নুরুল ইসলাম : পানির অপর নাম জীবন। অবশ্যই সেটা বিশুদ্ধ হতে হবে। না হলে ওটাই হতে পারে আপনার জীবন নাশের কারণ। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ সাধারণত গভীর নলক‚প থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু শহরের বাসাগুলোতে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে পানি পান করা গেলেও বাসার বাইরে কিংবা অফিস-আদালতে সেটা সম্ভব হয় না। তখন তাদেরকে দোকান থেকে বোতলের বিশুদ্ধ পানি কিনে খেতে হয়। দোকান থেকে বোতলের পানি ক্রয় করে খাওয়াটা খুব ব্যয়বহুল এবং অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসসহ প্রায় সবখানেই এখন খাওয়ার পানি মানেই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের শোধন করা জারের পানি। এটা যেমন সস্তা তেমনি সহজলব্য। ফলে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে। এতে করে এই সেক্টরে কর্মসংস্থানের একটি বিশাল জায়গা তৈরি হয়েছে। আপনিও সেই জায়গায় নিজের একটা স্থান করে নিতে পারেন। বিশুদ্ধ পানি সরবারহের মাধ্যমে তৈরি করতে পারেন আপনার আয়ের উৎস।
প্রাথমিক কাজ
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তথা পানি বিশুদ্ধকরণ ফ্যাক্টরির মালিক হওয়ার জন্য ন্যূনতম ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনার পুঁজি কম হয় তাহলে আপনি ফ্যাক্টরির মালিক হওয়ার পরিবর্তে পানির পরিবেশক হতে পারেন। এ জন্য আপনাকে প্রথমে পানির ফ্যাক্টরি আছে এবং পানি সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক হতে চাইলে তাদের সাথে চুক্তি করতে হবে। চুক্তির জন্য পরিবেশকের ট্রেড লাইসেন্স, নাম-ঠিকানা সংবলিত প্যাড এবং পানির জার সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা তথা সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। তবে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন যে এলাকায় ব্যবসা করবেন সেখানে আপনার পরিচিতি।
যেভাবে শুরু করবেন
ফ্যাক্টরি মালিকের সঙ্গে চুক্তি ও কাগজপত্র প্রস্তুত করার পর এলাকার বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান, রেস্টুরেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, চা দোকানে গিয়ে পানির চাহিদা এবং অর্ডার নিতে হবে। এরপর জার কিনতে হবে। আপনার পুঁজি ও আপনি যে এলাকায় ব্যবসা করবেন সে এলাকার পানির চাহিদার উপর নির্ভর করে জারের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। তবে প্রথম দিকে ৫০টি জার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এরমধ্যে ২৫টি জার দিয়ে ব্যবসা চলবে, আর বাকি ২৫টি জার ফ্যাক্টরি থেকে পানি আনার কাজে থাকবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের জার পাওয়া যায়। প্রতিটি পেট জারের দাম পড়বে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, আর পিসি জারের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পেট এবং পিসি জারগুলো ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, নিউমার্কেট, গুলিস্তান ইত্যাদি এলাকায় পাইকারিভাবে পাওয়া যায়। এবার গ্রাহকদেরদের কাছে পানি সরবারহের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ভ্যান কিনতে হবে। সাধারণত ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় এই ভ্যানগুলো পাওয়া যায়। সর্বশেষ আপনাকে ফ্যাক্টরি থেকে পানি আনা নেয়, সংরক্ষাগার দেখাশুনা, গ্রাহকদের কাছে পানি সরবারহসহ সার্বিক কাজের জন্য কিছু কর্মচারীও নিয়োগ দিতে হবে।
পুঁজি
পানির জার ক্রয়, সংরক্ষণাগার ভাড়া নেয়, ভ্যান ক্রয়সহ প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা হলেই আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে আপনার পুঁজি, ব্যবসার পরিধি ও এলাকার চাহিদার উপরে এটা নির্ভর করবে।
কিছু মৌলিক বিষয়
এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনার জন্য কিছু মৌলিক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, পানির সঠিক মান নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সঠিক সময়ে গ্রাহকদেরকে পানি সরবারহ করতে হবে। তৃতীয়ত, কোন জারে কোন সমস্যা পাওয়া গেলে সাথে সাথে সেটা পরিবর্তন করে দিতে হবে। চতুর্থত, যেসব কর্মচারী অর্ডার আনতে এবং পানি সরবারহ করতে যাবে, তাদেরকে অবশ্যই গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের খারাপ ব্যবহারই আপনার সকল পরিশ্রম তথ্য ব্যবসা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তাই মাঝে মাঝে গ্রাহকদের কাছে গিয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন।
লাভ কেমন
একটি জারে সাধারণত ২০ লিটার পানি ধরে। এতে প্রায় ১০০ গøাস পানি হয়। ফ্যাক্টরি থেকে রিভার অসমোসিস পানি পরিবেশকের কাছে প্রতিটি জার ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাধারণ পানি প্রতি জার ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। রিভার অসমোসিস পানি পরিবেশক খুচরা ক্রেতার কাছে জারপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন, আর সাধারণ পানি জারপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। মোটকথা জার প্রতি মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ হয়। সব মিলিয়ে ভালো ব্যবহার ও পানির সঠিক মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রাহক ধরে রাখতে পারলে বিক্রয়কর্মীদের বেতন, সংরক্ষণাগারের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে এই ব্যবসার মাধ্যমে ভালো আয় করা যেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন