শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

স্পেনের মুসলিম ইতিহাস থেকে

ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

॥ দুই ॥

টলেডোতে মুসলমানরা সঙ্গীত স্কুলও প্রতিষ্ঠা করে অন্যান্য শহরের মতো যেমন কর্ডোভা, সেভিল, ভ্যালেনসিয়া ও গ্রানাডা।
স্পেনে ইসলাম প্রবেশ করলে সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের ভিতেরও এর প্রভাব পড়ল। টলেডো শহরের বিশপ এলিপ্যানডাস (খ্রিস্টাব্দ ৮১০) বিশ্বাস করলেন যে যীশু খোদার পুত্র জৈবিকভাবে নন, দত্তকের মতো পুত্র। তিনি ইসলামের সংস্পর্শে এসেই এই ধারণা দিয়েছিলেন (প্রফেসর টমাস আরনল্ড, ‘দি স্প্রেড অব ইসলাম ইন দি ওয়ার্লড,’ পৃষ্ঠা ১৩৯)। এই যে এই নতুন তত্ত্ব তা স্পেনের বহু জায়গাতে ছড়িয়ে পড়েছিল এমনকি দক্ষিণ ফ্রান্সে পর্যন্ত প্রসারিতও হয়। ফ্রান্সের খ্রিস্টান রাজা শার্লিমেন এ ধারণার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে টলেডোতেই খ্রিস্টানরা একটি কাউন্সিল সভা করে মুসলিম প্রভাবে এ ধরনের ধারণা যেন খ্রিস্টানরা না করে তা নিশ্চিত করতে। উদারচেতা মুসলমান শাসকরা এ ধরনের ধর্মীয় সভার কোন বিরোধিতা করেননি।
মুসলিম স্থাপত্য কর্ডোভাতে প্রথম পরিস্ফুট হয়। তারপর তা টলেডো, সারাগোসা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইটের কাজে এটা বেশি স্পষ্ট। টলেডোর ইমারতে ‘ডামি’ খিলান লাগানো হয়। একে ‘ব্ল্যাংক আরকেডিং’ও বলা হয়। এছাড়া মুসলমানরা টলোডো থেকে উৎখাত হলেও বিজিত মুসলমানদের ‘মুদেজার’ স্থাপত্য টলেডোতে থাকে। এ সময়ের তৈরি গির্জাতে মুসলিম রীতির প্রভাব পড়ে। (“দি লিগেসি অব ইসলাম”, সম্পাদক আরনল্ড ও গুইলম, পৃষ্ঠা ১১-১৩)।
টলেডোতে মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের নাবিকদের ব্যবহারের উপযোগী এস্ট্রোলেব যন্ত্র তৈরি করতেন। এসব যন্ত্র ছাড়া সে যুগে সমুদ্র পরিবহন অসম্ভব ছিল। এ, এইচ, ক্রিস্টি লিখেছেন যে, একটা এস্ট্রোলেব তৈরি করেছিলেন টলোডোর ইব্রাহিম ইবনে সৈয়দ ১০৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে। (“দি লিগেসি অব ইসলাম”, পৃষ্ঠা ১১৫)।
বনু আল লূনের আমলে টলেডোর কাজী ছিলেন আবু আল কাসিম সৈয়দ ইবন-আহমদ আল-আন্দালুসী (১০২৯-৭০)। তিনি লেখেন একটি বিখ্যাত বই “তাবাকাত আল-উমাম” (জাতির শ্রেণী বিভাগ)। এটি বহু প্রখ্যাত পরবর্তী প-িতগণ ব্যবহার করেন তাদের লেখালেখিতে। সৈয়দ ছিলেন একাধারে ইতিহাসবিদ, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। টলেডোর আর একজন স্পেনীশ-আরব জোতির্বিদ ছিলেন আল-জারকালি (১০২৯-১০৮৭)।
জ্যোতির্বিদ্যায় যে টলেডো ‘টেবিল’ বলা হয় তার মূলে ছিলেন স্পেনীশ-মুসলমান ও ইহুদি জ্যোতির্বিদগণ। তন্মধ্যে ছিলেন আল-জারকালি ও আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন-ইয়াহিয়া (১০৮৭ খ্রিস্টাব্দ)।
এই সব ‘টেবিল’ ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন ক্রেমোনার গেয়ার্ড। ফ্রান্সের মারসেলের রেমন্ড (১১৪০ খ্রি.) যেসব লেখা লিখেছেন তার প্রায়টাই আল-জারকালির জ্যোতির্বিজ্ঞানের কানুন থেকে নেয়া। টলেমী ভূমধ্যসাগরের দৈর্ঘকে বেশি মাত্রায় ৬২ ডিগ্রিতে দেখান, আল-খারিজিমি তা কেটে করেন ৫২ ডিগ্রি, আর আল-জারকালি তা প্রায় শুধু ৪২ ডিগ্রিতে নামান। আল-জারকালি তার সময়ের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। যার স্বীকৃতি টলেডোর কাজী সৈয়দ আন্দালুসী পর্যন্ত দেন। তিনি এস্ট্রোলেবের (জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহৃত এক ধরনের কম্পাস যন্ত্র) উন্নত সংস্করণ বের করেন। নাম “সাফিহা”।
আল-জারকালি (আরজ্যাকেল-১০২৯-১০৮৭) সম্পর্কে কারা ডি ভক্স লেখেন, তিনি একজন প্রখ্যাত যন্ত্র প্রস্তুতকারক ছিলেন। তিনি তার উদভাবিত ‘এস্ট্রোলেব’ (নাম ‘সফিহা’) নিয়ে একটি গবেষণা সন্দর্ভ লেখেন যার উপর ভিত্তি করে একটি পুরো সাহিত্য গড়ে উঠে। দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারের এক ইহুদি এটি লাটিনে অনুবাদ করেন। এম আকবর আলী বলেন, আল-জারকালির এস্ট্রোলেবের উপর বর্ণনা হিব্রু ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষাতেও অনুবাদ হয়। (“আসপেকট অব সাইন্স ইন রিলিজিয়নস”, এম আকবর আলী, পৃষ্ঠা ৮৬৭)। ক্যাসটাইলের রাজা অলফনসো দুটো অনুবাদ করেন এর রোমান্স (স্পেনীশ) ভাষাতে। রেজিও মনটেনিয়াস পঞ্চদশ শতাব্দীতে “প্রখ্যাত যন্ত্র সফিহা” সংক্রান্ত গাইডবুক প্রকাশ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন