শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

হিন্দির আগ্রাসন রুখতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের সমাপ্তির সাথে সাথে মাসব্যাপী বাংলা একাডেমির বইমেলাও যথারীতি শেষ হয়ে যাবে। এ মাসে বাংলা ভাষার মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যত কথা বলা হয়, বছরের বাকি সময় তা’ খুব কমই দেখা যায়। সারা বছরে হিন্দি-ইংরেজির অপসংস্কৃতির আগ্রাসন চললেও শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আক্ষেপ করে তেমন কোন লাভ হচ্ছে না। বিশেষত, ভারতীয় টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ক্রমেই বেড়ে চলেছে হিন্দি বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন। দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে পরিবারের প্রায় সব সদস্যই এখন ভারতীয় হিন্দি-বাংলা সিরিয়াল এবং কার্টুনের দ্বারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কিশোর-তরুণদের চলনে-বলনে, আচরণে। এমনকি আমাদের নিজস্ব সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিও’র কিছু কিছু উপস্থাপনা ও ভাষাভঙ্গিতেও হিন্দি-ইংরেজি সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নানা ইস্যুতে পারস্পরিক হানাহানি ও ব্লেইম গেমে ব্যস্ত থাকলেও জাতির উপর ক্রমে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসতে শুরু করা অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি দেশের বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজও নির্বিকার রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে লিঙ্গুয়া-ফ্রাঙ্কা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। আমাদের তৎকালীন যুব সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা’ ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। ভাষার জন্য বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙ্গালীর রক্তদানের ইতিহাস সারাবিশ্বে এক অনন্য ও ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে, এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষ নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষায় নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয়। যে দেশ বিশ্বকে এই তাৎপর্যপূর্ণ দিবস উপহার দিল, সেই দেশের যুব সমাজ এখন গৌরব ভুলে হিন্দি অপসংস্কৃতির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হতে চলেছে। একদিকে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে ভিনদেশী আগ্রাসন, অন্যদিকে যুবসমাজের মাদকাসক্তি, অপরাধ প্রবণতা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হওয়ার মধ্যদিয়ে আমরা যেন একটি অনির্শ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করেছি। আমাদের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতারা জাতিকে ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালেও চলমান বাস্তবতার সাথে তার যেন কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন ও সুদক্ষ করে গড়ে তোলার বদলে বিজাতীয় ভাষা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হতে দিয়ে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আমাদের সরকার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজ যদি দ্রুত এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে জাতি অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যে দেশের তরুণরা ৬৪ বছর আগে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ভাষার মর্যাদা রাখতে সক্ষম হয়েছিল, তাদের আত্মাত্যাগের পথ ধরেই এ দেশের যুব সমাজ পাকিস্তানী দুঃশাসন-শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। সেই গৌরবময় প্রতিবাদী ও যোদ্ধা জাতির নতুন প্রজন্ম হিন্দি এবং ভারতীয় অপসংস্কৃতি, মাদক এবং অপরাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না। সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি ঊর্ধ্বে তুলেই যে কোন জাতি আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। তথাকথিত উন্নয়ন এবং ক্ষমতার রাজনীতির গতানুগতিক হানাহানি ও অনৈতিক প্রতিযোগিতা পরিহার করে আমাদের সকল রাজনৈতিক শক্তি এবং নাগরিক সমাজ ভাষা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলেই কেবল বাংলা ভাষা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি মুক্তি এবং বিকশিত হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
অভ্রনীল ব্যানার্জী ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৩ পিএম says : 0
আমার মনে হয়,বাংলা ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সরকারী, প্রধান ও দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে কার্যকর ও গ্রহণ করা উচিত । পশ্চিমবঙ্গে যত সরকারি-বেসরকারি স্কুল,কলেজ,অফিস আছে সেখানে হিন্দি ভাষাকে বাংলা ভাষাকে আনতে হবে, যাতে সেখানে বাংলার ব্যবহার বৃদ্ধি পায় ও হিন্দির ব্যবহার গোল্লায় যায়। পাশাপাশি যেসমস্ত অবাঙালিরা বাংলায় বসবাস করছেন কিন্তু বাংলা বলছেন না, তাদেরও বাংলা ভাষা শেখাতে হবে এবং যেখানেই যাও না কেন বাংলা বলতে হবে। এমন যদি নীতি আমরা গ্রহণ করি ও প্রত্যেক অবাঙ্গালিকে যদি বাংলা বলতে বাধ্য করি, তাহলে আমি মনে করি আমাদের পশ্চিমবাংলা হিন্দি মুক্ত প্রদেশ হবে । বাংলা জিন্দাবাদ/হিন্দি মুর্দাবাদ ।। জয় বাংলা ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন