লাবিবা বেলা : পেশার ক্ষেত্রে বা পুরুষ বলে আলাদা কিছু নেই। সব পেশার নারীরা এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। নারীরা তাদের আপনগতিতে মেধা, বুদ্ধি আর যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। যে কোনো পেশায় প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে যাচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতার। এর ফলে সময়ের সাথে পাল্টে গেছে নারীদের মানসিক ও পেশার ধরনও। আবার এমন কিছু পেশা রয়েছে যা তাদের চলার পথ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ বেড়েছে।
নার্সিং
একটা সময় ছিল যখন এ পেশায় প্রশিক্ষণ নেয়ার কোনো সুযোগ আমাদের দেশে ছিল না। তবে বর্তমানে সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে- সেই সাথে পরিবর্তন হয়েছে এই পেশারও। দেশেই এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে পেশাটিতে যোগ হয়েছে ভিন্নমাত্রা নার্সরা এখন শুধু রোগীর সেবাই করেন না, এর পাশাপাশি তারা পরামর্শক হিসেবেই কাজ করে থাকেন। সব ধরনের সেবা দিয়ে রোগীকে ভালো করে তোলেন নার্সরা। নার্সরা সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মর্যাদার সাথে কাজ করেন। রয়েছে তাদের সামাজিক মর্যাদা। এই পেশাকে এখন আর ছোট করে দেখার কিছু নেই। বরং সমাজ ও পরিবারে মাথা উঁচু করে নারীরা কাজ করে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেদের আত্মমর্যাদা।
শিক্ষকতা
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আর এই পেশায় নিয়োজিতদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শুধু মানুষ গড়ার বললে ভুল হবে, তারা শুধু মানুষ গড়ার কারিগর নয়, শিক্ষকরা হলেন যুক্তিভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত জাতি ও সমাজ বিনির্মাণের কারিগর। শিক্ষকদের ওপর একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। বর্তমান শিক্ষকতা পেশায় নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীরা শিক্ষকতা করছেন সম্মানের সাথে। যেমন রয়েছে সুন্দর পরিবেশ, তেমনি রয়েছে আত্মমর্যাদা। সমাজে নিজের অবস্থান সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন এই নারীরা নির্দ্বিধায় কাজ করছেন। একদিক দিয়ে সমাজকে করছেন আলোকিত অন্যদিকে নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি নিজের অবস্থান শক্তভাবে গড়তে সক্ষম হচ্ছেন তারা।
সংবাদ ও উপস্থাপনা
বর্তমানে মেয়েদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক পেশা হচ্ছে সংবাদ পাঠ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নারীদের এ পেশার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। টেলিভিশনে যারা সংবাদ উপস্থাপক তাদের অবশ্যই স্পষ্ট ভাষায় পড়তে জানতে হয়। আপনি বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষাতেই সংবাদ পাঠ করুন না কেন পড়ার দক্ষমতা বাড়াতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হয় বিরাম চিহ্নগুলোর প্রতি। কারণ, এই চিহ্নগুলোর মাধ্যমে আপনাকে বুঝতে হবে সংবাদ পাঠ করার সময় আপনি কোথায় সামান্য বিরতি দেবেন অথবা জোর দিয়ে পড়বেন সংবাদ পাঠিকার অঙ্গভঙ্গি কখনোই যেন দর্শকদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখেন তারা। শুধু তাই নয়, সংবাদ উপস্থাপককে দায়িত্বশীল ও সময়জ্ঞান বোধ সম্পন্ন হতে হয়। যাতে করে সংবাদের পরবর্তীতে অনুষ্ঠানগুলো সঠিক সময়ে প্রচার করা যায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ রেখে কাজ করতে হয়। হতে হয় নিরপেক্ষা যেন দর্শক বিভ্রান্তিতে না পড়েন। সংবাদ পাঠ ও উপস্থাপনায় আগের থেকে অনেক বেশি নারী কাজ করছেন। তারা মেধা ও কর্মদক্ষতার বলে আজ এই অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বিউটিশিয়ান
মানুষ আর আগের মতো নেই। যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি সৌন্দর্য সচেতন হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে শহরে তো বটেই মফস্বলেও বাড়ছে বিউটিপার্লারের চাহিদা। এ বিউটিপার্লারগুলোতে সাধারণত মেয়েরাই কাজ করেন এবং মেয়েদের রয়েছে ব্যাপক কাজের সুযোগ। মেয়েরা যে শুধু ঘরে বসেই কাজ করবে এমনটা ভাবার অবকাশ এখন আর নেই। ঘরের কাজের পাশাপাশি তারা বিউটিপার্লারের কাজ করছেন অনায়াসে। এ ব্যবসায় যেমন রয়েছে সম্মান, তেমন আছে আয়। সব মিলিয়ে ভালোভেবে বেঁচে থাকার নতুন দিক এটি। অন্যের দ্বারে চাকরি খোঁজার চেয়ে বিউটিপার্লারে কাজ করা যায় স্বাধীনভাবে। এখানে কেউ বসিং করতে আসবে না। যখন খুশি আসা-যাওয়া করা যায়। নির্দিষ্ট করে কোনো সময় থাকে না। এর ফলে নারীরা তাদের ঘরের কাজ করেই এই পেশায় কাজ করতে পারেন।
কলসেন্টার
কল সেন্টারের মূল কাজ হলো গ্রাহকসেবা দেয়া। এটি দুভাবে দেয়া যায়- গ্রাহক সরাসরি প্রতিষ্ঠানে এসে যোগাযোগ করতে পারে আবার ফোন কলের মাধ্যমেও সেবা চাইতে পারেন। আবার কেউ কোনো কোম্পানির হয়ে কল সেন্টারে কাজ করতে পারেন। বলা যায় কল সেন্টারে কর্মীদের কাজই হলো গ্রাহকদের সেবা। ফলে যারা ফোন করবেন তাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করা আবার যে কোম্পানির হয়ে কাজ করবেন সেই কোম্পানির দরকারি তথ্যগুলো। গ্রাহকদের মাঝে পৌঁছে দেয়া তাদের কাজ। এই কাজে মেয়েদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
ফ্রন্টডেস্ক এক্সিকিউটিভ
আজকাল ছোট সেন্টার থেকে শুরু করে গ্রæপ অব কোম্পানি যে কোনো স্থানেই একজন ফ্রন্ডডেস্ক এক্সিকিউটিভ থাকেন। বেশিরভাগ অফিসেই ফ্রন্ডডেস্ক এক্সিকিউটিভ থাকেন। বেশিরভাগ অফিসেই ফ্রন্টডেস্ক এক্সিকিউটিভ হিসেবে নারীরা কাজ করেন। ফ্রন্টডেস্ক এক্সিকিউটিভের কাজ হলো অফিসে কোনো লোক এলে তার কথা শোনা এবং তাকে সাহায্য করা। অফিসের টেলিফোন রিসিভ করা। অফিসের কর্মকর্তা এবং অন্যান্য স্টাফের আসা-যাওয়ার সময় দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব। আবার কোনো অতিথি এলে ঝটপট তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হলো ফ্রন্টডেক্স এক্সিকিউটিভের কাজ। বর্তমানে এই কাজ সম্মানের সাথে করছেন নারীরা কাজের পরিবেশ ও সম্মানী বেশ ভালো। যার কারণে অন্যান্য কাজের থেকে এর প্রতি নারীদের আগ্রহ অনেক বেশি।
এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু
এ প্রজন্মের অনেকেই এখন এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। কেননা এ পেশায় একদিকে যেমন রয়েছে গøামার অন্যদিকে রয়েছে বিনা পয়সার মূলত মেয়েদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রুর মূল কাজ হচ্ছে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা। বিমানে ওঠা যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে নেয়া, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেয়া, প্রয়োজনে যাত্রীর লাগেজ সিটে পৌঁছে দিতে সাহায্য করা ইত্যাদি। এছাড়াও উড়োজাহাজে ফাস্ট এইড ঠিকঠাক রয়েছে কিনা, ইমার্জেন্সি ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে কিনা এবং বিমানের পরিচ্ছন্নতা যথাযথ রয়েছে কিনা এ বিষয়গুলোও দেখতে হয়। অন্যদিকে বিমান কোথায়, খন নামবে, কখন উড্ডয়ন করবে এ তথ্যগুলো যাত্রীদের জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কেবিনক্রুর। এয়ার হোস্টেসকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। তাই বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে। ভাষাগত দক্ষতা এবং উপস্থিত বুদ্ধি দিয়েই যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হয়। আবার কেবিনক্রুর দায়িত্ব হলো যাত্রীদের সমস্যার সমাধান দেয়া।
নারী যে সেক্টরে কাজ করুক না কেন প্রত্যেকটিতে নিজেদের মেধা, বুদ্ধি, কর্মদক্ষতা দিয়ে স্বীয় জায়গায় অবস্থান করছেন। বর্তমানে কোনো অবস্থাতেই নারীকে অবহেলা করা যাবে না। আগের তুলনায় সামাজিক মর্যাদাও তাদের বেড়েছে। ঘর ছেড়ে বাইরে সহজেই কাজ করতে পারছেন আজকের নারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন