শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত শনিবার সকালে রাজধানীর নর্থ-সাউথ রোডে গাড়ীর ধাক্কায় নিহত হয়েছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া। ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে, সাদিয়াকে পরিবহনকারী অটো রিকসাকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি অজ্ঞাত পরিবহন। এতে সিএনজি উল্টে গেলে মা-মেয়ে দু’জনই গুরুতর আহত হয়। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকগণ সকাল ৮ টায় সাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে শনিবার দেশের এগারো জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে।
সরকারের সশ্লিষ্টরা যাই বলুন না কেন, সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশদের এমনিতে সরব মনে হলেও ঠিক দুর্ঘটনাকারী পরিবহন গ্রেপ্তারে তাদের সফলতা কতটা সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। দেখা যায়, গাড়ী আটকসহ এসব কাজে ট্রফিক বিভাগ যত তৎপর সড়ক ব্যবস্থাপনায় তার এর একাংশও নয়। সাধারণভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়, তার মধ্যে প্রধান বিষয় হচ্ছে, চালকের অদক্ষতা। কোন যোগ্যতায় কারা চালক হবে তার সুনির্দিষ্ট নিয়ম-বিধি থাকলেও রাজনৈতিক এবং অবৈধ অর্থের কারণে এসব কোন কাজে আসে না। কার্যত, দেশে এখন যারা গাড়ীর চালক তাদের অধিকাংশের ন্যূনতম শিক্ষাও নেই। ফলে বোঝা যায়, এরা ওস্তাদ ধরেই চালনা শিখেছে। তারা মূলত বাস-ট্রাকের চালকদের কাছ থেকেই গাড়ী চালনা শিখেছে। ফলে পথচারী তাদের কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং কে কতজন মানুষ মেরেছে সেটাই যোগ্যতার সার্টিফিকেট হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনার কথা বারবার বলা হলেও এ পর্যন্ত পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি তো হয়নি বরং আরো দিনদিন অবনতি হচ্ছে। পুলিশের হিসাব মতে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ২ থেকে তিন হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৬ থেকে ৭ হাজার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, এ সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি ২০ হাজারেরও বেশি। হিসাব-পরিসংখ্যান যাই হোক সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে, মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।
সম্প্রতি একটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলার রায় প্রকাশিত হবার পর তার প্রতিবিধানে স্থানীয় বাস চালকরা ধর্মঘটে রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় গায়ের জোরে সবকিছু করার এক ধরনের ব্যাধিতে তারা ভুগছে। এই প্রবণতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। দেশে রাজনৈতিক দল কোন কর্মসূচী দিলে তা বানচাল করতে সরকারের বিভিন্ন মহলের তৎপরতার কোন অন্ত থাকে না। অথচ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। দুর্ঘটনার ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর করার কিছুই থাকে না। যারা চলে যায় তারাতো চলেই যান, যারা বেঁচে থাকে তাদের সারা জীবনই অন্যের করুণা এবং দয়ার দিকে হাত পেতে থাকতে হয়। তারা জাতীয় বোঝায় পরিণত হয়। এ থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারটি আপতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও কার্যত সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। সড়কসহ সারাদেশে এ ধরনের ও অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু রোধে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন