আবু হেনা মুক্তি : পরিবেশ দূষণের জন্য ৩৫ শতাংশই অপরিকল্পিত ইটের ভাটাকেই দায়ী করা হয়েছে। ইটের ভাটার কালোধোয়া থেকে ব্যাপক কার্বণ নিঃসরণ হওয়ার ফলে বায়ু ম-লে এক ধরণের গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে। যা মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক জীব ও বৈচিত্র্যর জন্য হুমকি সরূপ। তাছাড়া কার্বণ নিঃসরণের কারণে জলবায়ু যে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে তারও অন্যতম কারণ ইটের ভাটার নির্গত কালোধোয়া। পরিবেশ দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর সনাতন পদ্ধতির ইটের ভাটা লাইসেন্সের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দক্ষিণাঞ্চলে পরিবেশ দূষণকারী ইটের ভাটা ধ্বংস ও জরিমানা প্রদানে অভিযান শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইটের ভাটায় কাঠ জাতীয় জ্বালানী ব্যবহার নিষেধসহ ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদপত্রে অবৈধ ইট ভাটার খবর নতুন নয়। তথাপি সব সরকারের আমলেই কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এসব অবৈধ ইট ভাটা গড়ে উঠছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন, খুলনা অঞ্চলের প্রায় ৮শ’ ইটের ভাটার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে উঠেছে। এসব ইটের ভাটা থেকে নির্গত কালোধোয়া পরিবেশের ক্ষতি করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সনাতন পদ্ধতি ইটের ভাটায় নতুন করে লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধে সনাতন পদ্ধতি বন্ধ করে আধুনিক ঝিক ঝাক কিলন ও হটম্যান কিলনসহ উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার জন্য ভাটা মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক উল্লেখ করেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ফুলতলার নিউ ইউনাইটেড ব্রীকস, গ্রীন এ্যারো কন্সস্ট্রাকসন, ফাইভ স্টার ব্রীকস, নিউ বক্স ব্রীকস, সুপার ব্রীকস কে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, কুষ্টিয়ার ৯টি ব্রীকস ফিল্ডকেও জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় ৭টি এবং খুলনায় ১টি অবৈধ ইটের ভাটা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে রাবেয়া ব্রীকস ফিল্ড ও ডিবি ব্রীকস ফিল্ডকে ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আরো দু’টি ইটের ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বুয়েটের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় সূত্র জানান, দেশের বায়ু দূষণের শতকরা ৩৫ ভাগের জন্য দায়ী ইটভাটাগুলো। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোয়ায় যেসব ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্ষতিকর আণবিক কণা। তাছাড়া সালফার সম্পন্ন কয়লা ইটভাটায় পোড়ানোর ফলে তা বাতাসের সাথে মিশে বিভিন্ন এসিড তৈরি করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, ইটের ভাটাগুলো আইনের আওতায় আনতে সরকার ইতিমধ্যে ন্যাশনাল ব্রীকস অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করেছে। নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযানে নামবে বিশেষ টিম। দক্ষিণাঞ্চলের ইটভাটাগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে পরিস্থিতি সরজমিনে পর্যাবেক্ষণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) খুব শীঘ্রই খুলনায় আসছেন।
সূত্রমতে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ইটের ভাটা দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস, বন উজাড় ইত্যাদি বিষয়ে বিবেচনা করে সংশিষ্টদের কাছে ১২ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশের উলেখযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে, সনাতন পদ্ধতির ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনী বিশিষ্ট ইটের ভাটাগুলোকে নতুন প্রযুক্তিতে রূপান্তর, আধুনিক প্রযুক্তিতে হাইব্রীড হলম্যান কিলন, জিগজ্যাগ কিলন ও ভাটিক্যাল শ্যাফট কিলন এবং অন্যান্য পরীক্ষিত উন্নতির প্রযুক্তির মাধ্যমে ইট পোড়াতে হবে। কোন অবস্থাতেই ভাটায় কাঠ জাতীয় জ্বালানী ব্যবহার করা যাবে না। ঘনবসতি এলাকা, বিনোদনমূলক এলাকা, সংরক্ষিত এলাকায় ইটের ভাটা স্থাপন করা যাবে না। আমদানী নীতি অনুসরণ করে নির্ধারিত মানের কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ইত্যাদি।
অপরদিকে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চহেড়া গ্রামবাসী ঘনবসতি এলাকায় ইটের ভাটা স্থাপন বন্ধের দাবীতে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে ইটের ভাটার জন্য প্রস্তাবিত স্থানের ১ কি. মিটারের মধ্যে স্কুল, মসজিদ, মন্দির ও বাজার রয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয় এখানে ইটের ভাটা স্থাপিত হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন