রাজধানীর খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে গতকাল সোমবার থেকে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ঢাকা ওয়াসা যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন ও ওয়াসার কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে ৬ ফেব্রুয়ারি নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এসময় তিনি কেবলমাত্র উচ্ছেদই নয়, সেটি যাতে ধরে রাখা যায় সে ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, অবশ্যই দখলদারদের উদাহরণযোগ্য জরিমানা হওয়া প্রয়োজন। যে খালটি দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে সেটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, নন্দীপাড়া থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কজুড়েই খালের পাশে দোকান তৈরি করা হয়েছে। খালের মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে এসব দোকান তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার বিপরীত পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বহুতল ভবন। এসব ভবনে যাতায়াতের জন্য ভবন মালিকেরা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছে কাঠ বা লোহার ব্রিজ।
রাজধানীর খাল উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ঢাকার মতো রাজধানী বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। এই নগরী যেমন চার পাশে নদীঘেরা, তেমনি এর ভেতর একসময় অনেক খাল-বিল-ঝিল ছিল। বলা যায়, নগরীটি পানির ওপর ভাসমান ছিল। এখন তার কিছুই নেই। খাল-বিল হারিয়ে গেছে। এসব দখল ও ভরাট করে বড় বড় ইমারত ও সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ম্যাপ খুঁজেও পাওয়া কষ্টকর কোথায় কোথায় খাল ছিল। অনেক প্রভাবশালীই এই দখলের সাথে সম্পৃক্ত। দখলের সাথে কেবল বেসরকারি বা প্রভাবশালীরাই যুক্ত নয়, যে ঢাকা জিলা পরিষদের পাবলিক সম্পত্তি দেখভাল করার কথা সেই জেলা পরিষদও এই দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। জেলা পরিষদও বহু স্থাপনা তৈরি করেছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে একটি ইংরেজি দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাধারণত শুষ্ক মওসুমে আমরা ভুলে যাই যে, খালগুলো আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। অথচ একটু সামান্য বৃষ্টি হলে অথবা বর্ষাকালে খালের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলকেই কথা বলতে শোনা যায়। এরপর সবকিছু যেন বেমালুম হয়ে যায়। সে বিবেচনায় এবার খাল থেকে অবৈধ উচ্ছেদের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং তার কার্যকারিতা শুরু হওয়াকে আমরা অভিনন্দন জানাই। এটাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, রাজধানীতে এখন যেসব ওয়াসার ড্রেন রয়েছে এর মধ্যে অধিকাংশই অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ড্রেনও দখল হয়েছে। বলা যায়, কোথাও ওয়ার্ড কমিশনার, কোথাও সরকারি দলের প্রভাবশালীরা এসব অবৈধ দখলদারদের প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। এ ধরনের প্রবণতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এ ধরনের উচ্ছেদ ক্যামেরা ট্রায়াল হবার পর আর কোনো খবর থাকে না।
খাল উদ্ধারের শুভ সূচনা অব্যাহত থাকবে এবং দলমত নির্বিশেষে দখলদার দখলদার হিসেবেই বিবেচিত হবে এটাই কাক্সিক্ষত। পরিস্থিতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে খাল উদ্ধারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। রাজধানী বাঁচাতে হলে এবং বাসযোগ্য নগরী করতে চাইলে অবশ্যই নগরীর পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের প্রয়োজনে খালগুলোর পুনরুদ্ধার জরুরি। সেই সাথে মেয়র যেভাবে বলেছেন তাতে দৃঢ় থাকাও অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে উত্তরের মেয়রের তেজগাঁওস্থ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ এবং গাবতলীসহ সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা এবং তা স্থায়ীকরণের বিষয়টি একটি নতুন উদাহরণে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদে দক্ষিণের মেয়রের দৃঢ়তাও প্রশংসনীয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে সদিচ্ছাই যথেষ্ট। রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধার না করে যত বড় বড় পরিকল্পনার কথাই বলা হোক, রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখা অসম্ভব। সে কারণে উভয় মেয়রই খাল ও ড্রেনের ওপর অথবা পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের উচ্ছেদে আপসহীন ভূমিকা নেবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন