সিলেটে টানা ৪ দিনের জঙ্গিবিরোধী সেনা অভিযান “অপারেশন টোয়াইলাইট” সাফল্যের সাথেই সমাপ্ত হয়েছে। ৮৭ ঘণ্টার অভিযানে সিলেটের শিববাড়ীর আতিয়া মহলে এক নারীসহ চারজঙ্গি নিহত হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন সেনা সদরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত অতিয়া মহলের ভেতরে থাকা ৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী রয়েছে। ভেতরে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক থাকায় লাশগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে। অতিয়া মহলে অভিযানকে কেন্দ্র করে ৪ দিনে চার জঙ্গিসহ ১০জন নিহত হয়েছে। শনিবার রাতে জঙ্গি আস্তানার অদূরে একঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে দু’জন আত্মঘাতী জঙ্গি বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছে। অভিযানে যে চারজন জঙ্গি নিহত হয়েছে এদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। মোরাবাজার থানার ওসি জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা দুটি লাশের মধ্যে একটি আলোচিত নারী জঙ্গি মর্জিনার ও অপরটি তার স্বামী পরিচয়দানকারী কাওসারের। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েই তারা বাসা ভাড়া নিয়েছিল। ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানিয়েছেন, দু’জনের লাশ বের করা হয়েছে। এদের একজন নারী একজন পুরুষ। বাকী দু’টি লাশ বের করা হয়নি। প্রতিটি লাশের শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট লাগানো। এ আস্তানায় জঙ্গিদের শীর্ষ কোন নেতা থাকতে পারে বলে ধারণার কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নিহতদের মধ্যে তেমন কেউ রয়েছে কিনা সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তা পুলিশ ও র্যাব দেখে নিশ্চিত করতে পারবে। তবে যে চারজন ছিল তারা ওয়েলট্রেইন্ড। তাদের খুঁজে বের করে যে নিষ্ক্রিয় করা হলো বা হত্যা করা হল, তা সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল সাফল্য।
টানা কয়েকদিন থেকে আতিয়া মহলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গি ভয়ে সর্বত্র বিরাজ করছিল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। ব্যাপারটি শুধু যে সিলেটেই হয়েছে তা নয়, বরং দেশজুড়েই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। জঙ্গি দমন অভিযান এবং আতিয়া মহলে দফায় দফায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও গোলাগুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়েছে। শনিবার রাতে জঙ্গি আস্তানার অদূরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি বোমা বিস্ফোরণে পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬জন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিয়া মহলের আশপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। হামলায় র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানও গুরুতর আহত হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে তার অবস্থা অপরিবর্তিত এবং সংকটজনক। অভিযান সম্পর্কে সেনাকর্মকর্তা জানিয়েছেন দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য আমরা সবাই গর্বিত। আপনারাও গর্ববোধ করতে পারেন। দেশবাসীর দোয়ায় কোন ধরনের বড় ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছেন, ভেতরে জঙ্গিরা এক্সপ্লোসিভ ফুটিয়েছে, গ্রেনেড চার্জ করেছে, গুলি করেছে। জঙ্গিরা সুসাইডালভেস্ট পরা ছিল। তিনি জানিয়েছেন পুরোবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ থাকার কারণেই সতর্কতার সাথে এগুতে হয়েছে। সতর্কতা সত্যিই একটি বড় ব্যাপার। কারণ, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণ জনগণও আক্রান্ত হতে পারত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানিয়েছেন, পুলিশের যে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলাম সেখানে মোটামুটি চারজঙ্গি থাকার তথ্য ছিল। এমন তথ্যও ছিল যে তিনজন পুরুষ একজন মহিলা। রোববারই দুই জঙ্গি নিহত হবার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, দু’জনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাবার পর একজন সুসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে সেনা অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করেছে আইএসপিআর। সিলেটে থাকা আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার জানিয়েছেন আতিয়া ভবনটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার এখনো অবসান হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
অভিযান সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করা এবং অভিযানের খবরাদি সময়মত পরিবেশনের জন্য আমরা সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে বুঝেশুনে অভিযান পরিচালনার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়াতেও তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এখানে উল্লেখ করা দরকার, গুলশানের হলি অর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর রাজধানীর কল্যাণপুরে এবং নারায়ণগঞ্জের পাইকপারাসহ অন্যত্র এবং গত কয়েক দিনে র্যাবের অফিসে, থানায় এবং বিমানবন্দর এলাকায় অনুরূপ অভিযান হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এসব হামলার সাথে বিদেশি কোন সম্পর্ক নেই। আবার এটাও বলা হচ্ছে, এসব হামলাকারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়া হয়েছে। বাস্তবে ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এরফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংগত বিবেচনাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল ইতোমধ্যেই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এধরনের ঘটনার আঁচ সর্বত্রই পড়ে এবং এক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিবারের মতো এবারেও দেখা যাচ্ছে ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে এসবের রুট খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। কেবল অভিযান সমাপ্তির মধ্যদিয়েই তৃপ্তিলাভের কোন সুযোগ নেই। জঙ্গিদের যথাযথ পরিচয় প্রকাশ এবং এদের মূল কোথায় ও কারা এদের পেছনে রয়েছে, তা খুঁজে বের করা অপরিহার্য। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটার আশঙ্কা রয়েছে যা কাম্য নয়। আমরা মনে করি, দেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্টকারী এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করা জরুরি। দেশের অর্থনীতির বিকাশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এর বিকল্প নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন