ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে যাতে অপরিপক্ব আম পাকানো এবং বাজারজাত করতে না পারে, সেজন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। বিষমুক্ত রসালো ফল আম পাবার বিবেচনায় সিদ্ধান্তটি ভাল হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে সময়ের আগে আম পাকলে তা তারা বাজারজাত করতে পারবেন না। ফলে আগেভাগে যে আম পাকবে সেই বাগান নিয়ে চাষিদের মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গতবছরও কৃষকরা এ সমস্যায় পড়েছিল। সময় বেঁধে দেয়ার কারণে একসঙ্গে বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে চাষিরা ন্যায্য দাম পায়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএসআইডি’র প্রকল্প কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবহাওয়াগত কারণে আম পরিপক্ব হওয়া ও আম পাকার সময়ের মধ্যে তারতম্য হয়। যে বছর আবহাওয়া শুষ্ক ও গরম থাকে সেবছর আম নির্দিষ্ট সময়ের অগেই পেকে যাবে। আবার যে বছর আমের মৌসুমে বৃষ্টি হয় ও আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে সেবছর আম দেরিতে পাকে। আবার যে বাগানে বা আমগাছের যে পাশে সূর্যের তাপ বেশি লাগে সেই পাশের আম দ্রুত পাকে। সেকারণে আম পাকার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া যুক্তিহীন এবং এটা কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাও মনে করেন আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়া সঠিক কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়।
বিষমুক্ত আম পাবার জন্যই মূলত আমপাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। সময় বেঁধে দেয়ার ফলে সুবিধা হয়নি তা কোনভাবেই বলা যাবে না। যারা আম কিনে খান তারা সকলেই স্বীকার করবেন গতবছর বাজারে মোটামুটি ফরমালিনমুক্ত আম পাওয়া গেছে। আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ দুটোই অনুভব করা গেছে। অবশ্য এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকদের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ, আম ঠিক কখন পাকবে এটা সময় ধরে বলা যায় না। কখনো দেখাযায় আগেই পেকে যায় আবার কখনো পরে। বর্তমান সময়ে পানিশূন্যতার কারণে প্রকৃতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তার নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো আমের উপরও পড়ছে। সে বিবেচনায় আম চাষিদের উদ্বেগের যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। অন্যদিকে দেখার রয়েছে এধরনের সিদ্ধান্তের মূল বিষয় কি? অবশ্যই ফলের গুণাগুণ রক্ষা ও যারা কিনে খাবে তারা যাতে বিষমুক্ত আম খেতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে ধরনের বিষ আমে মেশান হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সে বিবেচনায় বিষমুক্ত আমের কোন বিকল্প নেই। এদিকে এখনই বাজারে এক ধরনের পাকাআম উঠেছে এবং তা খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এনিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে বাজারে দেশীয় আম ওঠার অগেই যদি বিষ মেশানো আমের বিক্রি চলতে থাকে তাহলে দেশের আমের কি অবস্থা হবে?
প্রকৃত বিবেচনায় আম ৮০ ভাগ পরিপক্ব হলেই তা পাড়া যায়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে কাঁচা আমে বিষ মিশিয়ে পাকিয়ে বেশিদামে বিক্রি করার প্রবণতা থেকেই সব সংকটের সূত্রপাত। এ ধরনের অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে। একদিকে যেমনি বিষমুক্ত আম প্রপ্তির বিষয়টিতে অপোসহীন থাকতে হবে, তেমনি কৃষক যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। কারণ, কোন নীতির কারণে কৃষক যদি বঞ্চিত হন বা ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে সে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। কৃষক যদি পুঁজি ফেরত না পায় তাহলেও সে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমের বাজাতকরণের সাথে মধ্যস্বত্বভোগীদের সম্পর্ক রয়েছে। মূল জটিলতা সেখানেই। এদের কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা আগেভাগে আম কিনে তা কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে বাজারে ছেড়ে বেশি দাম নেয়ার পক্ষপাতী। এক্ষেত্রে কৃষক নিজেই যদি সতর্ক থাকেন তাহলে অবশ্যই পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন হতে বাধ্য। আশার কথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, এবারে আমপাড়ার সময় নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে দুটো বৈজ্ঞানিক মিটিং করেছেন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। একই জাতের আম বিভিন্ন সময়ে পাকলেও একটি নিরাপদ সময় নির্ধারণ করা হবে। সময় নির্ধারণ করা হলেও পরিপক্ক আম পাড়ার ব্যাপারে শিথিলতা রাখা হবে। সে কারণে আমপাড়া নিয়ে কৃষকদের আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের এব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত রাখা হবে। মোটকথা হচ্ছে, বাজারে যাতে বিষমুক্ত আম পাওয়া যায় এবং কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের মোটামুটি ভাল দাম পায় সেটি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় মনিটরিং থাকা দরকার। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে আন্তরিক ও যত্মবান হলে কার্যত কোন বিরোধ দেখা দেয়ার কথা নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন