুলটি ছিল ওই চর এলাকার শিক্ষার একমাত্র আলোকস্তম্ভ। এখানে যারা আঘাত করেছে তারা মনুষ্যপদ বাচ্য নয়। তারা শিক্ষার ওপর, স্বপ্নের ওপর নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের ওপর হামলা করেছে। কোনো বিবেচনাতেই তারা রেহাই পেতে পারে না।
স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির তদন্ত দ্রুতায়িত করতে হবে যাতে দুর্বৃত্তরা সরে যেতে বা পার পেতে না পারে। একই সঙ্গে স্কুল পুনর্নির্মাণে জরুরি উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, এলাকার জনগণ এবং স্কুল পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থাটিকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সরকারকেও। স্বল্পতম সময়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। আসবাবপত্র, শিক্ষার সরঞ্জাম ইত্যাদিও ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্বৃত্তদের নাশকতার এটাই হবে উপযুক্ত জবাব। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে, পুড়িয়ে দিলেই কোনো কিছু ধ্বংস করে দেয়া যায় না। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো, এই চেতনাকে আরো শাণিত ও প্রসারিত করে দিতে হবে। একথা কারো অজানা নেই, চর এলাকার মানুষের অধিকাংশই হতদরিদ্র। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে যা বুঝায়, তার সব কিছু থেকেই তারা শোচনীয়ভাবে বঞ্চিত। তাদের আর্থিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, যাতায়াত সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদির দিকে সরকারকে আরো নজর দিতে হবে। উপযুক্ত পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে চরাঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন