শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের তদন্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা অপহরণ মামলার প্রধান আসামির কাছ থেকে গুনে গুনে টাকা নিচ্ছেন। খবরে আরো বলা হয়েছে, স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে সাড়ে চার বছরের শিশু শাওনের অপহরণ মামলার আসামি মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সিআইডির এই কর্মকর্তা। আসামি অভিযোগ করেছেন, কলমের খোচায় জীবন শেষ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে সিআইডির কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান তার কাছ থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ২২ হাজার টাকা নিয়েছেন। ওবায়দুর রহমানের পরিচয় সম্পর্কে সিআইডির ঢাকা বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একটি দৈনিককে তিনি জানিয়েছেন, মুঠোফোন নাম্বারটি সাংবাদিকের হওয়ায় ওবায়দুর রহমান রং নাম্বার বলেছেন। অথচ এটি ওবায়দুর রহমানেরই নাম্বার। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঢাকা বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আবু সুফিয়ান এবং পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম নিশ্চিত করেছেন যে টাকা গ্রহণকারী আলোচ্য ব্যক্তি ওবায়দুর রহমানই। ২০১৬ সালে ১২ মার্চ অশুলিয়া থানায় দায়ের হওয়া শিশু অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এই মামলাটি সম্পর্কে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিখোঁজ শিশুটিকে খোঁজার কোন কার্যকর উদ্যোগই তারা সিআইডিকে নিতে দেখেনি।
শিশু অপহরণের মত গুরুতর অপরাধের একজন আসামির কাছ থেকে সিআইডির একজন তদন্ত কর্মকর্তার টাকা গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদন অনেক প্রশেরœ জন্ম দিয়েছে। মামলার বিবরণীতে অনেক প্রসঙ্গ থাকলেও বিষয়টি হচ্ছে, প্রকৃতই কোন অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা অথবা কারা এধরনের অপরাধের সাথে জড়িত সেটি খতিয়ে দেখাই হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাজ। আলোচ্য ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা তদন্ত না করে নিজের আখের গোছাবার জন্য আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। মূল ঘটনা নিয়ে আগ্রহের পরিবর্তে ঘুষ গ্রহণে তার এই আগ্রহ মূলত সিআইডির মতো একটি রাষ্ট্রীয় তদন্তসংস্থার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছ্।ে সাধারণত এটা মনে করা হয় যে, যেকোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্তে সিআইডিই নির্ভরযোগ্য। এই বিভাগের কাজই হচ্ছে অপরাধ তদন্ত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা যা করেছেন সেটি তিনি একা না আরো অনেকে করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর আগেও সিঅইডির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে সিঅইডি এবং র‌্যাবের তদন্তে বড় ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে যা পত্র-পত্রিকায় খবর হিসেবে বেরিয়েছে। বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সাধারণত কোন অপরাধ সংগঠিত হলে তার প্রতিকারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরই দ্বারস্থ হতে হয়। এখন যদি সেখানেই তদন্তের পরিবর্তে ঘুষের লেনদেন হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? বলা বাহুল্য, দেশে গুম, খুনের যে অসংখ্য অনিষ্পত্তিকৃত মামলা রয়েছে তার কোন ফয়সালা করা যায়নি। এর কোন তদন্ত রিপোর্টও পাওয়া যায়নি। প্রতিটি পরিবারই হতাশায় নিমজ্জিত। অন্যদিকে আলোচ্য সংস্থাটির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ ওঠার পর এ প্রশ্ন উঠতে পারে, এধরনের সংস্থার তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে কিনা। গত কিছুদিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ডিবির সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। জীবনের ভয় দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেরই টাকা নেয়ার অভিযোগ যেমন উদ্বেগের তেমনি অনভিপ্রেত। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে উঠে তাহলে মানুষের অসহায় হয়ে উঠা ছাড়া গতি থাকে না। অপরাধ দমনের জন্য যারা জনগণের ট্যাক্সে বেতন-ভাতা নেন তারাই যদি অপরাধের সাথ জড়িত থাকেন তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যে আরো বাড়বে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাবেই ঘটছে। যেকারণে বা যেভাবে এসব হয়ে থাক না কেন সেটি এখন বড় কথা নয় বড় কথা হচ্ছে এঅবস্থা চলতে পারে না। এটি সুশাসনের পরিপন্থী। এর আগে ভিডিও ফুটেজে ডিবি পুলিশসহ আরো অনেককে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অনেককে চাপে ফেলে অবৈধ অর্থ আদায়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে বলেই আমরা জানতে পারছি। এর বাইরে যে আরও ঘটনা ঘটছে, তা খবরে না এলেও মানুষ জানে। ভয়ভীতির কারণেই ভুক্তভোগীরা চুপ মেরে থাকে। যে কোন কারণেই হোক, জনগণের শান্তিবিধানই যে বাহিনীর কাজ সেই বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের কারণে জনভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এর দ্রুত অবসান হওয়া প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন