তারিন তাসমী : ঋতু বৈচিত্র্যপূর্ণ এ দেশে সারা বছর নানা উৎসব লেগেই থাকে। তার সঙ্গে রয়েছে জন্মদিন, গায়ে হলুদ ও বিয়ে প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান আকর্ষণীয় করে সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হয় ককশিট বা সোলার শিট। শোলায় নানা রঙ ডিজাইন, কাটিং আর বিভিন্ন ধরনের চুমকির কারুকাজ দিয়ে শোলারটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। এ শোলার দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে আরও বর্ণিল। আপনার মনেও টুকটাক আর্ট করার বাসনা থাকতে পারে। যদি তাই হয়, তবে কেন বসে থাকবেন। শুরু করে দিতে পারেন নিজ এলাকায় ককশিট ডিজাইনের ব্যবসা।
শুরু করবেন যেভাবে
চাকরির বাজারে চলছে এখন মহাআকাল। তাই অযথা সময় নষ্ট না করে আপনিও শুরু করতে পারেন এ ব্যবসা। দেখবেন হয়তো ককশিটের ব্যবসা করে আপনার জীবনের মোড় ঘুরেও যেতে পারে। এ ব্যবসায় পুঁজি যেমন কম তেমনি লাভজনকও বটে। প্রথমে ঘরে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে আপনি যদি ঘরে বসে না করতে চান তাহলে বাইরে কোথাও একটি ঘর ভাড়া করে শুরু করে দিতে পারেন। ব্যবসার প্রচারের জন্য কয়েকটি স্যাম্পল নিয়ে আপনার পরিচিতদের দেখাতে পারেন বা তাদের সহযোগিতায় বিভিন্ন মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়াতে পারেন। আবার প্রচারের প্রয়োজনে লিফলেট বিতরণও করতে পারেন।
পুঁজি
যারা কম পুঁজিতে ব্যবসা করতে চান, তাদের জন্য ককশিট বেশি উপযোগী। এ ব্যবসায় পুঁজিও কম লাগে এবং লাভও হয় ভালো। ককশিট ব্যবসার পুঁজি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সঙ্গে কথা বলেন, শাহবাগের মুন্না ভাই আর্ট গ্যালারির মুন্না।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে যদি কেউ বড় পরিসরে ব্যবসা করতে চান তাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতে হবে। পরিচিত হয়ে গেলে এর পরিসর বাড়াতে পারবেন, তার সঙ্গে পুঁজিও বাড়াতে হবে।
যা প্রয়োজন
এ ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ককশিট বা শোলার শিট। কারণ ককশিট ছাড়া এ ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ককশিটের সঙ্গে ব্রাশ, প্লাস্টিক রঙ, জল রঙ, আইকা অথবা গাম রঙ ব্যবহারের জন্য পাত্র এবং ককশিট ডিজাইন করে কাটার জন্য প্রয়োজন বড় সাইজের ব্লেড।
কাঁচামালের দাম
১০০টি ককশিটের পাইকারি দাম ৮০০০ হাজার টাকা। যা প্রতিটি শিটের দাম ৮০ টাকা দরে আনতে হবে। এ ছাড়া ব্রাশ ২ সেটের দাম পড়বে ৫০০ টাকা। রঙ প্লাস্টিক, ফ্লোরেশন, জল রঙগুলো ৯০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।
এ ছাড়া আইকা ২০০ টাকা, ককশিট কাটার জন্য ব্লেড ৫টি ১০০ টাকা এবং কৌটা বা পাত্র ৩০টি ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারেন। তবে ১০০টি ককশিট একসঙ্গে না কিনে অল্প করতে কিনতে পারেন। এই ককশিট পাওয়া যায় ঢাকার আনন্দবাজারে। আর অন্য জিনিসপত্রগুলো কিনতে পারবেন নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট থেকে। তবে গাউছিয়া মার্কেটে রঙ বিক্রি হয় পাউন্ড হিসেবে। আর পাউন্ড প্লাস্টিক রঙের দাম পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এর সঙ্গে মিকশ্চার হিসেবে ২ থেকে ৩টি রঙের ফ্লোরেসন্ট কিনতে পারবেন। এটা আবার তোলা হিসেবেও কেনা যায়। এর দাম পড়বে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
সময় ও শ্রমিক
যে যত বেশি দক্ষ সে তত বেশি ককশিট ডিজাইন করে কাটতে পারবে। এ বিষয়ে শাহবাগের সখিনা আর্ট গ্যালারির হাবিব জানান, যারা কম দক্ষ তারা দিনে ১০ থেকে ১২টি ককশিট ডিজাইন করতে পারবেন এবং যারা দক্ষ ডিজাইনার তারা দিনে ২০ থেকে ২৫টি ডিজাইন করতে পারবেন। এ ব্যবসা শুরু করতে প্রাথমিকভাবে তেমন একটা শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে না। আস্তে আস্তে যখন অর্ডার বাড়তে শুরু করে তখন আপনাকে দুই-তিনজন শ্রমিক নিতে হবে। এ ব্যাপারে হাবিব আরও বলেন, প্রথমে আমি দুজন কর্মচারী নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তারা আমার সঙ্গে ছয় মাস কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেরাই এখন দোকান দিয়ে বসেছে। তবে যারা এই ব্যবসা করতে আগ্রহী তারা যেন দু-একজন শ্রমিক বেশি রাখেন। কারণ কাজ শেখা শেষ হলে যে কোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে। বছর জুড়ে নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে আমাদের দেশে। যেমন বিভিন্ন দিবস, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান ককশিট দিয়ে সাজানোর জন্য অর্ডার পাওয়া যায়। তবে শীতকালেই বেশি কাজ পাওয়া যায়। একটি বড় ককশিট দিয়ে জন্মদিন বা গায়ে হলুদের চারটি ক্যানভাস তৈরি করা যায়। প্রতিটি ককশিট তৈরি করতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর একটি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর এ থেকে লাভ থাকে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন