শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘ বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুমের ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও শুনানির পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি তার এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা ও গুমের বিষয়ে উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকায় কমিটি মন্তব্য করেছে, এর ফলে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারগুলো বিচার পাচ্ছে না। দেশের আইনে গুমের স্বীকৃতি না থাকায় এবং তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় কমিটি আরো উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছে। এবিষয়ে অবিলম্বে আইন পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শক্তি প্রয়োগের মৌলিক নীতিমালা ঠিক করাসহ জবাবদিহির ব্যবস্থা করার আহŸান জানিয়েছে কমিটি। এই সঙ্গে কমিটির পক্ষ থেকে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পূর্ণ অধিকার দেয়ার এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ সহযোগিতা প্রদানের আহŸান জানানো হয়েছে। এই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কার্যপদ্ধতির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত নীতিমালা অনুসরণের তাকিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইসিপিসির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ওই সনদে বর্ণিত সব নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার দেশের প্রচলিত আইনে এখনো পুরোপুরি সংযোজিত না হওয়ার প্রেক্ষিতে এগুলো পুরোপুরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে সব আইন পর্যালোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়েছে যে, সব আইন ওই সনদের পরিপন্থী সেগুলো বাতিল করা উচিত।
বাংলাদেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষত, বিচার বহিভর্‚ত হত্যা ও গুমের ঘটনায় জাতিসংঘের ওই উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ দেশের ভাবমর্যাদার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শুধু জাতিসংঘই নয়, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ প্রায়ই মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। মানবাধিকারের উন্নয়নে নানা পরামর্শও দিয়ে আসছে। কিন্তু বাস্তবে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা দিনকে দিন অবনতি ঘটছে। এইতো ক’দিন আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ কথা কারো অজানা নেই, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুমের ঘটনা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ঘটনা। সবচেয়ে বিচলন ও শংকার বিষয় এই যে, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাÐ ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতেও মৃত্যুর ঘটনা থেমে নেই। অপহরণ বা গুম অনেকটাই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ গুমের ঘটনার সঙ্গে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা বলতে যা বুঝায় বলতে গেলে তা নেই। কে যে কখন কি কারণে গ্রেফতার হয়ে যাবে কিংবা গুম হয়ে যাবে তার কোনো ঠিক নেই। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার ধাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। গ্রেফতার, জামিন এবং এরপর ফের গ্রেফতারÑ এরকম একটি নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
একটি দেশ দীর্ঘদিন এ অবস্থায় চলতে পারে না। মানুষের মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্বিত ও লঙ্ঘিত হতে থাকলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি স্বাভাবিক ধারায় প্রবাহিত হতে পারে না। আজকে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে যে মন্দা আকড়ে ধরেছে তার মূলে রয়েছে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি। এর ফলে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ ও ব্যাহত হচ্ছে, দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ও উচ্চ কোনো ধারণা তৈরি হচ্ছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এব্যাপারে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটি আইপিসি’র সনদ মোতাবেক প্রচলিত আইনের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার যে কথা বলেছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কোনো আইন থাকা ঠিক নয় যা আইপিসি’র সনদের পরিপন্থী এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা বা প্রতিবন্ধক। বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুম সভ্য কোনো দেশে চলতে পারে না এবং এ জন্য যারা দায়ী তারা কোনো বিবেচনাতেই দায়মুক্তি পেতে পারে না। গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন