ফাল্গুনের সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মিরপুর, কালশীরোড, সায়েদাবাদ, তেজগাঁও, কাওরানবাজারসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাটে পানিবদ্ধতার কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভার মেট্রোরেলসহ আরো বিভিন্ন উন্নয়নের নামে সড়কগুলো কেটে ফেলার ফলে ভোগান্তির মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। সমুদ্রে নিম্নচাপের ফলে শুক্রবার রাতে বৃষ্টি নামে। এটিকে মওসুমের প্রথম বৃষ্টিও বলা যেতে পারে। সে বিবেচনায় সন্ধ্যার পর বৃষ্টি শুরু হবার কারণে ঘরমুখো মানুষের বিপত্তি চরমে ওঠে। বৃষ্টির পানিজমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো নারী-শিশু-বৃদ্ধ রোগীসহ অনেককেই। দুর্ভোগ আরো চরমে উঠেছে সড়ক ব্যবস্থাপনাও যানবাহন সংকটের কারণে। সুযোগ বুঝে একশ্রেণীর রিকসাচালক যেমন অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে, তেমনি রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যাত্রী নিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে।
রাজধনীতে চলমান দু’টি বড় প্রকল্প হচ্ছে ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেল প্রকল্প। গত ক’দিনে বৃষ্টিতে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর কাকরাইল থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং এবং মিরপুরের কালশী রোড এলাকায়। কাকরাইল থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং এলাকায় চলছে ফ্লাইওভারের কাজ। সেখানে খুঁড়ে একাকার করে ফেলা হয়েছে। বেহাল সড়কে পানি জমে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, তারা গতবছর ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা মেরামত করে দিয়েছেন। ডিপিসিটি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়ে সড়ক খুঁড়েছে। সিটি কর্পোরেশন ঐ খোঁড়া অংশ মেরামত না করায় এ দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রকৌশলী বলেছেন, আমরা ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের দায়িত্ব ফ্লাইওভার প্রকল্পের জন্য এলজিইডিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারাই দেখাশোনা করছে। মিরপুরের পল্লবী থেকে মেট্রোরেলসহ আরো অনেক সংস্থাই নিয়মিতই খোঁড়াখুঁড়িতে রয়েছে। এ এলাকায় পুরো সড়কেরই এখন বেহাল দশা। তবে কালশী রোডের অবস্থা ভিন্নতর। নির্মাণগত ত্রুটির কারণে এই সড়কের মধ্যবর্তী এলাকা এবং সাংবাদিক আবাসিক এলাকা বৃষ্টির পানিতে অনেকটাই তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানি আর ড্রেন সুয়্যারেজের পানি জমে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। হঠাৎ বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনেক প্রাইভেটকারসহ হালকা যান রাস্তাতেই অচল হয়ে গেছে। এসব গাড়ীর কারণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজধানীতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চলা উন্নয়ন কাজই এধরনের সংকটের মূল কারণ। একদিকে কাজে কোন সমন্বয় নেই, অন্যদিকে চলমান বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজে নিরাপত্তা ও সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়না। বলা দরকার, এসব উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি নিয়ে নানাভাবে হাতবদল হবার কারণে যাদের দেখভাল করার কথা তারাও এক ধরনের অসহায়ত্বে ভুগছে। সামনে বর্ষা মওসুম, ফলে এখনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
নগরবাসীর এই দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। এনিয়ে নানা কথা বলা হলেও দেখাযায়, পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়না। গত কিছুদিন থেকে নগরীতে উন্নয়নমূলক কাজের হিড়িক শুরু হয়েছে। মূলত ড্রেন, সুয়্যারেজ এবং আধুনিক সড়ক নির্মাণই হচ্ছে এ উন্নয়নের মূল বিষয়। বাস্তবে দেখা গেল এসব কাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে নগরবাসী সুফলের চেয়ে ভোগান্তিরই বেশি শিকার হচ্ছে। কার্যত প্রতিটি কাজ ওয়ার্কঅর্ডার থেকে শুরু করে কতদিনে তা শেষ করতে হবে তা নির্দিষ্ট করা থাকে। বাস্তবে এই নির্দেশ সংশ্লিষ্টরা তোয়াক্কা করেনা। এই না করার পিছনে মূলত ক্ষমতার প্রভাব কাজ করে আসছে। দেখা যাচ্ছে প্রকৃত এবং সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকার কারণে সড়কগুলো বেহাল দশায় উপনীত হয়েছে। সকলের মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি এবং উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাবার আহ্বান নগরবিদরা অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। বর্ষার আগেই সড়কের বেহাল দশার অবসান এবং পানিবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করণের সকল ব্যবস্থা গৃহীত হবে, এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন