রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্ধ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর মধ্যে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো, ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কড্ডা, ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আশুগঞ্জ, ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পটিয়া এবং ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিনি কোটালীপাড়ায় ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগেরও উদ্বোধন করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, উদ্বোধনকৃত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আগেই উৎপাদনে চলে এসেছে। গ্রাহক সাধারণ এর সুফল ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী এই সঙ্গে একটি বার্তাও দিয়েছেন। বলেছেন, কেউ আর অন্ধকারে থাকবে না। সকলের জন্য বিদ্যুৎ কিংবা দেশে বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিগত কয়েক বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযোজিত হয়েছে। অবশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে কাজ চলছে সেই লক্ষ্যমাত্রা এখনো অর্জন হয়নি। বৃহৎ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে না আসায় এটি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে যত দ্রুত সম্ভব এসব কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে এবং তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও অগ্রগতি অর্জিত হবে। বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ছে না। সে কারণে আগের চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়লেও সারাবছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভবপর হচ্ছে না। আরও একটি বড় কারণ এই যে, গ্যাস সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় সারা বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রেখে তাদের স্থাপিত ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অনেক সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কোনো কোনোটি বন্ধ রাখতে হয় বা উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়। ফলে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। এবারও বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে বলা হয়েছিল, পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া গেলে আসন্ন সেচ মওসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে না।
এটি একটি অনিবার্য বাস্তবতা। এর প্রেক্ষাপটে সরকার যমুনা সার কারখানা ছাড়া সব সার কারখানা আগামী মাস থেকে পর্যায়ক্রমে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, এ ধরনের ব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে এবং সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদা মোতাবেক গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কথা কারো অজানা নেই, দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই গ্যাসনির্ভর। অথচ গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট নয়। এ কারণে এখন যেমন সার কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হচ্ছে তেমনি কোনো কোনো সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে কিংবা কমিয়ে সার উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। এতে উভয় ক্ষেত্রেই উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এর খেসারত দিতে হয় দেশের মানুষকেই। প্রয়োজনীয় গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। সরকার গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেও আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারেনি বা পারছে না। সাম্প্রতিক কালে নতুন করে গ্যাসের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুরনো গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন হ্রাসমান। অন্যদিকে সাগরে গ্যাসের অনুসন্ধান নানা কারণে এখনো শুরুই হয়নি। প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেলে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিংবা শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হতে বাধ্য এবং হচ্ছে। বহু শিল্পকারখানা গ্যাসের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। চালু শিল্প কারখানাতেও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের সংকট আবাসন খাতেও প্রকট। আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাস সংযোগের অভাবে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছে না। এমতাবস্থায় ক্ষেত্রে দুটি পথই খোলা আছে Ñ হয় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, না হয় গ্যাসনির্ভরতা হ্রাস করতে হবে।
এমনিতেই গ্যাসের সংকট বিদ্যমান এবং এই সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়ার একটি বড় কারণ গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাব। বিনিয়োগ না হওয়ায় শিল্পায়ন ত্বরান্বি^ত হচ্ছে না এবং শিল্পায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হচ্ছে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থেই গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের যে মজুদ আছে তাতে খুব বেশি দিন চলবে না। বড় জোর ২০৫০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা যেভাবে বেড়েছে ও বাড়ছে তাতে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি স্থলে ও সাগরে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এতে সাফল্য এলে দেশের জন্য সেটা হবে বিরাট সম্ভাবনা। তবে সম্ভাব্যতার ওপর ভরসা করলে চলবে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প উৎসের সন্ধান তৎপরতা ও ব্যবহার বাড়াতে হবে। গ্যাসের সহজ বিকল্প কয়লা। দেশে কয়লা আছে, আমদানির সুযোগও আছে। সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ওপর জোর দিলেও কাজ খুব একটা এগোয়নি। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়েই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠেনি। এদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার। এছাড়া সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য বিকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বিদ্যুৎ নিরাপত্তা বা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ জাতীয় আকাক্সক্ষার অংশ।  দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য সকল ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আবশ্যকতা প্রশ্নের অতীত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন