গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী থেকে আবারো বাংলাদেশী দুই জেলেকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরনগঞ্জ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে জমিনপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে তিনজন বাংলাদেশীকে আহত করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর সোয়া একটার দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তপিলার ১৮০ ভারতীয় দশদিঘী বিএসএফ ক্যাম্পের জোয়ানরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জমিনপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে হামলা চালায়। এ সময়ে বিএসএফের ককটেলে আহত হয় তিনজন। স্থানীয়দের মতে, দুপুরে কিরনগঞ্জ সীমান্তের একটি ডোবা নালা পুকুরে এলাকাবাসী মাছ ধরার সময় বিএসএফের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীর কয়েকটি গরু ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময়ে গ্রামবাসী বাঁধা দিলে হামলা চালায় বিএসএফ। প্রথমে ওই গ্রামের চৌধুরী ডিলারের ছেলে আবুর বাড়িতে ঢুকে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এ ব্যাপারে ৯ বিজেবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আবুল এহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিএসএফের কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে ভারতীয় পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি রাষ্ট্রেই সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত সমস্যাও নতুন কিছু নয়। সীমান্তরক্ষী হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারাই সীমান্তের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করেন। বাংলাদেশে ঘটছে তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের সীমান্ত কার্যত অরক্ষিত। দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবির অবস্থান দৃশ্যমান হলেও যেখানে তাদের প্রয়োজন সেখানে তাদের কার্যকর ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এপর্যন্ত সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হবার পরেও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, সীমান্তের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশীদের পেটাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার করেছে। এনিয়ে বিজিবি তাদের সাথে আলোচনা করতে গেলে উল্টো বাংলাদেশীদেরই দোষারোপ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো কিভাবে? সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার অর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির বিরুদ্ধাচারণ। কেন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করেনি? সীমান্তের এই অবস্থা যদি চলে তাহলে বিজিবির কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। বলা যায়, একই ঘটনা মিয়ানমারে সাথেও ঘটেছে। মাছ ধরার সময়ে গত শনিবার যে দু’জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে তারই শুধু নয় গত ছয় মাসে নাফ নদী থেকে প্রায় ২৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে লিখিতভাবে প্রতিবাদসহ জেলেদের ফেরত দিতে বিজিবি মিয়ানমারকে জানালেও কার্যত তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। অবস্থা পর্যালোচনায় এটা মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যে বিজিবি তথা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের পাত্তা দিচ্ছে না। অবস্থা যদি এমনটাই হয় তাহলে সীমান্ত নিরাপত্তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করার কারণ রয়েছে। এই বাস্তবতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশীদের যা ঘটছে তা কেবলমাত্র সীমান্ত বিরোধ বললে ভুল হবে। এটি এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের পদধ্বনি। দেখা যাচ্ছে, সীমান্তের লোকজন মাছ ধরতে গেলে, গোসল করতে গেলে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের শিকার হচ্ছে। কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তারা যখন-তখন বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, হত্যা করছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে, সীমান্তবাসীর বেঁচে থাকার অধিকার যেন ভারতীয় বাহিনীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কার্যত এটা জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চেতনার পরিপন্থী। ফেলানী হত্যাসহ এ পর্যন্ত অসংখ্য বাংলাদেশী হত্যাকান্ডের সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা জড়িত। কোন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হয়েছে তা বলার উপায় নেই। অবিলম্বে এর অবসান প্রয়োজন। আলোচ্য ঘটনাবলীই শুধু নয়, গতকয়েক বছরে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন। ভারতের সাথে আচরণে যেমনি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে হবে তেমনি মিয়ানমারের সাথেও এর কোন ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন