শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত পোল্ট্রি শিল্প এখন নানামুখি সমস্যায় রয়েছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা  জাতীয় পরিষদের একজন সমন্বয়ক জানিয়েছেন, এই শিল্পটি এখন অভিভাবকহীন। নানা সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। কোন নিয়মনীতি না থাকায় এখাতের বড় কোম্পানীগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র খামারিরা। পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮ প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এসএম বুলবুল বলেছেন এই ব্যবসা কিছু লোকের হাতে বলে আমার মনে হয়। এ কারণে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ যেরূপ হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাবাদ দিলেও বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় পোল্ট্রি শিল্প অপরিহার্য। দেশে প্রাণীজাত প্রোটিনের বড় যোগানদাতা এই শিল্প। তথ্য অনুযায়ী ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ প্রোটিনের যোগান আসে পোল্ট্রি থেকে। বর্তমানে সপ্তাহে উৎপাদিত ডিমের পরিমাণ প্রায় সোয়া দুই কোটি। আর গোশতের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় সড়ে ১৮শ’ টন। এদিকে দেশের চাহিদার নিরিখে ২০২১ সালের মধ্যে এখাতে দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে চান পোল্ট্রি ব্যবসায়িরা। এই লক্ষ্য অর্জনে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এদিকে এ খাতে বিদেশি পুঁজি আসার কারণে দেশিয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে। বড় পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র খামারিরা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একজন বিশেষজ্ঞ দৈনিকটিকে বলেছেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবার জন্য পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে পোল্ট্রি খামারগুলোকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। এখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এদিকে এই শিল্পের বিদ্যমান সংকট নিরসন সম্ভব না হলে এখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয় বলেও তিনি মনে করেন। মনে করা হচ্ছে, এই খাতের বিনিয়োগে বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি  শক্তিশালী হবার যে ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে, সংকট নিরসন করে বিনিয়োগ করা না গেলে এটি সম্ভব নয়। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে এই খাত অসম প্রতিযোগিতার শিকার। বর্তমানে দেশে পোল্ট্রি শিল্পে ৭টি বিদেশি কোম্পানী বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৫টি ভারতের ১টি থাইল্যান্ডেরও ১টি চীনের। এগুলো দেশের পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৩০ ভাগ পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠেছে দেশি খামারগুলোর। বিদেশি অর্থপুষ্ট খামারগুলো বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ সুদে। আর আমাদের খামারগুলোকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হচ্ছে। এমনকি বিদেশি খামারগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্থানীয় বড় খামারগুলোকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে ঝরে পড়ছে ছোট খামারগুলো। একথা অনেকদিন থেকেই বলা হচ্ছে, দেশে উচ্চহারের সুদের কারণে কেবলমাত্র পোল্ট্রি শিল্পই নয় দেশের সবক্ষেত্রেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। দেশের বাজারে পণ্য মূল্য না কমার অন্যতম কারণ উচ্চহারের সুদ। বাংলাদেশে কেন সুদের হার এত বেশি এর কোন সদুত্তর কোন মহলে পাওয়া যায়নি। একথা সকল ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগ আগ্রহীরাই বলছেন বাংলাদেশে ব্যবসার বড় অন্তরায় উচ্চহারের সুদ।
অস্বীকারের উপায় নেই, ডিম, মুরগির গোশতসহ পোল্ট্রিতে উৎপাদিত প্রাণীজ আমিশই জনস্বাস্থ্যের প্রধান ভরসা। একসময়ে স্বাস্থ্যের জন্য রেডমিট প্রয়োজনীয় হলেও এখন চিকিৎসকরা রেডমিট খেতে নিরুৎসাহিত করেন। অন্যদিকে গরু খাসীর গোশতের দাম এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে দেশে গোশতের চহিদা কার্যত পোল্ট্রি শিল্পই পূরণ করছে। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে বৈষম্যসহ নানা কারণে এই শিল্প দেশীয় মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছে। এটি কোন বিবেচনাতেই কাক্সিক্ষত নয়। এ অবস্থার অবসান জরুরি। এই খাতের সাথে শুধু বিনিয়োগ নয় কর্মসংস্থানেরও সম্পর্ক রয়েছে। শুরু থেকে এখাত অনেক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবিলা করে আসছে। এখন বিকাশমান এই শিল্প যদি বিদেশীদের খপ্পরে চলে যায় তাহলে তা হবে দুঃখজনক। এই শিল্প রক্ষার্থে এবং সেই সাথে গ্রামীণ অর্থনীতির পুষ্টিবিধানে সংশ্লিষ্টরা সবকিছু করবেন এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
তারেক ১৪ মার্চ, ২০১৭, ২:৪৪ এএম says : 0
ঠিকই বলেছেন ।
Total Reply(0)
তারেক ১৪ মার্চ, ২০১৭, ২:৪৬ এএম says : 0
আপনার লেখা পড়ে খুবই ভাল লাগল
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন