অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার আসছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। পরিবর্তনের ধারায় সিলেবাস আধুনিকায়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি ও নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন ছাড়াও যুগোপযোগী হচ্ছে, দেশের সরকারি চাকরি প্রার্থীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ পরীক্ষার নানাদিক। বলা হয়েছে, একক পরীক্ষকের পরিবর্তে দ্বৈত পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করা হবে। সুযোগ আসছে ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের। প্রায় দু’যুগ বন্ধ থাকার পর বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবেন ইংরেজি ভাষাতেই। সময় বাঁচিয়ে স্বল্পসময়ে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে পরীক্ষার খাতা বাসায় না নিয়ে পিএসসিতে বসেই দেখতে হবে। উদ্যোগের বিষয়ে পিএসসি’র চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও সদস্যরা একটি বাংলা দৈনিককে জানিয়েছেন, পিএসসিকে ডিজিটালাইজ করার সঙ্গে সঙ্গে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যার অনেকগুলো আগামী বিসিএসেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিকল্পনা রয়েছে আরো নতুন নতুন বেশকিছু সংস্কারের। অধিকাংশ বিষয়েই কাজ চলছে। বিসিএসের বিস্তৃত সিলেবাস কমিয়ে আনা হবে। বাংলার উপর একক নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলার ওপর জোর দিতে গিয়ে প্রশাসনে ইংরেজি জানা কর্র্মকর্তার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইংরেজি বিষয়ে কিভাবে সংস্কার আনা হবে তা নিয়ে কাজ করছে কমিশন।
একটি দক্ষ-যোগ্য প্রশাসন গড়ে তুলতে হলে সেখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আমলাদের অবস্থান অনেক ওপরে। রাষ্ট্র প্রশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। আমলাতন্ত্রকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক না কেন, তারাই রাষ্ট্রের স্থায়ী কাঠামো। সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু আমলাতন্ত্র থাকে। এই আমলাতন্ত্র বাছাইয়ের মূলে রয়েছে বিসিএস পরীক্ষা। এখানেই মূলত যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে যাদের মনোনীত করা হয় তাদের থেকেই শীর্ষ আমলায় যান অনেক। আবার অনেকে চাকরি জীবন শেষে রাজনীতিতেও প্রবেশ করেন। অনেকে আবার আইন পেশায় যোগ দেন। একথা অপ্রিয় হলেও সত্যি বাংলাদেশ অনেকদিন থেকেই দক্ষ আমলার সংকটে ভুগছে। এমন অভিযোগও রয়েছে অনেকক্ষেত্রে বিদেশিদের সাথে চুক্তি করতে গিয়ে তাদের কূটনৈতিক রীতি-নীতি ও ভাষা-পরিভাষা অনুধাবনে সমস্যা হচ্ছে। যোগ্য আমলা সংকটের কারণেই অনেকদিন থেকেই প্রশাসনে পুরনোদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাখা হচ্ছে। ইতোপূর্বে আমলাদের ইংরেজিতে দক্ষ বানাতে আলাদা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাত্র ক’দিন আগে মন্ত্রণালয়ের এক সার্কুলারে ডিসি পদে ফিটলিস্ট তৈরিতে ইংরেজি জানাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রশাসনে ইংরেজি জানা কর্মকর্তার যে সংকট চলছে সেটি কার্যত নতুন কিছু নয়। এর নানামাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব অন্যত্রও পড়ছে। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না এই বাস্তবতার জন্য মূলত পরীক্ষা পদ্ধতিই দায়ী। এ ছাড়াও বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ অনেক দিনের পুরনো। এমন উদাহরণও রয়েছে পরীক্ষার পর ফলাফল পেতেই চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। এসব নিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে। একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, দেশে দু’-ভার্সনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। ফলে যারা ইংরেজিতে পড়ছেন তারা সঙ্গত বিবেচনা থেকেই বাংলা ভার্সনে পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। ফলে সেখানে যেসব মেধা রয়েছে তাদের দেশসেবার কোন সুযোগ থাকবে না। অবশ্যই এসব মেধা বিদেশে পাচার হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এই বাস্তবতা অনেকদিন থেকেই বিরাজ করছে। বর্তমান সংস্কার চিন্তায় যেধরনের সমন্বয়ের চিন্তা করা হচ্ছে অবশ্যই তা প্রশংসনীয়। বলা হচ্ছে অহেতুক ভোগান্তি কমিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরফলে যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবেন তারা অধিক আগ্রহী হয়ে উঠবেন। একথা অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে যোগ্যরা আগ্রহী হয়ে উঠলেই অধিকতর দক্ষদের নির্বাচন করা সহজতর হবে। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন অনেকদিন থেকেই রয়েছে ।
বিসিএস পরীক্ষায় পরিবর্তন মূলত সময়ের চাহিদা হিসেবেই বিবেচিত। অন্য দেশের সাথে তালমিলিয়ে যে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। সারাদেশে যে ধরনের অবক্ষয় তার সাথে আমলাতন্ত্রের ধসের সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। একটি দেশোপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলতে যোগ্য আমলার বিকল্প নেই বলেই আমলা নির্বাচনী পরীক্ষায় আধুনিকায়ন নিয়েও প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। দেশে এখন শিক্ষিতের হার বেড়েছে, শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে সে কারণে বিসিএসের আওতাও বাড়তে পারে। যোগ্যদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে পারলে তাতে নানা ধরনের সুবিধা পাবার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে যোগ্যতার বিপরীতে তোষামোদীদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে বিপত্তি তা বোধকরি অনেকেই এখন অনুভব করছেন। একথা অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার যে কেবল পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন বা কাগুজে পরিবর্তন বিদ্যমান সমস্যার কার্যকর সমাধানে সক্ষম হবে না। একটি দক্ষ যোগ্য দেশোপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই এদের নির্বাচন হতে হবে প্রকৃতপক্ষেই মেধা-মননের ভিত্তিতে। প্রত্যেক নাগরিকেরই মতামত থাকতে পারে। সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হতে হবে যোগ্যতা। নগ্ন দলবাজী বা বিশেষ আনুগত্য পদ্ধতি বহাল রেখে কার্যকর সুফল পাওয়ার আশা অর্থহীন। প্রকৃতই দেশের জনকল্যাণ চিন্তা থেকে বিসিএস পরীক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে- সে প্রত্যাশাই জনগণের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন