স্বপ্ন ছিল, প্রতিজ্ঞা ছিল, প্রতীক্ষা ছিল। স্বপ্ন সফল হয়েছে, প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে, প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি শ্রীলংকাকে পরাভূত করে শততম টেস্ট জিতে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ছে। এর আগে শততম টেস্টে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। বাংলাদেশ চতুর্থ দেশ, যে এই গৌরব অর্জন করেছে। ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করেছে। শ্রীলংকার মাঠে শ্রীলংকাকে হারানো মোটেই সহজ ছিল না। গত কয়েকটি টেস্টে তার দর্পিত বিজয়ের রেকর্ড ছিল। ৬ মাস আগে বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়াকে শ্রীলংকার মাটি থেকে হোয়াইট ওয়াশ হয়ে ফিরতে হয়। ৯০তম টেস্টে শ্রীলংকার কাছে শোচনীয়ভাবে হার মানে বাংলাদেশ। শততম টেস্টে, যার নাম দেয়া হয় ‘জয় বাংলা’ কাপ, জেতা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিনই ছিল। তার জন্য এই টেস্টে জেতা শুধু প্রয়োজন ও প্রত্যাশাই ছিল না, এর সঙ্গে মর্যাদার প্রশ্নও জড়িত ছিল। জেতার দৃঢ় মনোবল, উদ্দীপনা এবং সুচিন্তিত ও সংঘবদ্ধ লড়াই যে বিজয়কে হাতের মুঠোই এনে দিতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তার প্রমাণ দিয়েছে। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ের মধ্য দিয়ে তারাও তাদের নাম ইতিহাসে সংযুক্ত করে নিয়েছে। বাংলাদেশ শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক অতিক্রম করলেও এটি নিয়ে জিতেছে মাত্র ৯টিতে। ৫১টি সিরিজে জিতেছে ৩টিতে, ড্র ৬টিতে। সর্বশেষ শ্রীলংকা সিরিজে ড্র করেছে। এটি দেশের বাইরে দ্বিতীয় সিরিজ ড্র। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্টে বাংলাদেশ ভালো করেনি। এই পটভূমিতে শততম টেস্ট জয় অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-২০তে নিজের একটি সম্মানজক অবস্থান নির্ধারণ করে নিতে সমর্থ হয়েছে। টেস্ট নিয়ে একটা দুর্বলতা ছিল। সেটাও যে সামনের দিনগুলোতে কেটে যাবে, শততম টেস্ট জয় তারই ইঙ্গিত বহন করে।
ক্রিকেট আমাদের আনন্দের একটি উপলক্ষে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দল কোনো বিজয় লাভ করলে গোটা জাতি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গোটা দেশের মানুষ এ ঐতিহাসিক বিজয়কে আনন্দ-উৎসবের আমেজে উদযাপিত করেছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিএনপির চেয়ারপারসনসহ অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট কেবলই আনন্দের উপলক্ষ নয়, স্বাজাত্যবোধ ও জাতীয় আত্মশ্লাঘাবোধ সৃষ্টিতেও ক্রিকেটের ভূমিকা অনন্য, অসাধারণ। ক্রিকেট আমাদের জাতীয় পরিচিতিকে যে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে, তাকে ধরে রাখতে হবে। স্বীকার করতেই হবে, শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয় তুলনামূলকভাবে ভালো পারফরম্যান্সের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ওয়ানডে ও টি-২০তে ক্রিকেট পরাশক্তিসহ সব দলই বাংলাদেশকে সমীহ করে। টেস্টেও সেই সমীহ বাংলাদেশ আদায় করে নিয়েছে। এখন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। কখনো কখনো যে সব দুর্বলতা পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই সব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। ক্রিকেটে মনোবলের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। দৃঢ় মনোবল না থাকলে কোনো দলের পক্ষেই বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই সঙ্গে দরকার প্রশিক্ষণ ও প্র্যাকটিস। এদিকে আরো বেশি করে নজর দিতে হবে। ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই বিজয়কে অভ্যাসে পরিণত করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ দরকার তা নিশ্চিত করতে হবে।
শততম টেস্ট জেতার স্বপ্ন-প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এখানেই থামলে চলবে না, যেতে হবে বহু দূর। আমরা দেখেছি, ব্যাট, বল ও ফিল্ডিংয়ে সমানতালে লড়ার ফলে বিজয়টি নিশ্চিত হয়েছে। কখনো কখনো আমাদের ক্রিকেটারদের ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার অভাব পীড়া দিয়ে থাকে। ক্রিকেট ভিন্নার্থে বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার খেলাও বটে। এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মোটিভেশনও দরকার। যে দলটি শততম টেস্ট জয়ের গৌরব উপহার দিয়েছে তা মূলত তারুণ্যনির্ভর। তাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সাকিব, মুশফিক, তামিম বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তরুণদের অবদানও কম নয়। তাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। অভিনন্দন জানাই প্রশিক্ষক দল ও ব্যবস্থাপকদের। বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই ক্রিকেট বোর্ডকে। নাজমুল হাসান পাপন বোর্ডের সভাপতি হওয়ার পর বাংলাদেশ দল অনেকগুলো স্মরণীয় বিজয় উপহার দিয়েছে। এই সাফল্যে তার বিশেষ ভূমিকা ও অবদানের কথা অনেকেরই জানা। ক্রিকেটের উন্নয়ন ও বিকাশে আগামীতেও বোর্ড তার উদ্দীপনাময় প্রয়াস-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, এটাই কামনা করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন