শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সমন্বিত কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গত রোববার কারওয়ান বাজার এলাকায় সাড়ে তিন বিঘা জমি উদ্ধার করেছে। দেয়াল দিয়ে ঘেরা এ জমি রিকশা-ভ্যান রাখা ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। অভিযান সম্পর্কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, ডিএনসিসির একটি জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে ছিল। আমরা জমিটি দখলমুক্ত করে সংস্থার আওতায় এনেছি। অভিযানে ৩০টি অবৈধ দোকান ও অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করা হয়। অন্য খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই বছর হয় প্রস্তুত হয়ে আছে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেট। প্রতিমাসে ব্যস্থাপনার পেছনে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করছে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু আয় হচ্ছে না এক পয়সাও। বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের দোকান নিতে রাজি করানো যায়নি। এদিকে বহুতল এই মার্কেটের সামনে আবর্জনা ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কাছে ৭ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মোট ৩৬০টি দোকান। একদিকে যখন চলছে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান, তখন দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পসংলগ্ন রূপায়ণ সিটিতে চলছে অবৈধভাবে দখলকৃত প্লট বিক্রি। অন্যের জমি জবরদখল করে বহুল আলোচিত রূপায়ণ সিটির মালিক অবৈধ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। রাজউকের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ প্রকল্পের চেয়ারম্যান আদালতের স্থগিতাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রূপায়ণের উত্তরা সিটিতে বসিয়েছেন মেলা। এ মেলা বসিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্লট বিক্রি করছে রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও রূপায়ণের উত্তরা আবাসিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
একটি আধুনিক পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে হলে সকল মহলের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং উদ্যোগ অপরিহার্য। বিষয়টি কোনো একটি বিশেষ মহলের ওপর ছেড়ে দিলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। কিছুদিন ধরে উত্তরের মেয়র যে অভিযান শুরু করেছেন তার ফলে ইতোমধ্যেই নানা সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। উচ্ছেদ বলতে কেবল বাড়িঘর বা দোকানপাটই বোঝায় না, সব ধরনের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারকে বোঝায়। এ কাজটিই করতে শুরু করেছেন মেয়র অনিসুল হক। কাজটা তার একার নয়। এর আগে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে দুই মেয়রের দৃষ্টিভঙ্গিও এক ও অভিন্ন নয়। একজনের সাফল্য দৃশ্যমান হলেও অন্যজনের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। নগরবাসী বিশেষ করে সচেতন মহল একটি আধুনিক শহর গড়ে তুলতে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক ভূমিকা অবশ্যই কাম্য। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কাছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ নির্মিত মার্কেটটিতে দোকান নিতে অনাগ্রহ কেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। একথা সকলেই স্বীকার করবেন যে, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত যানজটের সাথে এ এলাকার মার্কেটগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। বলা বাহুল্য, যেদিন মার্কেট বন্ধ থাকে সেদিন ওই এলাকায় যানজট তুলনামূলক কম থাকে। শাহবাগ এলাকায়ও যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে বড় বাধা হচ্ছে যত্রতত্র আবাসন গড়ে ওঠা। এ বিবেচনায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কীভাবে নিজে উপস্থিত থেকে রূপায়ণের প্রকল্প উদ্বোধন করলেন, তা বোঝা কষ্টকর। এ ঘটনাকে স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকরা মনে করছেন, মন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে এসে অবৈধ দখলদার ভূমিদস্যুকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
একটি আধুনিক শহর গড়ে তুলতে সকলের সমন্বিত সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রকাশিত খবরাদিতে এবং বাস্তবেও এটা দেখা যাচ্ছে, মেয়র আনিসুল হক সৎ ও আন্তরিক সদিচ্ছা থেকেই আধুনিক নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অনেক পুরনো অনিয়ম ভেঙেই তিনি তার যাত্রা শুরু করেছেন। এযাত্রা যে কুসুমাস্তীর্ণ নয়, তা বোধকরি মেয়র ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন। তার পরও তিনি থেমে নেই। তার এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বাস্তবত তার এই অসাধ্য সাধনের উদ্যমী প্রচেষ্টাকে সফল করতে হলে তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা করা সকলের দায়িত্ব। নতুন করে যারা অবৈধ দখলদার হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে চাচ্ছেন, শুরুতেই তাদের দমন করতে হবে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কীভাবে সকলের চোখের সামনে অবৈধ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে, তা খতিয়ে করে দেখা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন