রাজধানীসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে শতশত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগেরই অনুমোদন নেই। নেই অভিজ্ঞ চিকিৎসক, কর্মী ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ। অনুমোদনহীন এসব কেন্দ্রে মাদকাসক্তের চিকিৎসার নামে চলছে মাদক ব্যবসা। যত্রতত্র গড়েওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও নেই। এতে করে প্রতারিত হচ্ছে হাজার হাজার মাদকাসক্ত রোগী ও তাদের পরিবার। বলা হয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। অন্যদিকে মাদকাসক্তি ও মাদকবিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধির নামে সারাদেশে প্রায় আড়াইশ’ এনজিও কাজ করছে। এদের বেশিরভাগই মূলত মিটিং-মিছিল আর সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মধ্যেই ব্যস্ত থাকছে। অভিযোগে বলা হয়েছে আলোচ্যকেন্দ্রগুলো মূলত মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ম-কানুন না মেনেই চলছে।
দেশে মাদকের থাবা নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা নেই। বিভিন্ন রিপোর্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নœবিত্ত এমনকি সাধারণ খেটে খাওয়াদের সন্তানও এখন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। দেশের সীমান্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যের উদাসীনতা ও প্রশ্রয়ে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত মাদকের আগ্রাসন চলছে। এই নেশায় দেশের ছাত্র-যুবক থেকে শুরু করে প্রায় সকল শ্রেণীপেশার লোকই এখন কমবেশি আক্রান্ত। এ থেকে উত্তরণের কথা দেশের বিশিষ্টজনেরা বারবার বলে আসছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না নেশার কারণে দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে গেলে তার দায় মূলত আমাদের উপরই বর্তাবে। নানা কারণে বর্তমানে নেশার বিস্তার ঘটলেও এর কার্যকর প্রতিকারের উদ্যোগ নেই তদারকিতে। সরকারের দায়িত্বশীল মহলের এ ব্যাপারে দায় এড়াবার উপায় নেই। একথাও বলা যায় যে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব আইন-কানুন, বিধি-বিধান করা হয়েছে সেগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধীদের পরিবর্তে নির্দোষদের উপরও প্রয়োগ করা হচ্ছে। মাদকের এই ভয়ংকর ছোবল থেকে জাতিকে বাঁচানোর কোন বিকল্প নেই। যদিও একথা প্রায় সকলেরই জানা, যে মহল মাদকের অবৈধ আমদানি শুরু করেছিল তারাই সর্বপ্রথম এর নিরাময় কেন্দ্র চালু করেছিল। এখন অবশ্য অবস্থা ভিন্ন রকম। দেখা যাচ্ছে একদিকে পাড়ায় মহল্লায়, অলিতে গলিতে যেমনি ছড়িয়ে পড়েছে মাদক তেমনি আবার গড়ে ওঠেছে তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্র। এ অভিযোগও নতুন নয় যে তথাকথিত অনেক নিরাময় কেন্দ্র মূলত মাদক সেবনের নিরাপদ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে প্রায় ১২ শ’ নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। বাস্তবে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। অন্যদিকে এসব কেন্দ্র তৈরিতে যে ধরনের বিধিমালা রয়েছে তার প্রতি কোন তোয়াক্কা না করে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘিঞ্জি-গলিতে চিকিৎসকহীন পরিবেশে গড়ে উঠছে এসব তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্র।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যেসব পরিবার এখন মাদকাসক্তদের দ্বারা আক্রান্ত তারাই এর যন্ত্রণা অনুভব করছে। নেশার টাকা সরবরাহ করতে না পারার কারণে দেশে প্রায় প্রতিদিনই নানা ধরনের অঘটন ঘটছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানিতে এখন প্রত্যক্ষভাবে নেশার ভূমিকা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা কার্যত যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পান না। তারা কোনভাবে আক্রান্তদের হাত থেকে বাঁচতে চায়। ফলে অভিভাবকরা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কোনকেন্দ্রটি তার জন্য সহায়ক হবে কোনটি নয়। নিয়মানুযায়ী বিধান মোতাবেক কেন্দ্রগুলো রয়েছে কিনা তা তদারকি করার দায়িত্ব যাদের তারা যদি সঠিকভাবে দেখেন তাহলে ভুক্তভোগীদের অহেতুক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক যে মাদকাসক্তি নিরাময় করতে গিয়ে উল্টো মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা গেলে সমাজে মাদকাসক্তদের সংখ্যাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসতো। লক্ষ্য অর্জনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হওয়া প্রয়োজন। বলা যায়, দেশের মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো যাদের তদারকি করার কথা তারা কঠোর হলে অবশ্যই এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন