এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : চলতি অর্থ বছরে বিজ্ঞাপন খাতের কর দাবির পরিমাণ এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। যা গত অর্থ বছরে ছিল ৭০ লাখ। আগের চেয়ে এবার আড়াই গুন কর ধার্য করা হলেও নতুন গেজেট অনুযায়ী বিজ্ঞাপন খাতে কর ধার্য করার কথা তিন কোটি টাকারও উপরে। কিন্তু এত কম কেন নির্ধারণ করা হল এর কোন জবাব নেই খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি)’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। বাকী টাকা কেসিসি’র রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ করা হবে এমন লক্ষ্য নিয়েই কম কর দাবি করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনিভাবে অন্যান্য খাত থেকেও আয়ের সিংহভাগ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব খাতে জমা না হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। অর্থাৎ খাত বাড়লেও বাড়েনি কেসিসি’র আয়ের খাত। এমন পরিস্থিতিতে কর্মকাÐ চালাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে কেসিসি’র বর্তমান প্রশাসনকে।
কেসিসি’র রাজস্ব বিভাগের সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ট্রেড লাইসেন্স শাখা থেকে এক কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার এবং যানবাহন শাখা থেকে মোট আয় হয় ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ট্রেড লাইসেন্স ও যানবাহন শাখার এমন কম আয় অনেকটা সন্দেহের জন্ম দেয় বলেই সম্প্রতি কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার পদে রদবদল হয়েছে। বিজ্ঞাপন খাত থেকে আয়ের সিংহভাগই গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটে চলে যাওয়ার বিষয়টিও অনেকটা ওপেন সিক্রেট। লাইসেন্স যানবাহন শাখার একজন মাষ্টাররোল কর্মচারী প্রতি বছর সাইনবোর্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তসরুফ করেন বলেও জনশ্রæতি রয়েছে। যার একটি বড় অংশ চলে যায় কেসিসির রাজস্ব বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কোন কোন বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপন আঁতাত করে রেট অনুযায়ী অর্থ নিয়ে কেসিসি’র রাজস্ব খাতে কম টাকা জমা দেয়া হয়।
এমন অভিযোগ সরাসরি স্বীকার না করলেও কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, এ সংক্রান্ত একটি ফাইল আটকে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আরিফ নাজমুল হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম শুরুই করা হয়নি। তদন্ত করা হলে কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ ফেঁসে যেতে পারেন বলেই তা লাল ফিতায় বন্দি করে রাখা হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
এদিকে, এ বছরের মার্চ মাসে ট্রেড লাইসেন্স ফি কয়েক গুন বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে তা কিছুটা পরিবর্তন করা হলেও বর্ধিত রেট অনুযায়ী ইতোমধ্যে অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স করেছেন। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেন অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে। অবশ্য এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, যেহেতু এখন ফেরত দেয়ার কোন সুযোগ নেই সেহেতু আগামী বছরের নবায়নের সময় সমন্বয় ছাড়া কোন উপায় নেই।
২৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত মেয়র বরাবর বিগত পাঁচ বছরের খাত ভিত্তিক আয়ের হিসাব চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয় একজন সাংবাদিকের পক্ষ থেকে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র কেসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে তথ্য দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, তথ্য অধিকার আইনের ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর ২ ফেব্রæয়ারি পাঁচ দফা তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সরবরাহের নিয়ম থাকলেও ১৪ দিন পর অর্থাৎ ১৬ ফেব্রæয়ারি বিকেলে দেয়া হয় অপূর্ণাঙ্গ তথ্য। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফ নাজমুল হাসান ছাড়াও সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার, ট্রেড লাইসেন্স ও যানবাহন শাখার লাইসেন্স অফিসার স্বাক্ষরিত তথ্যে পাঁচটির মধ্যে তিনটিই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত খাতভিত্তিক আয়ের হিসাব সম্পর্কে কেকিসির হিসাব শাখায় যেতে পরামর্শ দেয়া হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পরদিন থেকে একাধিকবার যাওয়ার পরও তিনি এ পর্যন্ত কোন তথ্য দিতে পারেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন