বিষয় : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
আছিয়া কামাল
সিনিয়র শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান)
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
অধ্যায় : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
সুমন তার বন্ধু রায়হানকে নিয়ে জাদুঘর পরিদর্শনে গেল। সেখানে তারা যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ প্রত্যক্ষ করে। তারা আরও প্রত্যক্ষ করে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, বাড়িঘর, দোকানপাট লুণ্ঠন ও পোড়ানো এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় নির্যাতনের ছবি। জাদুঘরে এসব দৃশ্য দেখে তাদের শরীর শিউরে ওঠে। কিন্তু দলিল স্বাক্ষরের একটি দৃশ্যের ছবি দেখে তাদের মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে।
ক) কোন তারিখে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়?
খ) যৌথ কমান্ড গঠন করা হয় কেন?
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতি কোন যুদ্ধকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) জাদুঘরে রক্ষিত দলিল স্বাক্ষরের দৃশ্যের ছবি দেখে রায়হান কেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক) উত্তর
৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
খ) উত্তর
বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য যৌথবাহিনী গঠিত হয়। মুজিবনগর সরকারের সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ পরিকল্পনার ফলে একাত্তরের মে মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবেলা শুরু করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র বন্ধু ভারত আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসলে, পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আরও সুদৃঢ় আক্রমণের জন্য ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একটি যৌথ কমান্ড গঠন করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। যৌথ কমান্ড গঠনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ দারুণগতি লাভ করে।
গ) উত্তর
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি অর্থাৎ পূর্ববাংলার মানুষের মনে স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়। বাংলার মানুষ সাহসী। এরা মানসিকভাবে পৃথিবীর অনেক জাতির চেয়ে শক্তিশালী। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন এর প্রমাণ বহন করে। বাঙালি জাতি ইতিহাসে বীরের জাতি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাস বিজয়ের ইতিহাস। উদ্দীপকে সুমন ও তার বন্ধু রায়হান জাদুঘরে গিয়ে যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতনের যে চিত্র দেখেছিল এই পরিস্থিতি দ্বারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নির্দেশ করে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ ও অসহায় মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। যার কারণে বাংলার মানুষ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। আর এ বিদ্রোহ অবশেষে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। যা বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ নামেও পরিচিত।
ঘ) উত্তর
অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের প্রিয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হঠাৎ করে জাগ্রত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে অনেক লাঞ্ছনা, বঞ্চনার ইতিহাস। পাকিস্তানি সরকার কখনো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেনি। যার ফলে বাংলার মানুষ কোনো দিনও তাদের শাসনকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে বাংলার মানুষ সর্বদাই পাকিস্তান সরকারের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মানুষ যখন অনেক কষ্টের মাধ্যমে কোনো কিছু অর্জন করে তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তদ্রƒপ সুমন ও রায়হান উদ্দীপকে ঘটনাটিতে নিজেদের দেশ শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার দলিলে স্বাক্ষরের দৃশ্যটি দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। কেননা তারা নিজেদের চোখে জাদুঘরে রক্ষিত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ও বর্বরতার ছবি দেখেছে। এর কারণে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল। বিজয়ের চিত্র মানুষকে বারবার আনন্দ দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা আর ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এ ইতিহাস আমাদের প্রত্যেকের জানা। যার কারণে উদ্দীপকে সুমন ও রায়হান জাদুঘরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দলিলের স্বাক্ষরের একটি ছবি দেখে তারা দুই বন্ধু আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল। আলোচ্য ছবিটি দেখে আমরা আমাদের অতীতের দুঃখ-বেদনা ভুলে যাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন