পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বেড়েই চলছে চালের দাম। কেজিতে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আগামী পহেলা বৈশাখের আগে দাম কমার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আড়তদাররা মিল-মালিকদের দায়ী করছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবধরনের চালেই গত এক বছরের তুলনায় গড়ে বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকার মত। রাজধানীর পাইকারী বাজারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে মোটাচালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টট সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এবছর বোরো মৌসুমে মোটা ও মাঝারি ধানের আবাদ কম হওয়ায় মিল-মালিকরা আগেই দাম বড়িয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারী গুদাম এবং দেশের বিভিন্ন মোকাম ও পাইকারী বাজারে বিপুল চালের মজুদ রয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে বাজারে বোরো মৌসুমের চাল চলে আসবে। এঅবস্থায় পুরনো মজুদ চাল বিক্রির জন্য সবাই ব্যস্ত থাকার কথা। অথচ কতিপয় মিল-মালিকের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। তাদের ধারণা, বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী রাখা গেলে আগামী মৌসুমেও দাম ধরে রাখা যাবে। চালের পাইকারী ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মোটাচাল তৈরির ধান এখন অটোমিল মালিকদের কব্জায় রয়েছে। দাম বাড়া বা কমা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেন মিল-মালিকরা। কাওরানবাজারের পাইকারী বিক্রেতা দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, এবার দাম বেড়েছে একটু বেশি। চালের দাম বাড়লেও কৃষকরা এর সুফলভোগ করতে পারেনি।
মজুদ থাকার পরও চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ থাকতে পারে না। এরমধ্যে মোটা চাল যা সাধারণ মানুষের একমাত্র অবলম্বন তার দামই বাড়ছে। এই বৃদ্ধির পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। একশ্রেণীর মিল-মালিক কারসাজি করে এর পূর্ণ সুফল ভোগ করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এতে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত আমন মৌসুমে ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এবছর বোরো মৌসুমে মোটা ও মাঝারি মানের চালের আবাদ কম হয়েছে। এ হিসাব বড় বড় মিল-মালিকদের কাছে চলে আসায় তারা আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে যাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা ও ধান মজুদের জায়গা রয়েছে তারাই দাম বাড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দাম বৃদ্ধির প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিয়েছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়িরা। ব্যাপারটি সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বেখবর থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এমন একটা কিছু যে ঘটতে পারে সে সম্পর্কে তার ধারণা না থাকার কথা নয়। যেহেতু আবাদে সমস্যা হয়েছে, উৎপাদন কম হয়েছে সে কারণে বছরের শেষ দিকে সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকা ছিল কাক্সিক্ষত। সরকার ওএমএসের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা অনেকদিন থেকে করছে তা প্রকৃতপক্ষে সফল হয়নি। এর প্রধান কারণ ওএমএসের মাধ্যমে চাল কিনতে হলে ক্রেতাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। দ্বিতীয়ত. এই চাল মানসম্মত নয়। তবুও হত দরিদ্ররা এ চাল কিনছে নিতান্ত বেঁচে থাকার জন্য। যাদের কিছুটা সামর্থ্য রয়েছে তারা মূলত বাজার থেকেই কম দামের মোটা চাল কিনে খায়। মূল্য বৃদ্ধির বোঝাটা তাদেরই বহন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মুনাফা লুটছে একশ্রেণীর সুবিধাভোগী। এটা কোন বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও চালের দাম বৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। সামনে নতুন ধানের মৌসুম। প্রকাশিত রিপোর্টাদিতে মনে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন হয়ে রয়েছে, আর সুবিধাভোগী ব্যবসায়িরা অপেক্ষা করছে দাম বৃদ্ধি করে মুনাফা করার। একদিকে কৃষক মার খাচ্ছে অন্যদিকে ভোক্তারা মার খাচ্ছে। যে কোন বিবেচনাতেই এটা বলা যায় চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। কোন কারণে মোটাচালে সমস্যা দেখা দিলে যে চালের মজুদ রয়েছে সেই মজুদ চাল বাজার ছেড়ে দেয়া জরুরি। সংশ্লিষ্টরা এব্যাপারে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন