শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

হঠাৎ বৃষ্টিতেই ঢাকার বেহালদশা

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে এখনো ফাল্গুনের অর্ধেক পার হয়নি। এরই মধ্যে বুধবার হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে শিলাবৃষ্টিতে সারাদেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ল-ভ- হয়ে গেছে। প্রচ- শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে উঠতি ফসল, আম-কাঁঠাল, লিচু বাগান ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধসে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বড় বড় গাছসহ লোহা-কংক্রিটের বিশাল সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ার মধ্য দিয়েই বোঝা যায় এই ঝড়োবৃষ্টিতে সারাদেশের দরিদ্র মানুষদের টিনের ঘর ও পর্ণকুটিরগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত পরিসংখ্যান আমাদের সামনে না থাকলেও ২০-৩০ মিনিটের বৃষ্টিতেই ঢাকার রাজপথ, গলিপথ অচল হয়ে পড়ার সেই চিরচেনা চিত্রটি নগরবাসীর সামনে আবারো ধরা পড়ল। বৃষ্টির পর ড্রেন থেকে উপচে পড়া ময়লা-বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে রাস্তা সয়লাব হওয়ার সাথে সাথে নতুন মাত্রায় পানিবদ্ধতা ও যানজটের ভোগান্তিতে পড়ল নগরবাসী। বর্ষার আগেই নগরবাসীর চোখে প্রত্যক্ষভাবে ধরা পড়ল, সরকারের মন্ত্রী-আমলা, নগর কর্তারা যা’ই বলুন, যতই স্বপ্ন দেখান, সামান্যবৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরীর সেই পানিবদ্ধতা, খানাখন্দে ভরা দুর্গন্ধযুক্ত রাস্তায় ড্রেনের ময়লা উপচানো, দীর্ঘ যানজটের অসহ্য ভোগান্তির মাত্রা এখনো এতটুকু বদলায়নি।
গত বছর এপ্রিলে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। দীর্ঘদিন অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চালানো হচ্ছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকা-। দুর্নীতিগ্রস্ত এবং জবাবদিহিতাহীন সিটি প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতায় নাগরিক সেবার মান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। স্বাভাবিকভাবেই নতুন মেয়রদের কাছে জনপ্রত্যাশা ছিল অনেক বেশী। নির্বাচনের আগে নাগরিক সেবার মানবৃদ্ধিসহ যানজট, নগরীর পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা সংস্কার, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের মত জরুরী বিষয়গুলোর বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী। সরকারী দলের প্রার্থীরা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কারণে তারা তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাতে সক্ষম হবেন বলে নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশী। দুই সিটি মেয়রের কণ্ঠেই ঢাকাকে গ্রীন, পরিচ্ছন্ন, যানজট ও পানিবদ্ধতামুক্ত পরিবেশবান্ধব বিশ্বমানের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জোর প্রতিশ্রুতি ছিল। নির্বাচিত মেয়ররা ইতিমধ্যে তাদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছর পার করতে চলেছেন। নাগরিক সমস্যা নিরসনে তাদের যথেষ্ট তৎপর দেখা গেলেও বাস্তব ফলাফল তেমন দেখা যাচ্ছেনা বললেই চলে। রাস্তা, যানজট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ,  পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য অপসারণ, খাল ও নদী দখল-দূষণ, নাগরিক নিরাপত্তাসহ ঢাকা শহরের নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠার কোন উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।
ডিএনসিসি বা ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক গত বছর সেপ্টেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার নাগরিক সেবা কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ঢাকার খালের মালিক ডিসি, এর সংস্কার এবং দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। আমি খাল খননে ১০০ টাকা খরচ করলেও দুদকে মামলা হবে। আর খালগুলো প্রবহমান না থাকলে পানিবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব না। এ বক্তব্যে মেয়রের অসহায়ত্ব ফুটে উঠলেও ইতিমধ্যেই উত্তরের মেয়র কিছু প্রশংসনীয় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে নগরবাসী যে এখনো সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা, খানাখন্দে ভরা রাস্তার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পায়নি, বুধবারের বৃষ্টির পর এটা অনেকটা স্পষ্ট। এখনো প্রতিদিন শত শত টন বিষাক্ত তরল রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদীতে ফেলা হচ্ছে। এখনো ঢাকার বেদখল হওয়া খাল এবং জলাভূমিগুলো উদ্ধার হয়নি। উদ্ধারের প্রাথমিক উদ্যোগও দেখা যাচ্ছেনা। এ বছরও ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নগরী হিসেবে আন্তর্জাতিক তালিকায় স্থান পেয়েছে। দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা দাবী করছি, তখন দেশের রাজধানী শহরটি যদি বাসযোগ্যতা হারায়, শহরের প্রায় দু’কোটি মানুষকে প্রতিদিন নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তবে জাতির এগিয়ে যাওয়ার দাবী গ্রহণযোগ্যতা হারায়।  পঞ্জিকার হিসেবে বর্ষা আসতে এখনো বেশ কিছুদিন দেরি। আগামী বর্ষার আগে ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি লক্ষণীয় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় নগরবাসী। তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প এবং সংস্কারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপরিকল্পিত অপচয় বন্ধ করে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। শুধু ঢাকা শহরই নয়, দেশের সব সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা শহরগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদী ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন