বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা রয়েছে অনেক। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতও এটি বলা যায়। গার্মেন্টের তৈরি পণ্য বিক্রিতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকে বায়িং হাউস। এই বায়িং হাউসের কল্যাণে তৈরি পোশাকগুলোকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। তৈরি পোশাকের এসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মার্চেন্ডাইজাররা। এখানে অনেক সুযোগ রয়েছে নিজেকে মেলে ধরার। সহজেই পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের চাকরি। এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন তারিন তাসমী।
কাজের ক্ষেত্র
মার্চেন্ডাইজারদের মূলত দুটি কাজ ফ্যাক্টরি ও বায়িং হাউস ভিজিট। বায়িং হাউসে কাজের পরিধিটা অনেক বড়। বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজাররা বিদেশি বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করে পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দেন এবং বায়ার রাজি হলে কোম্পানির প্রোডাক্টের স্যাম্পল দেখানো হয়। প্রোডাক্ট তৈরিতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হবে এবং এর মান কতটুকু টেকসই হবে, প্রোডাক্টের সব গুণাগুণ তুলে ধরে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পছন্দ হলে দামের বিষয়টি চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র করা হয়। বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরিতে প্রোডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত পুরো কাজ দেখতে হয় মার্চেন্ডাইজারদের। ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজাররা বায়িং হাউসের মাধ্যমে পাওয়া কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি ও পণ্যের মানের বিষয়টি দেখভাল করেন। বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজারদের কাছে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইমপোর্ট করা। এলসি খোলার কাজও করেন ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজাররা।
কীভাবে পাবেন চাকরি
বায়িং হাউস ও ফ্যাক্টরিতে মার্চেন্ডাইজার নিয়োগের জন্য পত্রিকায় তেমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় না। এর জন্য আপনাকে প্রতিষ্ঠানের অনলাইন জব পোর্টালের মাধ্যমে সিভি চায়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগ সময়ে নিয়োগ দেয় ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও পরিচিতির মাধ্যমে। বিভিন্ন বায়িং হাউস, ফ্যাক্টরি ও মার্চেন্ডাইজিং পেশায় যারা কাজ করছে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জব পোর্টালের গার্মেন্ট, টেক্সটাইল বা মার্চেন্ডাইজিং ক্যাটাগরিতে চোখ রাখতে হবে আপনাকে। প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি সিভি জমা দিয়ে রাখতে পারেন। সাধারণত ভাইভার মাধ্যমেই নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক সময় লিখিত পরীক্ষাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্ট বা মার্চেন্ডাইজিং সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ভাইভা নিয়ে থাকে ইংরেজিতে। এতে করে প্রার্থীর ইংরেজির দক্ষতা ও যাচাই হয়ে যায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায় অভিজ্ঞ বা টেক্সটাইল বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রার্থীরা।
যোগ্যতা
মার্চেন্ডাইজার হওয়ার জন্য যে কোন বিষয়ে ¯œাতক হলেই চলে। তবে অগ্রাধিকার পায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেক্সটাইলের যে কোনো বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। মার্চেন্ডাইজারদের বিভিন্ন দেশের বায়ায়ের সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হয়। পাশাপাশি অন্য দেশের ভাষা জানা থাকলে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। কম্পিউটার জানা অতি প্রয়োজনীয়। কারণ মাঝে মাঝে বায়ারদের ই-মেইল করতে হয়। তাদের মেইলের উত্তর দিতে হয়।
বেতন ও পদোন্নতি
যারা নতুন বা অনভিজ্ঞ সাধারণত তাদেরকে অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্যতা অনুযায়ী মার্চেন্ডাইজার, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ও মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। পদোন্নতি হয় কাজ ও দক্ষতার ভিত্তিতে। বায়ারকে আকৃষ্ট করা, সঠিক সময়ে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কাজের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে চাকরি শুরুর বছরখানেকের মধ্যে মার্চেন্ডাইজার হতে পারেন। এ ছাড়াও শুরুতে একজন মার্চেন্ডাইজার ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পান। অভিজ্ঞতা বাড়ায় সাথে সাথে বেতনও বাড়ে। সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার বা মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার দুই লাখ টাকা পর্যন্তও বেতন পেতে পারেন।
প্রশিক্ষণ
স্নাতক শেষে মার্চেন্ডাইজিংয়ের ওপর কোর্স করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি কোর্স আছে। কোর্স করা থাকলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। যেখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হলো :
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)।
ম্যার্চেন্ডাইজারস ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এমআইএফটি)।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)।
তবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে কোর্স করা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন