রেজাউল করিম রাজু : প্রয়োজনীয় সকল শর্ত পুরণ করে এখনো গ্যাস সংযোগ না পেয়ে হা-পিত্যেস করছেন নগরীর বারো হাজারের বেশী বাসিন্দা। শুধু বাসাবাড়ি নয় শিল্প মালিকরা পড়েছেন বেকায়দায়। রাজশাহীতে গ্যাস অসার পর গ্যাসকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শুধু গ্যাস সংযোগ নেবার জন্য খরচ করেছে মোটা অংক। দেড় বছর ধরে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি অফিসে ধর্ন দিচ্ছেন। কিন্তু কাঙ্খিত সংযোগ মিলছেন না। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সোজা সাপটা জবাব আমরা দিতে চাই। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা নাই। ফলে আমাদের করার কিছু নেই। তারা এখন অলস সময় পার করছেন। মাঝে মধ্যে আবেদনকারীদের রোষানলের শিকার হয়ে এক বির্তকে জড়াচ্ছেন। রাগে দুঃখে তাদের উপর কখনো কখনো চড়াও হবার ঘটনা ঘটছে।
রাজশাহীতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের দাবি ছিল রাজশাহীর মানুষের দীর্ঘদিনের। এনিয়ে অনেক আন্দোলন সংগ্রামসহ নানা ধরনের কর্মসুচি পালিত হয়েছে। রাজনীতিও কম হয়নি। অবশেষে দু’হাজার আট সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজশাহী নগরীতে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু হয়। সংযোগের জন্য জমা পড়ে সাড়ে একুশ হাজারের বেশি আবেদনপত্র। গ্যাস সংযোগের জন্য শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। কাঙ্খিত গ্যাস আসায় মানুষ খুশি হয়। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে নয় হাজার আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। বাকীগুলো ছিল প্রক্রিয়াধীন। অনেকের সংযোগের লাইন ছিল একেবারে কাছাকাছি। হাজার হাজার টাকা খরচ করে বাড়িতে গ্যাসের পাইপের কাজ পর্যন্ত করানো হয়। বাকী শুধু মূললাইন থেকে রাইজার লাগানো। অল্প ক’দিনের গ্যাস সংযোগ মিলবে এমন আনন্দ ছিল গৃহিণীদের চোখে মুখে। কিন্তু হঠাৎ এক নির্দেশনায় গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ করায় হতাশা আর ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মানুষ। আবেদনকারীদের বক্তব্য হলো যদি বন্ধ করতে হয় তবে যে পর্যন্ত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সে পর্যন্ত কমপক্ষে সংযোগ দিলেও কিছুটা সান্ত¦না ছিল। ভাল নেই গ্যাস সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এরাই সব আবেদন প্রসেস করেছিল। এখন গ্যাসের সংযোগ না পাওয়া মানুষ এদের অফিসে ধর্না দিচ্ছে। কেউ কেউ ছুটছে নওদাপাড়া এলাকার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি অফিসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন বড্ড বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। সরকার নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করায় আমাদের কি করার আছে। যারা ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়েছেন তাদের টাকা সরকারী সংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা রয়েছে। কেউ টাকা ফেরত নিতে চাইলের নিয়মানুযায়ী তা ফেরত পেতে পারেন।
রাজশাহীতে গ্যাস আসার পর মৃত প্রায় বিসিক শিল্প নগরীতে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল। অনেকে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পুরানো গুলো কেউ কেউ তাদের উৎপাদন ব্যাপস্থাপনা ঢেলে সাজান। শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। হঠাৎ করে ২০১৪ সালের সে মাস থেকে শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে সাতটি কারখানা উৎপাদনে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এখন পড়েছে বিপাকে। পনের কোটি টাকা ব্যায়ে ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা করে বিপাকে পড়ার কথা জানান একজন শিল্পদ্যোক্তা। কোন রকমে ডিজেল দিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন। তবে তার উৎপাদন ব্যায় বেড়েছে। যে উদ্যোম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন এখন তাতে ভাটা পড়েছে।
গ্যাস সংযোগ পাবে এমন নিশ্চয়তা পেয়ে নগরীর উপকন্ঠে ধুতরাবন এলাকায় একশো পয়ত্রিশ কোটি টাকা ব্যায়ে এসিআই গোদরোজ কোম্পানী মাছের ভাসমান খাবার তৈরীর কারখানা করে। মুল লাইন থেকে কারখানা পর্যন্ত গ্যাস লাইন নিয়ে যাবার জন্য নিজেরাই চার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেলেনি সংযোগ। ফলে তারা আর উৎপাদনে যেতে পারেনি। গ্যাস সংযোগ পেলে তারা যে কোন সময় উৎপাদনে যেতে পারে। এখানে হতে পারে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। চাহিদা মেটাতে পারে ফিস ফিডের। গ্যাস পাওয়া যাবে এমন ভরসায় ঢাকা চট্রগ্রাম হতে অনেক শিল্পপতি শিল্প প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা ব্যাক্ত করলেও এখন তারা বিমুখ। অথচ এখানে শিল্প কারখানা হলে রাজধানীর উপর যেমন চাপ কমত। তেমনি এখানকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতো। সংযোগ দেবার শুরুতে এমন স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল এখানকার মানুষকে। গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ক্ষোভ আর হতাশা। রাজশাহী শিল্প বণিক সমিতিসহ বেশ কিছু সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন পিছিয়েপড়া রাজশাহীতে আবাসিক ও শিল্প খাতে গ্যাস বন্ধ করা উচিত হয়নি। তারা আশা করেন এখানকার কথা বিবেচনা করে সরকার বিশেষ সিদ্ধান্তে এখানে গ্যাস সংযোগের আদেশ দিতে পারেন। গ্যাস সংযোগ দেবার পর অনেকের আশাছিল এখানে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন হবে তাও হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন