প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মেরামতের অভাবে দিনের পর দিন বেহাল পড়ে আছে সড়ক ও জনপথের বেশিরভাগ সড়ক। সূত্র উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, সওজ’র অধীন সারাদেশে ১৯ হাজার ৩৮৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে বেহাল রয়েছে ১১ হাজার ৮২৬ কি.মি. সড়ক। গতবছর চার মাসে সড়ক-মহাসড়ক প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ করে সওজ’র এইচডিএম সার্কেল। এর প্রতিবেদনে সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতের জন্য চলতি অর্থবছরে ৯ হাজার ১৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, সওজ’র ৬ হাজার ২০৭ কিলোমিটার বা ৩৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ বা খুবই খারাপ। জেলা সড়কগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সওজ’র প্রধান প্রকৌশলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সওজ’র নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নির্ধারিত সময় পরপর সারা দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রণীত প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, বর্ষার আগে বেশিরভাগ সড়ক ব্যবহারোপযোগী করে তোলা যাবে।
বলা যায়, বেহাল সড়ক অবস্থা একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ক’দিন পরপরই এ ধরনের খবর মিডিয়ায় স্থান পাচ্ছে। দেখা যায়, খবর প্রকাশিত হবার পর সংশ্লিষ্টদের নানা তোড়জোড়ে দেশের কোন কোন জায়গায় শুরু হয়, আবার শুরু হতে না হতেই এসব সড়কের বেহালদশার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ঈদ ও বর্ষার আগে সড়ক মেরামতের যেন হিড়িক পড়ে যায়। যেন সেময়ই সড়ক মেরামতের মওসুম। সারা বছর এ নিয়ে কোন খবর থাকে না। প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং মেরামতের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই গলদ রয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড.সামসুল হক একটি দৈনিককে বলেছেন, শুধু অর্থব্যয় করেই সড়ক-মহাসড়কের উন্নতি করা সম্ভব নয়। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ধারণাটা খুব খারাপ। প্রতিবছর বর্ষার পর রাস্তা সংস্কারে যেতে হয়। পৃথিবীর আর কোথাও এই সংস্কৃতি নেই। সেখানে ১০/১২ বছর পর সংস্কার হয়। আমাদের দেশে বছর বছর এখাতে অর্থব্যয় হচ্ছে অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এর কারণ পানিবদ্ধতা এবং ওভারলোডিং। বাস্তবত, এটি যে কেউ প্রত্যক্ষ করেছেন যে, আমাদের দেশের সড়কগুলো যে মাত্রায় লোড বহনের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে- এখন ট্রানজিটের কারণে ভারতীয় অধিক পরিবহনে সক্ষম বাস ও ট্রাকগুলো চলাচলের কারণে অনেক সড়ক সহজেই বেহালদশায় পতিত হচ্ছে। অন্যদিকে সড়ক মেরামতের ঠিকাদারিতে নানা দুর্নীতি বিরাজ করছে। সেক্ষেত্রে কাজ হয় শুধু কাগজে-কলমে। এসব বাস্তবতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাস্তবে পরিস্থিতির কোন ইতিবাচক পরিবর্তন তো হয়নি, কোন লক্ষণ রয়েছে বলেও মনে হয় না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। অন্যদিকে সড়কের বেহালদশার জন্য দেশের পরিবহনেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে পরিবহন খাতে প্রচুর পরিমাণে কর দিতে হয় অথচ সড়কের উন্নয়নে কোন কার্যকর নজর নেই।
প্রতিবেশীর বৈরী পানিনীতির কারণে দশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন মূলত সড়ক নির্ভর। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতিতে সুনির্দিষ্ট অবদান রাখছে। সেই সাথে রয়েছে দেশের কর্মসংস্থানের সম্পর্ক। একথা বহুবার বলা হয়েছে যে, দেশের ত্রুটিপূর্ণ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বাস্তবে দেখা যায়, কোন ঘটনা ঘটলে তখন সংশ্লিষ্টদের বেশ তোড়জোড় শুরু হয়। তারপর আর খবর থাকে না। সড়ক ব্যবস্থাপনাকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্যও এ পর্যন্ত সুপারিশ কম হয়নি। এসব খাতে অর্থও কম ব্যয় হচ্ছে না। পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখাতে বিদ্যমান দুর্নীতির কারণেই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে বেশি দেরি নেই। ইতোমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া রিপোর্টেও অনকটা আগাম বর্ষার আভাস দিচ্ছে। গত বছরের বিবেচনায় বলা যায়, বর্ষা বেশি প্রলম্বিত হলে সেই সাথে সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা থাকলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা কি দাঁড়াবে তা বোধকরি ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। সে কারণে বর্ষা শুরু হবার আগেই দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর সংস্কারের দিকে নজর দেয়া জরুরি। আসলে ব্যাপারটি কোন মৌসুমভিত্তিক নয় বরং টেকসই চিন্তা থেকে বিবেচনায় নেয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট সকলে এব্যাপারে আন্তরিক ও উদ্যোগী হবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন