শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সুন্দরবনে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বনদস্যুরা

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোস্তফা শফিক কয়রা (খুলনা) থেকে : সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে থাকা নৌ-দস্যু ও বনদুস্যুরা গোটা সুন্দরবনে রামরাজত্ব কায়েম করে জেলে-বাওয়ালী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সর্বস্ব লুটে নিলেও কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের মাথা ব্যথা নেই। অপর দিকে সুন্দরবনের পার্শ্ববতী লোকালয়ের মানুষ বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের নিঃক্রিয়তার কারণে রাতের ঘুম হারাম করে চলেছে ।
জানা গেছে,  খুলনা জেলার সুন্দরবন অঞ্চলের ৮৫% মানুষ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। কেউ ধরে মাছ, কেউ ধরে কাঁকড়া, আবার কেউ বা মধু সংগ্রহ করে। এছাড়া সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী লোকালয়ের মানুষেরা জীবন বাঁচাতে সকালে নৌকা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে সংসারের খরচ যোগাতে জাল নিয়ে গভীর বনে ঢুকে সারাদিন যা মাছ হয় তাই বিক্রী করে সন্ধায় বাড়িতে ফেরে। আবার অনেকে না ফেরার পথেও চলে যায়।
এমনি একটি পরিবারের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিন আনে দিন খায় ৫নং কয়রার এক জেলে বলেন, ৫/৬টা ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের ভাত জোগাতে আমরা সকালে বনে ঢুকি আর সন্ধ্যায় ফিরে আসি। তিনি বলেন, ভাল মাছ হলে দু’পয়সা সামনে থাকে। আর মাছ না হলে ২/৪ মন শুকনা কাঠ কেটে ১শ’ টাকা করে বিক্রী করে সংসার চালাতে হয়। বন বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ফরেস্টারদের যাওয়ার সময় ২০ টাকা দিয়ে যেতে হয়। তবে বড় অফিসারদের কাছে ধরা পড়লে হাতে পায়ে ধরে ফিরে আসি। এভাবে লোকালয়ে থাকা অসহায় পরিবারেরা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছে। কিন্তু বনদস্যু ও বন বিভাগের সম্পর্কে জানতে চাইলে মৎস্য ব্যবসায়ী বারিক সানা বলেন, ফরেস্টারদের মত হারামী সুন্দরবনে আর নেই। তিনি বলেন বাঘ ও বনদস্যুদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তারা ক্ষমা করে। কিন্তু বনে যারা চাকরি করে ওদের কোন ধর্ম নেই। তিনি আরও বলেন, দু’দিন আগে এক অসহায় পরিবার ১০ বছরের ১টি ছেলে ও তার মা জাল টানা দিচ্ছিল, হঠাৎ করে ফরেস্টাররা সেখানে গিয়ে টাকা চায়। কিন্তু ওরা ২০ টাকা দিতে পারেনি বলে ঐ ছেলেটার গায়ে জড়ানো গামছা খুলে নেয়। দুদিন পর অফিস থেকে ২০ টাকা দিয়ে ঐ গামছা ফেরৎ নেয়। ছেলেটির মা এ সংবাদদাতাকে বলেন, দুদিন পেটে ভাত ছিলনা, সকালে বাকীতে দোকান থেকে ১০ টাকার মুড়ি কিনে বনে ঢুকি। ক্ষুধার জ্বালায় আমার ছেলেটি কাঁপছে। এর পরও তারা আমার আকুতি শুনেনি।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, গোটাবন এখন জোনাব ও মামুন বাহিনী ও সোহাগ বাহিনী চষে বেড়াচ্ছে। নামী-দামী অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে চ্যালেঞ্জ করে মানুষ জিম্মি অব্যহত রয়েছে।
অথচ বন বিভাগ এ সব বনদস্যুদের সঠিক সন্ধান না দেওয়ায় র‌্যাব, কোস্টগার্ড দস্যু দমনে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার এসব দস্যুদের রাত কাটে যে কোন বনটহল ফাঁড়ি অথবা তাদের নিরাপদ স্থানে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় একজন মৎস্য ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, কিছুদিন বনে ব্যবসা করে বনদস্যুদের সকল কর্মকা- জেনে বুঝলাম সুন্দরবনের দস্যুরা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। অফিসার ইনচার্জ কয়রা থানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে যখন সংবাদ পাচ্ছি তখনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনদস্যুদের সাথে মোকাবেলা করছি। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলার কাজের কৃতি স্বরূপ এবারও পিপিএম পদক পেয়েছি। আসা করি দুর্ণীতিমুক্ত সমাজ গড়তে আমার সব রকম সহযোগিতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন