শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ওষুধ শিল্প : সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত দিন দশকে বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশে ওষুধের বিশাল বাজারের ৯৮ ভাগ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে দেশীয় ওষুধ কোম্পানীগুলো। পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রে শত শত মিলিয়ন ডলারের ওষুধ রফতানী করছে প্রথম সারির ওষুধ কোম্পানীগুলো। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘নবম এশীয় ফার্মা এক্সপো-২০১৭’ উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ওষুধ শিল্পের এই উত্থানকে গর্ব করার মত বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশের প্রায় ৫০০ ওষুধ কোম্পানী এই এক্সপোতে অংশ নিচ্ছে বলে জানা যায়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যেখানে শতকরা ৭০ ভাগের বেশী ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানী করতে হতো, সেখানে দেশের বিশাল বাজারের হাজার হাজার কোটি টাকার ওষুধের চাহিদা পূরণ করে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানীর বাস্তবতা বিস্ময়কর এবং গর্ব করার মতই বটে। দেশের ওষুধ শিল্পের পাইওনিয়ার কোম্পানীগুলো নিত্য নতুন আইটেম এবং নতুন বাজারে প্রবেশের মধ্য দিয়ে এই শিল্পের বিশাল সম্ভাবনাকে উন্মোচিত ও প্রসারিত করে চলেছে। ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার দেখানো পথে স্কয়ার, রেনাটা, ইনসেপ্টাসহ শীর্ষসারির কয়েক ডজন ওষুধ কোম্পানীর হাত ধরে এই শিল্পের রফতানী প্রবৃদ্ধি অন্য যে কোন শিল্পের চেয়ে বেশী। সেই সাথে আইসিটি খাতের পর এই শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও অনেক বেশী।
দেশীয় বাজারে বছরে ওষুধের চাহিদা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের ওষুধ কোম্পানীগুলো এ খাতের শতকরা ৯৮ ভাগ ওষুধের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানী করছে। অপরপক্ষে দেশে শত শত মানহীন, নকল ও ভেজাল ওষুধের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ওষুধ সারাদেশের বেসরকারী হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। একশ্রেণীর ডাক্তার মোটা অংকের কমিশনের জন্যে এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন। এভাবে নকল ও ভেজাল ওষুধের শিকার হচ্ছে দেশের লাখ লাখ রোগী। রোগ নিরাময়ের জন্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নকল, ভেজাল ও মানহীন ওষুধের কারণে প্রাণঘাতী স্বাস্থ্য সমস্যায় নিপতিত হচ্ছে মানুষ। এ কারণে ওষুধশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে সমস্যা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে আরো কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
একশ্রেণীর ওষুধ কোম্পানী ভারত থেকে অবৈধভাবে ওষুধের মানহীন কাঁচামাল আমদানী করছে। এছাড়া সীমান্তের ওপার থেকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবার মত মাদক চোরাচালানের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, নিষিদ্ধ নানা ধরনের ওষুধও আসছে। এসব চোরাচালান ও নকল-ভেজাল ওষুধের কারখানা জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং মানসম্মত ওষুধ কারখানাগুলোর জন্যও বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এসব ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ও ওষুধ পরিদফতরসহ সরকারী সংস্থাগুলোর তেমন কোন কার্যকর নজরদারি আছে বলে মনে হয়না। ১৯৮২ সালের পর দেশে আর কোন ওষুধ নীতি কার্যকর না হওয়ায় দেশীয় ওষুধ কোম্পানীগুলো যখন তখন ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। কিছু অগ্রসর কোম্পানীর ওষুধের মানোন্নয়নের মধ্য দিয়ে ওষুধ রফতানীর বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হওয়াই যথেষ্ট নয়। সাবির্কভাবে দেশের জনস্বাস্থ্য এবং আভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন ও আমদানীর ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবান্ধব সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ওষুধের কাঁচামাল আমদানীতে শুল্ক কমানোর কথা ভাবছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগের পাশাপাশি দেশীয় বাজারে ওষুধের মূল্য কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ওষুধ রফতানীতে ১০ ভাগ প্রণোদনার দাবী মেনে নিলে তা’ ওষুধ রফতানী খাতকে আরো শক্তিশালী করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। সমন্বিত ও পরিকল্পনা মাফিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আগামী দশকে ওষুধ রফতানীখাত বাংলাদেশের গার্মেন্টস রফতানী খাতের মত বৈদেশিক রেমিটেন্সের অন্যতম বড় খাত হয়ে উঠতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন