শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব ও খুনোখুনি

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঘরের আগুনে পুড়ছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। স্বার্থ আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে বের হতে পারছে না দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়াও খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েছে তারা। আধিপত্য বিস্তারের লড়াই অন্তর্দলীয় কোন্দলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই। আন্তঃকোন্দলের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষও। এমনকি গুলি করে সাংবাদিক মেরে ফেলতেও দ্বিধা করছে না তাদের কেউ কেউ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে  দলটি। দলের শুভাকাক্সক্ষীরা  একে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হিসেবে দেখছেন। দলীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থরক্ষায় দলকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়তই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কিছুতেই  থামছে না মাঠ পর্যায়ের মরামারি, খুনোখুনি, সংঘাত-সহিংসতা ও সংঘর্ষ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বেসরকারি সংস্থার হিসাবসহ বিভিন্ন সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের শুধু নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হানাহানিতে গত ৮ বছরে তিন শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে।
বিদ্যমান এই বাস্তবতা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে ছোটখাটো কোন্দল থাকা অস্বাভাবিক নয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় থাকলে দল বড় হতে থাকে। ক্ষমতার মোহে দল যত বড় হবে হানাহানি তত বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতাসীন দলের অংশ হলে আইনি প্রক্রিয়া ঠিকভাবে চলে না। দল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑ এমন নজির খুব একটা পাওয়া যাবে না। তিনি মনে করেন, সরকারি দল হলে সাত খুন মাফ, এটা তো কথার কথা নয়, বাস্তবেও। এদিকে পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজনৈতিক ও অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত চারটি কারণে এ ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনা বাড়ছে। তাদের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব, প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি না পাওয়ার জের,  নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয়সহ মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্দ্ব এবং সর্বোপরি এলাকায় কে কার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবানÑ এমন প্রতিযোগিতা থেকেই রক্তারক্তি ও নির্মম  হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে অন্য কোনো দলনেই। সংঘাত-সংঘর্ষ যা কিছু ঘটছে তা নিজেদের মধ্যেই। বিশ্লেষক মহল মনে করছেন, এর রাস টেনে ধরতে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ, যারা অপরাধ করছে তাদের বদ্ধমূল ধারণা এসব অপরাধ করলেও কিছু হবে না, পার পেয়ে যাবেন। দলীয়ভাবে সাময়িক ব্যবস্থা  নেয়া হলেও এলাকার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখিয়ে ফের দলে আসা যাবে।
ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রসহ সাধারণ মানুষের হেনস্থা হবার বিষয়টি নতুন নয়। অনেক দিন থেকেই ঘটছে। বাস্তবে  এত কিছু ঘটার পর এবং ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেয়ার পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগের একজন মেয়র  কতটা আস্কারা পেলে গুলি করে সাংবাদিক মেরে ফেলতে পারেন সেটা বোধকরি  ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। কার্যত সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো পরিবেশ না থাকায় এবং বিরোধীদের দমন-পীড়ন নীতি অনুসরণের নেতিবাচক ফলই এখন ফলতে শুরু করেছে। রাজনীতিতে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স না থাকার ফলেই এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে চলেছে। এখন পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে এটা বলা অত্যন্ত জরুরি যে, ক্ষমতাসীন দলে শৃঙ্খলা বিধান করা না গেলে হয়তো অবস্থা আরো গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। সে জন্যই সকল অপকীর্তির বিচারসহ দলীয় শৃঙ্খলা বিধান জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন