রাজধানীতে পুরনো ও আনফিট গাড়ি অবাধে চলাচল করছে। চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্নের অবধি নেই। পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, রাজধানীতে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহনই হয় তাদের জীবৎকালের সময়সীমা অতিক্রম করেছে অথবা চলাচল যোগ্যতা হারিয়েছে। চালকদেরও বেশিরভাগই অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ। এর অনিবার্য ফল এই যে, প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে, যাত্রী-পথচারীরা হতাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়মার্কা ও আনফিট গাড়ি পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ফেলছে। রাজধানীর ভয়াবহ বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের বড় কারণ এসব চলাচল যোগ্যতা হারানো গাড়ি। ২০ বছরের অধিক বয়সী গাড়িসহ আনফিট গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তরফে নির্দেশনা প্রদান করা হলেও এমনকি ঘোষণা দিয়ে এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ও আনফিট গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, অভিযান শুরুও হয়েছিল। কিন্তু তা কোনো ফল দেয়নি। বর্তমান সরকারের আমলেও অনুরূপ ঘোষণা দেয়া হলেও অভিযানের দেখা পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে রাস্তা থেকে আনফিট গাড়ি সরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ঢাকার দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ২০ বছরের পুরনো ও আনফিট গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ১ মার্চ থেকে এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। তার এ ঘোষণা এবং অভিযান কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ ধরনের অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
প্রশ্ন ওঠে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও আনফিট গাড়ির চলাচল রহিত করা জন্য ঘোষণা দিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হবে কেন? বিধান মতে, এ ধরনের গাড়ির চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও বিধিভঙ্গ করে চলাচল করছে কি না, সেটা দেখা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের প্রতিদিনের রুটিন কাজ। এই রুটিন কাজটি যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ ও আনফিট গাড়ি রাস্তায় থাকারই কথা নয়। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। মেয়াদোত্তীর্ণ ও আনফিট গাড়ির ভিড়ে ভালো, চলাচল-সক্ষম ও ফিট গাড়িও হারিয়ে গেছে। পুরনো ও আনফিট গাড়ি জব্দ করা এবং চালকদের লাইসেন্স ভুয়া না ঠিক পরখ করে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা হলে এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়। অতীতে আমরা দেখেছি, যখনই এ নিয়ে কিছু হৈ চৈ হয়েছে, পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা হয়েছে, তখনই পুরনো লক্কড়মার্কা ও আনফিট গাড়ি রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার সেসব গাড়ি রঙচং দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য প্রথমত, মালিকেরা দায়ী। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী। এক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের অনৈতিক কারবার ও অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা চালু থাকলে কখনই পুরনো ও আনফিট গাড়ি থেকে রাস্তা মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
রাজধানীকে বলা হয় যানজটের শহর। এমন কোনো দিন ও সময় নেই যে, বিভিন্ন রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে না থাকে। এর আর্থিক ক্ষতি বিপুল। বিভিন্ন সময় এ হিসাব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পুরনো ও আনফিট গাড়ির অবাধ চলাচল এই ভয়াবহ যানজটের অন্যতম কারণ, তাতে সন্দেহ নেই। এসব গাড়ি সরিয়ে দেয়া হলে যানজট পরিস্থিতির বড় রকমের পরিবর্তন ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এর ফলে বায়ু ও শব্দদূষণও কমবে। কমবে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, গণপরিবহনের অভাব পুরনো ও আনফিট গাড়ি চলাচলের অন্যতম কারণ। কাজেই, এসব গাড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক নতুন ও ফিট গাড়ি রাস্তায় নামাতে হবে। না হলে যাত্রীদের যাতায়াত আরো সমস্যাসঙ্কুল ও কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সম্মিলিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে পুরনো ও আনফিট গাড়ি থেকে রাজধানীর রাস্তা মুক্ত করা সম্ভব। সেটা অবশ্যই করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ও ফিট গাড়ি নামিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত ও জন চাহিদা মাফিক করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন