সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যথাসময়ে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজপথ থেকে অলিগলি পর্যন্ত অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেহাল হয়ে পড়েছে রাজধানী। রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। সেদিনের সামান্য বৃষ্টিতে নগরির বাণিজ্যক প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত মতিঝিল থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ এলাকা যেভাবে পানিতে তলিয়ে যায় তাতে ভরবর্ষায় কী পরিস্থিতি হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃষ্টির পরে বোঝার কোন উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দক, কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে গিয়ে ঘটে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। এমনকি এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে ময়লা-আবর্জনা ধুলিবালিতে স্তূপ হওয়া সড়কগুলোতে একটু বাতাস হলেই নিঃশ্বাস নেয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। নিঃশ্বাসের সাথে ধুলোবালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। রাজধানীর উন্নয়ন চিত্র সম্পর্কে লিখতে গিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অনেকটা নিয়মনীতি মেনে চললেও দক্ষিণের কাজের কোন কোন সুনির্দিষ্ট তদারকি নেই। একারণে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। উন্নয়ন করতে হলে কাজ করতেই হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, উন্নয়ন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে অনেক দিন থেকেই। এসব উন্নয়নের সাথে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। উন্নয়ন কর্মকা-ের সময় নির্ধারণ এবং গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমেই এ ধরনের কাজ বেশি হয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ কালক্ষেপণের মাধ্যমে দুর্নীতির পথ তৈরি করা। বছরের পর বছর ধরে এটা চলছে। তবে আলোচ্য রিপোর্টে ব্যতিক্রমী বিষয় হচ্ছে, উত্তরের মেয়র জনস্বার্থের দিকে নজর দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। এ এলাকার উন্নয়ন কাজে যথাযথ তদারকি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সংস্কার কাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলেও রাস্তাজুড়ে মাটির স্তূপ নেই। যান চলাচলে ব্যাঘাত নেই। শুধু তাই নয়, দিনের আলোতে এসব কাজ করার অনুমতি নেই। রাতেই শেষ করে দিনে যান চলাচলের উপযোগী করে দেয়ার কঠিন নিয়মাবলী মানা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা ঠিকাদাররাও স্বীকার করেছেন। ঠিকাদারা জানিয়েছেন, কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজ ও স্বাভাবিক নিয়ম মেনে টেন্ডার হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, মেয়র হিসেবে আনিসুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে খরচ করে কাজ নেয়ার সুযোগ আর নেই। স্বাভাবিক নিয়মে টেন্ডার কিনে সর্বনিম্ন রেটে কাজ দেখাতে পারলেই কাজ পাওয়া যায়। ফলে ঠিকাদারদের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্টো চিত্র দক্ষিণের। বলা হয়েছে, বছরের শুরু থেকে চালু হওয়া গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া অংশের সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ এখনো চলছে। এ কাজের জন্য রাস্তার অর্ধেক জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে ইট-পাথর খোয়া। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ পাইপ কেটে বসানো হয়েছে। সড়কটি দিয়ে এক সঙ্গে দুটি গাড়ী চলতে পারছে না। ফলে এখানে সারাক্ষণ যানজট লেগেই আছে। শান্তিনগর-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের অবস্থাও একই রকম। একদিকে নির্মাণ সামগ্রী অন্যদিকে সড়কের অর্থেকেরও বেশি অংশ কেটে চলছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই আছে।
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতাই যে প্রকৃতপক্ষে কাজের ধীরগতি এবং সমস্যার মূল কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আধুনিক যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উন্নয়নের কাজ চলছে কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তির খবর পাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে দ্রুত উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে আমাদের এ প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দিনের পর দিন এ ধরনের কাজ করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাজধানীর উত্তরের অনেকাংশে ওয়াসা ইতোপূর্বে যে কাজ করেছে এখন পর্যন্ত সেভাইে রয়েছে। এসব খানাখন্দকে ইতোপূর্বে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। বছর অতিক্রান্ত হতে চলছে এখনো সে অবস্থাতেই রয়েছে। আরেকটি বর্ষা সমাগত। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্রই জনস্বার্থ নিশ্চিত করার দিকে সংশ্লিষ্টরা নজর দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন