শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফাল্গুনী বৃষ্টির রেকর্ড ভঙ্গ ‘যদি বর্ষে ফাল্গুনে চিনা কাউন দ্বিগুনে’

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গত শুক্রবার রাতের ফাল্গুনী বৃষ্টিপাত বিগত আট বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ফাল্গুন মাসে আষাঢ়ী ঢলের মতো একাধারে আড়াই ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এই বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭১.৪ মিলিমিটার।
বিগত আট বছরের ফাল্গুন মাসগুলোতে এ ধরনের বৃষ্টিপাতের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ২০০৯ সালে সারা ফাল্গুন বা মার্চ মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৬.৬ মিলিমিটার। ২০১০ সালের রেকর্ড অনুযায়ী বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০.০ মিলিমিটার, ২০১১ সালের চারদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৬৯.০ মিলিমিটার, ২০১২, ২০১৩ সালে ফাল্গুন বা মার্চে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। ২০১৪ সালে সারা ফাল্গুন মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬.০ মিলিমিটার। ২০১৫-২০১৬ সালে ফাল্গুন মাসে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। ২০১৭ সালের গত শুক্রবার ২৩ ফাল্গুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭১.৪ মিলিমিটার। কৃষি বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ১১ ফাল্গুন মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত হয় নরসিংদীতে।
নরসিংদী জেলার মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা ও শিবপুরে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০ মিলিমিটার। তিন-চারদিন পূর্বে কৃষি বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ০.৮ মিলিমিটার। গত শুক্রবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নরসিংদী জেলার ছয় উপজেলার গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ৪৭ মিলিমিটার।
খনার বচন রয়েছে ‘যদি বর্ষে ফাল্গুনে, চিনা কাউন দ্বিগুনে’। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ খনার এই বচন বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা এক অতি প্রাচীন কৃষিতত্ত¡। খনার বচন অনুযায়ী ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হলে মৌসুমি ফসল হিসেবে চিনা ও কাউন দ্বিগুন উৎপাদিত হয়। চিনা ও কাউন একটি প্রাকৃতিক শস্য। নবোপলীয় যুগে ধানের পাশাপাশি এই শস্য চাষাবাদের আওতায় আনে মানুষ। কাউন ছিল ধানের পরে দানাদার খাদ্য।
বাঙালিরা যুগযুগ ধরে কাউনের চাল দিয়ে জাউ রেধে খেতো। চিনা আরেকটি দানাদার শস্য। এই চিনার দানা দিয়ে খই ভেজে গুড় দিয়ে মুয়া তৈরি করে বাঙালিরা খেতো। তাছাড়া এই চিনার খই-দই-গুড় দিয়ে মেখে খেতো। এখনো এই চিনা এবং কাউন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে এর চাষাবাদ কমে গেছে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্পসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক লতাফত হোসেন জানিয়েছেন, কৃষি তাত্তি¡কদের মতে খনা তার বচনে যদিও চিনা ও কাউনের দ্বিগুন ফলনের কথা বলেছে, তথাপি এই বচনের মাধ্যমে সকল মৌসুমি ফসলের দ্বিগুন উৎপাদনের কথাই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বর্তমান মৌসুমে প্রধান ফসল হিসেবে রয়েছে ইরি-বোরো। শতভাগ সেচ নির্ভর এই ইরি-বোরো ধানের মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়। বলতে গেলে ফাল্গুন বা মার্চ মাসের বৃষ্টিপাত হয়ই না। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বা টর্নেডোর সাথে কিছু ঝটকা বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই সময়ে বৃষ্টির প্রয়োজন মিটাতেই ইরি-বোরো মৌসুমে কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম সেচের উপর ভিত্তি করেই ইরি-বোরো ধান ঘরে উঠানো হয়। এ বছর প্রাকৃতিক বা ফাল্গুনী বৃষ্টিপাতে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক উপকার সাধিত হবে। উপকার সাধিত হবে চিনা ও কাউনের।
এ ছাড়া মৌসুমি শাকসব্জী, ফলমূলের ব্যাপক উপকার সাধিত হবে। চালকুমড়া. শশা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বেগুন, পুঁইশাক, ডাটা, বরবটি, কাঁচামরিচ, লেবু, আম, জাম, কাঠাল, লিচু, কলা, পেপে, জামরুল, গোলাপজাম, লটকন, পেয়ারা, আতাফল, শরিফা, বাঙ্গি, তরমুজ ইত্যাদি ফলের ব্যাপক ফলন ঘটবে। ফাল্গুনী বৃষ্টি কৃষি ও কৃষকের জন্য এক বিশাল নেয়ামত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন