মধুপুর (টাংগাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : মধুপুরের অরণখোলা রেঞ্জের সামাজিক বনায়নের প্লট বন্টনের জন্য সরকারী নির্দেশ ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে আছে। ৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সামাজিক বনায়নের প্লট ভাগের কাজ। কালক্ষেপন করছে অরনখোলা রেঞ্জের কর্তাব্যক্তিরা। বনায়নে লাগানো হচ্ছে বিদেশী প্রজাতির গাছ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। স্থানিয় জনসাধারণ সরকারি বিধি অনুযায়ী প্লট ভাগের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, সামাজিক বিধিমালা-৪এর সংশোধন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ১০ এপ্রিল ২০১২ সালে প্রধান বন সংরক্ষক কার্যালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে সামাজিক বিধিমালা-৪ এর ২০-এর উপবিধি (৩) সংশোধন করে প্রতি হেক্টরে ১ জন উপকারভোগীর পরিবর্তে এক একরে ১জন উপকারভোগী নিয়োগ করার বিধান চালু করে। এ বিধান বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক বনাঞ্চলসমুহকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ১১৬৭নং স্মারকে জেলার সকল বন অফিসকে নির্দেশটি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেন। এ চিঠি প্রেরণের দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও অরণখোলা অফিসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন ভ্রæক্ষেপ না করে শুধুমাত্র প্লট নবায়ন না করে বসে আছেন। এভাবে সময় পার করার মধ্যে বিষয়টি সবাই টের পেয়ে যায়। সামাজিক বনায়নের অংশীদারিরা ভাগ ঠেকাতে নানা তৎপরতা শুরু করে। অপর দিকে প্লট বঞ্চিতরা ভাগের দাবিতে দৌড় ঝাপ শুরু করে। এতে দেখা দেয় বিরুপ পরিবেশ। স্থানীয় জনসাধারণ প্লট ভাগের দাবিতে ফুঁসে ্ওঠেছে। উপকার ভোগীরা ভাগ বন্ধ করতে ৩ শতাধিক উপকার ভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলে প্লট ভাগকে বাঁধাগ্রস্থ করতে নানা তৎপরতা চালিযে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরাঘুরি ও তদবির শুরু করেছে।
সরজমিনে মধুপুর শহর থেকে ৮কি. মি. উত্তরে অরণখোলা রেঞ্জে গিয়ে কথা হয় সামাজিক বন কমিটির সদস্য কমিউনিটি ফরেস্ট ওর্য়াকার ও বিট কর্মকর্তা আমিনুল হকের সাথে। বিট কর্মকর্তা জানালেন অরণখোলা রেঞ্জের অধীনে জমির পরিমাণ রয়েছে ৯৬৭ একর। তাদের দখলে রয়েছে ৮৯৩ একর। এর মধ্যে সামাজিক বনায়ন রয়েছে ৭০০ থেকে ৭২০ একরের মতো।
সেগুন বাগান রয়েছে ৫০ একরের মতো। তিনি জানালেন জবর দখলে রয়েছে ৭৪ একর। রেঞ্জ অফিসের ৩ দিকে বাড়ি ঘর, বাজার, পাকা বাড়িসহ নানা প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে গড়ে উঠছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। সামাজিক বনের প্লটের মধ্যে বাড়ি তোলে বিশাল জমি দখল করেছে ত্ াবিট অফিসের সামনেই। তবুও কর্তা ব্যক্তিদের চোখে পড়ে না।
জবর দখলকৃত জমিতে প্রথমে মাটির দেয়াল, খুপড়ি ঘর তোলে জমি দখল জায়েজ করে। ধীরে ধীরে বন অফিসের কাছাকাছি ্ও অফিসের সামনে পাকা বিল্ডিং রাতারাতি উঠছে তবুও এদিকে কর্তা ব্যক্তিদের কোন নজর নেই। জবর দখলকৃত জমি আবার কার্টিজমূলে উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে জবর দখলকারীরা উৎসাহিত হয়ে কর্তাব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করে চলছে। বনবিভাগ জবর দখলকারীদের উচ্ছেদের জন্য কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। উ”্ছেেদর জন্য কোন নোটিশ পর্যন্ত জারি করা হয়নি আজ পর্যন্ত। স্থানীয় জনগণ মনে করেন এভাবে চলতে থাকলে ৭৪ একর জমি চিরতরে ভ‚মি খেকোদের কব্জায় চলে যাবে। তখন উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। জবর দখল, পাকাবাড়ি নির্মাণ কাজে বন বিভাগের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন।
অপরদিকে, স্থানীয় বনবাসী হতদরিদ্র, গারো, কোচ, ভূমিহীনরা সাংবাদিকদের জানান সরকারি বিধান মতে সামাজিক বনায়ন এক হেক্টরের পরিবর্তে এক একর করে স্থানীয় দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার কুডাগাছা গ্রামের জামাল উদ্দিন (৪০) জানান, এ রেঞ্জে সামাজিক বনায়নের প্রায় ২০টি প্লট রয়েছে বহিরাগতদের। যাদের বাড়ি বন থেকে ১০-২০মাইল দূরে। আবার একই পরিবারে ৪-১০টি পর্যন্ত প্লট আছে। এভাবে নামে বেনামে ও বহিরাগতদের অর্ধশত প্লট বাতিলের দাবি জানান। পিরোজপুর গ্রামের কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও ফরেস্ট ওয়ার্কার কামরুজ্জামান (৩৫) জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমি কমছে। ফলে ভূমিহীন, গরীব, অসহায় ও আদিবাসীরা আরোও নিঃস্ব হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক হেক্টরের পরিবর্তে এক একর করে উপকার ভোগী নিয়োগকরার দাবি জানান।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা সাংবাদিকদের জানান, সরকার আমাদের নামে ৩০ বছরের জন্য সামাজিক বনায়নের প্লট দিয়েছে। এই প্লট কেউ নিতে পারবেনা। পরিপত্রে ভাগের কথা স্পষ্ট উল্লেখ নেই।
অরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন জানান, আগে সামাজিক বনায়নের প্রতি মানুষের চাহিদা কম ছিল।
এখন চাহিদা বেড়েছে। বনায়নের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন ও পুরাতন সামাজিক বনায়নের প্লটগুলো এক হেক্টরের পরিবর্তে এক একর করে দেওয়া হবে। পুরাতন প্লটগুলো এক হেক্টরের পরিবর্তে এক একর করে নবায়ন করা হবে। এতে বিধবা, ভূমিহীন ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ স্থানীয়দের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, ২০১০-২০১২ সালে বন বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধন অনুযায়ী এক হেক্টরের পরিবর্তে এক একর করে উপকারভোগী নিয়োগ করা হবে। পুরাতন প্লটগুলো এক হেক্টর এর পরিবর্তে এক একর করে নবায়ন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন