শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ক্যারিয়ার

৩৭তম বিসিএস লিখিত

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পরীক্ষার জন্য
বিষয় : বাংলা (বিরচন অংশ)
শামসুল আলম
চেয়ারম্যান
ক্যারিয়ার গাইডলাইন
           (১৩)
দ-িতের সাথে
দ-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
ব্যথা নাহি পায় কোন, তারে দ- দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দ- বেদনা
পুত্রেরে পার না দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।
সারমর্ম: বিচারের সময় অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হলে সে বিচার হয় আদর্শ বিচার। কারণ, অপরাধ নিন্দনীয়, অপরাধী নয়। তাই একমাত্র সহানুভূতিশীল বিচারই পারে অপরাধীর মনের পরিবর্তন করাতে ও চরিত্রের সংশোধন ঘটাতে।
                   (১৪)
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নব সভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন, পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নাবার-ধান্যের মুষ্টি  বন্ধকল-বসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে নিত্য আলোচনা
মহা তত্ত্বগুলি। পাষাণপিঞ্জরে তব
নাহি চাহি নিরাপদে রাজভোগ নবÑ
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার,
কক্ষে ফিরে পেতে চাই শক্তি আপনার,
পরানে স্পর্শিতে চাই ছিঁড়িয়া বন্ধন,
অনন্ত এ জগতের হৃদয়স্পন্দন।
সারমর্ম: আধুনিক নগর-সভ্যতায়, ইট-পাথর আর লোহালক্কড়ের কাঠামোর জঠরে চাপা পড়েছে মানুষের হৃদয়বৃত্তি। পক্ষান্তরে প্রাচীন আরণ্যক সভ্যতায় মানুষের জীবন ছিল শান্ত সমাহিত। প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে প্রাণ ও মনের স্বাভাবিক স্ফূর্তিতে সে জীবন ছিল প্রসন্ন ও উদার। সেই হৃত জীবনকে ফিরে পাওয়ার আকুলতা নগর জীবনে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষকে আলোড়িত করে বারবার।
             (১৫)
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
সারমর্ম: আত্মস্বার্থে মগ্ন হয়ে সুখের অন্বেষণ করলে সুখের সন্ধান মেলে না। ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং পরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করলে প্রকৃত সুখ মেলে। কারণ, মানব জীবন বক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়; একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য।
                          (১৬)
পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মত কেন বলিস?
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস?
নিজত্ব সর্বাঙ্গে তোর দিলেন ধাতা আপন হাতে,
সেটুকু বাজে হলি, গৌরব কি বাড়ল তাতে?
আপনারে যে ভেঙে চুরে গড়তে চায় পরের ছাঁচে,
অলীক, ফাঁকি, মেকি সে জন নামটা তার কদিন বাঁচে?
পরের চুরি ছেড়ে দিয়ে আপন মাঝে ডুবে যারে,
খাঁটি ধন যা সেথায় পাবি, আর কোথাও পাবি নারে।
সারমর্ম : অন্ধ পরানুকরণ প্রবণতা মানুষের জন্যে ক্ষতিকর। কারণ, তাতে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির সৃজনশীল বিকাশের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত আপন প্রতিভা, ক্ষমতার প্রকাশ ও বিকাশের মাধ্যমেই মানুষ সত্যিকারের গৌরব ও মর্যাদা অর্জন করতে পারে।
                (১৭)
পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব কত সর্বনাশ,
নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাসÑ
রক্ত প্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে
সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে
সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধাÑ
উঠে কত হলাহল উঠে-কত সুধা।
শুধু হেথা দুই তীরে, কেবা জানে নাম,
দোহা পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।
এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে
কেহ যায় ঘরে কেহ আসে ঘর হতে।
সারমর্ম : নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলেছে মানব সভ্যতা। তাতে নিরন্তর ঘটে চলেছে সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়া। তাতে আছে অনেক রক্তপাত, অনেক উত্থান-পতন। কিন্তু সেই হাজারো দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের সেতু বন্ধনে গড়া সহজ-সরল জীবনধারা চিরপ্রবাহমান।
                 (১৮)
বসুমতী, কেন তুমি এতই কৃপণা?
কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্য কণা।
দিতে যদি হয় দে মা, প্রসন্ন সহাসÑ
কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস?
বিনা চাষে শস্য দিলে কী তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতী,
আমার গৌরব তাতে সামান্যই বাড়ে;
তোমার গৌরব তাহে একেবারে ছাড়ে।
সারমর্ম : পৃথিবী শ্রমবিমুখ মানুষকে কিছুই দেয় না। এ জগতে সাফল্যের গৌরব আসে সুকঠিন শ্রম ও কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে। অলস মাত্রকেই পরমুখাপেক্ষী হতে হয়। তাতে না বাড়ে মর্যাদা, না বাড়ে গৌরব। পক্ষান্তরে পরিশ্রম ও সৃষ্টিশীলতা মানুষের গৌরব ও মর্যাদা বাড়ায়।
                (১৯)
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চুক্ষ মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দুÑ
সারমর্ম : প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করে এবং যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করে মানুষ দূর-দূরান্তের সৌন্দর্য দেখতে ছুটে যায়। কিন্তু ঘরের কাছে অনির্বচনীয় সৌন্দর্যটুকু দেখা হয় না বলে সে দেখা পূর্ণতা পায় না।
                  (২০)
বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি!
দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানীÑ
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎপাতেÑ
যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনেÑ
সারমর্ম : বিশ্বের বিপুল জীবন-প্রবাহের এক ক্ষুদ্র অংশীদার মানুষ। আর কালের নিরবধি বিস্তারের তুলনায় খুবই সংক্ষিপ্ত মানুষের জীবন। বিশ্ব কর্মকা-ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া একজন মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে মানুষের এই যে সীমাবদ্ধতা তা দূর করার উপায় বই পড়া। এভাবেই অন্যের অভিজ্ঞতার সম্পদে মানুষ হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন