শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই ঝরছে তাজা প্রাণ। অনেকেই হচ্ছেন পঙ্গু। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সড়ক-মহাসড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে। এনিয়ে গত ২৩ দিনে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ২৩০ জন। বেসরকারি হিসেবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ৪৭ হাজার। অন্য খবরে বলা হয়েছে, সারাদেশে চলাচলরত গণপরিবহনের ৩০ শতাংশ বাস-মিনিবাসই ২০ বছরের অধিক পুরানো। ৬১ শতাংশের বয়স ১০ বছরের উপরে। সেই সাথে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে নজিরবিহীনভাবে। বলা হচ্ছে, চাঁদাবাজদের অপতৎপরতা রোধে র‌্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। পুলিশ সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সংঘটিত পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধের সব উদ্যোগ হারিয়ে গেছে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকদের অদক্ষতা, অসতর্কতা, বেপরোয়াভাব ও সড়ক ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটি। বিশেষজ্ঞরাও বার বার এই অভিমত ব্যক্ত করে আসছেন। বাস্তবে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি চাঁদাবাজি পুরো পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে চাঁদাবাজি এখন অপ্রতিরোধ্য রূপ নিয়েছে। এক শ্রেণীর পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সম্মিলিত চাঁদাবাজচক্র। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে রয়েছে যানবাহন চালক মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। বলা হয়েছে, সন্ত্রাসীরা সরাসরি চাঁদা তুললেও পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদ নেয় শ্রমিক কল্যাণের নামে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা নেয় মাসোহারা হিসেবে। এছাড়াও রয়েছে, রেকার ভাড়া, রাস্তা ক্লিয়ার ফি, ঘাট ও টার্মিনাল সিরিয়াল পার্কিং ফি নামের অবৈধ চার্জ। এসবের ভাগাভাগি কার্যত নতুন কিছু নয়। কারা এসব অর্থের ভাগ পান কিভাবে তা  কাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়, সেসবও নানা সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। বর্ণিত চাঁদাবাজি প্রকাশ্যেই চলে। বিভিন্ন টার্মিনালে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, টার্নিং পয়েন্টে এসব চাঁদাবাজরা ওঁৎপেতে থাকে। এদের কোড নম্বরও রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই চাঁদার কারণে একদিকে যেমনি দক্ষ চালক রাখা যায় না, তেমনি গাড়ীগুলোর ব্যাপারেও মালিকরা যত্মবান নন। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসের কন্ডাকটরের যে বচসা চলে তার মূলে রয়েছে এই চাঁদাবাজি। বিষয়টি এখন গভীর উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা গণপরিবহন। এখাতে নৈরাজ্য বহাল থাকার অর্থ হচ্ছে জনদুর্ভোগ অব্যাহত থাকা। এই দুর্ভোগ লাঘবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ মহল যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বারবার বলে আসছেন সেগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া দরকার। বিশেষ করে রাস্তার বাঁক এবং সড়ক-মহাসড়কে হাটবাজার উচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকা নেয়া অপরিহার্য। চাঁদাবাজির ব্যাপারটি অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। এর সাথে কারা জড়িত তাও সংশ্লিষ্টদের না জানার কথা নয়। তারপরেও কেন এবং কি কারণে এর অবসান হচ্ছে না সেটিও বোঝা দায়। অন্যদিকে এসব অর্থ কোথায় যায় তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়রোধে এসব অবৈধ অর্থের উৎস কমিয়ে আনা জরুরি। পরিবহনের মান ও চালকদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিলে তার ইতিবাচক ফল সমাজে পড়তে বাধ্য। চালকদের নির্দিষ্ট সময় থাকলে তা দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে। এখাতে যাতে সন্ত্রাসী-ছিনতাকারীরা প্রবেশ করতে না পারে সেদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইন-কানুন যাই থাকুক তাকে সংশ্লিষ্ট কোন মহলই তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থার দ্রুত নিরসন প্রয়োজন। গণপরিবহন খাতকে জনদুর্ভোগ মুক্ত করতে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক এবং যত্মবান হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন