শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাজধানীতে ছিনতাই বৃদ্ধি

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ছিনতাই। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে ১৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণ, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে। এরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে এখন রাস্তাঘাটে নয় যাত্রীবাহী বাসে, রাস্তায় গাড়ী থামিয়ে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্রের মুখে  টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। শুধু রাতের বেলাতেই নয়, দিনের আলোতেও সমানতালে ছিনতাই হচ্ছে। সব ছিনতাইয়ের মামলা হয় না বিধায় পুলিশের কাছে প্রকৃত পরিসংখ্যানও নেই। এদিকে ছিনতাইয়ের সাথে যুক্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বাসের চালক হেলপারের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার সকালে টিকাটুলিতে দুই মাছ ব্যবসায়ীর টাকা ছিনিয়ে নেয়া ঘটনার সাথে বাসটির চালক ও সহকারীর সহায়তা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেফতার করা না গেলেও তাদের প্রাথমিক পরিচয় জানা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
রাজধানী বা তার আশপাশ এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানির ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। ছিনতাই অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। আবার রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যকে এ ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমনকি নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে জনজীবনে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যের বিরুদ্ধে। যাত্রীবেশে বা ছদ্মবেশে চালক-হেলপারদের ছিনতাইকারী হওয়া বা এসব চক্রের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টিও নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগে ঢাকার একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই এধরনের একটি চক্রকে পাকড়াও করেন। এছাড়া এ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টেও এধরনের বহু ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে যে, বাসে চালকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছিনতাই এবং শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে একথাও স্বীকার করতে হবে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নজরদারীর কারণেই এধরনের উপদ্রব থেকে খানিকটা মুক্তি পাওয়া গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে পকেটমারের কথাও বলা যায়। রাজধানীর  বাসগুলো থেকে এই উপদ্রব প্রায় ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছিল। গত কিছুদিনে আবার এদের আনাগোনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর সাথেও চালক-হেলপারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়, গত কিছুদিন থেকে রাতের ঢাকা অরক্ষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাতে গ্যাং ছিনতাই বেশি হচ্ছে। এমন অভিযোগও রয়েছে বই খাতা পর্যন্ত ছিনতাই হচ্ছে। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কেন হঠাৎ করে এ অবস্থার সৃষ্টি হলো? এটাও লক্ষণীয় যে, পুলিশ সপ্তাহ পার হবার পর থেকে অনেকটাই যেন উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। বলাবাহুল্য, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ মনিটরিং না থাকার কারণেই এমনটা ঘটছে। গত কিছুদিনে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোন কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব ক্ষেত্রে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই বাস্তবতা নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার জন্য মারত্মকভাবে উদ্বেগজনক। সঙ্গত বিবেচনাতেই এটা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। গুরুতর এ অবস্থার অবসান অত্যন্ত জরুরি।
পুলিশের প্রধান কাজ হচ্ছে, জনগণের জানমাল রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, জনগণের আস্থার পরিবর্তে একশ্রেণীর পুলিশ জনগণের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশের অবস্থান এবং তাদের কর্মকা- নতুন করে পর্যালোচনার দাবি রাখে। পুলিশ যাতে জনগণের আস্থায় পরিণত হতে পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। রাতে ঢাকা শহরজুড়ে  পাহারা থাকে, অথচ রাতেই তা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ব্যাপারটি কেন এবং কি কারণে ঘটছে বা ঘটতে পারছে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার। নাগরিক নিরাপত্তার বিবেচনা থেকে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন