শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আইটি এন্ড টেলিকম

৩৬০ ডিগ্রি নিরাপত্তা ও একশ ভাগ ঝুঁকিবিহীণ

ক্লাউড কম্পিউটিং

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে ক্লাউড কম্পিউটিং শব্দটা ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এতদিন মানুষ ফিজিক্যাল মেমোরি ব্যবহার করতো। এইসব ফিজিক্যাল মেমোরির মধ্যে রয়েছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, পোর্টবল হার্ডডিস্ক, সিডি-ডিভিডি রম, পেন-ড্রাইভ ইত্যাদি। সম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের ব্যাপকতা বেড়েছে। ফলে তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য মানুষ এখন আর শুধু ফিজিক্যাল মেমোরির উপর নির্ভর করছে না। জনপ্রিয়তা সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ব্যবহার।
ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত থেকে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে থাকা আরেকটি কম্পিউটারের ক্ষমতাকে ভাগাভাগি করে নেয়ার মতো অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তি। ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবস্থায় অনলাইনের মাধ্যমে লাইভ সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যায়। এমনকি ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ করেও রাখা যায়। ক্লাউড কম্পিউটিং-এ নিজের মতো করে অপারেটিং সিস্টেম সাজিয়ে ব্যবহার করার সুবিধাও রয়েছে।  এসব অপারেটিং সিস্টেম চাইলে কম্পিউটারে ইনস্টলও করে ব্যবহার করা যায়।
উল্লেখ্য, বিশ^ব্যাপি ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে কার্যকর সব পদক্ষেপ নিচ্ছে মাইক্রোসফট। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত বেসিস সফট এক্সপো ২০১৭-এর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন উইথ ক্লাউড কম্পিউটিং’ শীর্ষক সেমিনারের বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথইস্ট এশিয়া এ্যান্ড ইমার্জিং মার্কেটসের ডিরেক্টর সঞ্জয় পাটেল এবং অ্যাপাকের চীফ ডিজিটাল ষ্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রেইগ অর। তাদের দেয়া তথ্য মতে, বর্তমানে বিশে^র ৩৮টি অঞ্চলে মাইক্রোসফটের ডাটা সেন্টার রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৩২টি পুরোপুরিভাবে কার্যকর। মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেবা ‘অ্যাজুর’ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনাকারী একটি সেবা। ‘অ্যাজুর’-এর ডাটা নিরীক্ষা ও নির্ভুল পরিচালনা, গ্রাহক-নির্ভর মনোভাব, অ্যাকাউন্ট একসেস ও পরিচালনা, অবকাঠামোগত পর্যালোচনা, অ্যাপ্লিকেশন, নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ, অপারেটিং সিস্টেম, ফিজিক্যাল হোস্ট, ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ক, নিরাপত্ত, গোপনীয়তা ও নিয়ন্ত্রণ, কমপ্লায়েন্স এবং স্বচ্ছতায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে মাইক্রোসফট। বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ‘অ্যাজুর’ সেবা পুরোদমে চালু করেছে মাইক্রোসফট। প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ গতি থমকে না গিয়ে বরং আরো সুশৃংখল পরিচালনার মাধ্যমে যেনো এগিয়ে যায় সে লক্ষ্য নিয়ে মাইক্রোসফট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে ১০০ ভাগ নিরাপদ ক্লাউড সেবা দিতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ।    
উল্লেখ্য, ফরচুন ৫০০-এর ৯০ শতাংশই ‘অ্যাজুর’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্লাউড ব্যবহার করে। কিছু অবাক করা তথ্য হচ্ছে, ‘অ্যাজুর অ্যাপ সার্ভিস’-এ এখন পর্যন্ত এক্সটার্নাল রিকোয়েস্ট বা আবেদন জমা পড়েছে ১৯৪ বিলিয়ন, প্রতিদিন ‘অ্যাজুর এসকিউএল কোয়েরি’-তে ৩৪০ বিলিয়ন আবেদন জমা পড়ে, ‘অ্যাজুর অ্যাকটিভ ডিরেক্টরি’-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৫০ মিলিয়ন, প্রতিদিন ১৮৮টি ওয়েবসাইট ভিজিট করে সারাবিশে^র মানুষ যে ওয়েবসাইটগুলো ‘অ্যাজুর ওয়েব অ্যাপ সার্ভিস’-এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।

ভবিষ্যতের কম্পিউটার:
আগামি ২০২০ সালের মধ্যে নো-ক্লাউড নীতিমালা বলে কিছু থাকবে যেমনটি বর্তমানে নো-ইন্টারনেট নীতিমালা বলে কিছুই নেই। ভবিষ্যতে ক্লাউড ব্যবহার করে কিভাবে বিনিয়োগ ও ঝুঁকি কমানো যায় এমন চিন্তায় বিভোর থাকবে ব্যবহারকারীরা। ২০২০ সালের মধ্যে ক্লাউডে কোনো পাবলিক কিংবা প্রাইভেট ক্যাটাগরি করা থাকবে না, বরং মূখ্য বিষয় হবে ব্যবসা পরিচালনা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্ভরযোগ্য উৎস হবে ক্লাউড কম্পিউটিং। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, আগামি ১০ বছরে ১০০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুযোগ রয়েছে সামাজিক ও প্রযুক্তি খাতে। ক্লাউড, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), সোশ্যাল লিসেনিং, বিগ ডাটা, মেশিন লার্নিং, ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও পার্সোনাল অ্যাসিসটেন্টগুলোর মতো অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে বিশ^কে চমকে দেয়ার জন্য।
ক্লাউড কম্পিউটিং-ই হবে ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রক। ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতে শুধু মাইক্রোসফটই নয়, বরং গুগল ও আমাজনের মত বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে প্রচারণার কাজে মাঠে নেমেছে। এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের বিনামূল্যে ক্লাউড স্পেস ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। গুগল বহু আগেই চালু করেছে গুগল ড্রাইভ। এই ড্রাইভে বিনামূল্যে তথ্য সংরক্ষণ কর রাখা যায। মাইক্রোসফটে ওয়ান ড্রাইভেও মিলছে বিনামূল্যের ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা। এমনকি মাইক্রোসফট তাদের জেনুইন বা আসল অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে এক টেরাবাইট ওয়ানড্রাইভ ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা বিনামূল্যে দিচ্ছে। ফলে অনলাইন স্পেস এসব ব্যবহার করে অনলাইনে তথ্য সংরক্ষণ করছেন অনেকেই।
ক্লাউড কম্পিউটিং যারা ব্যবহার করে তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে হোস্টেড সার্ভিস পায়। অর্থাৎ একটি সার্ভার কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমসহ সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
এতে করে উচ্চ গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট কম্পিউটার প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সংরক্ষণ, হালনাগাদ করা কিংবা অনলাইনে সফটওয়্যার ইনস্টল করে ব্যবহার করতে পারে।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের নানাবিধা সুবিধা থাকা সত্বেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমটি হলো অনলাইন স্টোরেজে হ্যাকারদের হামলা। হ্যাকরা আপনার হোস্টিং স্পেসে হামলা করে হাতিয়ে নিতে পারে প্রয়োজনীয় তথ্য। ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা নেয়ার জন্য উচ্চগতির ইন্টেরনেট সংযোগ থাকতে হয়। আমাদের দেশে এখনও উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধার বাইরে বিপুল জনগোষ্ঠী।

এক নজরে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধাসমূহ:
ক্স    ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পাওয়া সম্ভব।
ক্স    ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মাধ্যমে অনেক উচ্চমান সম্পূর্ণ কাজ করা সম্ভব। এবং প্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করা সম্ভব যা হয়তো ব্যবহারকারীকে আলাদা টাকা দিয়ে কিনতে হতে পারত।
ক্স    একসঙ্গে অনেক ডাটা বা তথ্য সংরক্ষন করা সম্ভব এবং সেই তথ্য কখনই হারিয়ে যাবে না বা নষ্ট হয়ে যাবে না। ক্লাউড কম্পিউটিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল সংখ্যক ডাটা সেন্টার বা তথ্যভান্ডার থাকে। তাই ব্যবহারকারীকে তথ্য নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।
ক্স    ইচ্ছা মতো হালনাগাদ করা সম্ভব।
ক্স    ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা নেয়া যায় তুলনামূলক কম খরচে। বিভিন্ন মেয়াদে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী ১ মাস, ৬ মাস, ১ বছর কিংবা আজীবন মেয়াদে এই সেবা নেয়ার সুযোগ থাকে।
ক্স    প্রায় সকল প্রকারের কম্পিউটিং ডিভাইজ দ্বারা ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উচ্চমান এর কাজ করার জন্য ব্যবহারকারীর উচ্চমানের কম্পিউটার থাকার প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার পড়বে ভালো ইন্টারনেট সংযোগের এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সাহায্যে সকল প্রকার কাজ করা যাবে।
শওকত আলম পলাশ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন