পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি কাজ অনেকেই করছেন। এই কাজের মাধ্যমে কিছু আয় হলে তো ভালোই, তাই না? পড়াশোনার ক্ষতি না করেই আয় করা সম্ভব। এমন অনেক পথই রয়েছে। এই যেমন লাভ বার্ড পালন। বিদেশি পাখি লাভ বার্ড। আফ্রিকা এর আবাসস্থল। এখন বাংলাদেশে লাভ বার্ড সহজলভ্য। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাথে চাহিদাও বেড়ে চলছে। কম জায়গায় লাভ বার্ড পালন করা যায়। অসুখ-বিসুখসহ অনান্য ঝক্কি-ঝামেলাও কম। তুলনামূলক লাভ অনেক বেশি। লাভ বার্ডের মতো সুন্দর পাখি খুবই কম আছে। এর শরীরজুড়ে নানা রঙ। কণ্ঠ সুমধুর। একে অপরের প্রতি বিচিত্রভাবে ভালোবাসা আদান-প্রদান করে। সে কারণেই হয় এর নাম লাভ বার্ড।
লাভ বার্ড কোথায় পুষবেন : লাভ বার্ড খাঁচার পাখি। এরা খাঁচায়ই থাকতে ভালোবাসে। ১৮-১৮-২৪ ইঞ্চি হল খাঁচার আদর্শ মাপ। আবার ২৪-২৪-২৪ হলেও অসুবিধা নেই। খাঁচা মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার, নিমতলীতে কিনতে পাওয়া যায়। আবার মেটালের কারখানা থেকে বানিয়েও নেয়া যায়। খাঁচায় পকেট গেট রাখতে হবে। যাতে বাইরে ব্রিডিং বক্স লাগানো যায়। ভিতরেও ব্রিডিং বক্স লাগানো যায়। তবে বাইরে লাগালে ভিতরে জায়গা বেশি থাকে। যেটা লাভ বার্ডের ওড়াওড়ির জন্য ভালো। এক হাজার থেকে পনেরোশ’ টাকার মধ্যে ভালো খাঁচা পাওয়া যাবে। ঘর তো বটেই, বারান্দায়ও লাভ বার্ড পালন সম্ভব। ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস লাভ বার্ডের ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা। প্রথম দিকে এক জোড়া লাভ বার্ড পালন করা ভালো। ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ালে রিস্ক থাকে না। আর ও আই হিসাব করলে একবার বাচ্চা দিলেই ইনভেস্টমেন্ট উঠে যাবে। তারপর শুধু লাভ আর লাভ। খাবার দেয়া ছাড়া খুব বেশি টেক কেয়ার করতে হয় না। কমপক্ষে সপ্তাহে একবার খাঁচা পরিষ্কার করতে হবে। লাভ বার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসে। লাভ বার্ড তাদের গায়ে একটুও ময়লা থাকতে দেয় না। লাভ বার্ডের প্রজনন ক্ষমতা অনেক ভালো।
খাবার-দাবার : লাভ বার্ড খুব কম খায়। খাবার নষ্ট করেও কম। লাভ বার্ডের প্রিয় খাবার সিড মিক্স। চিনা, কাউন, সূর্যমুখীর বীজ, কুসুম ফুলের বীজ, সরিষা, গম, ক্যানারি সিড, হ্যাম সিড, গুজি তিল ইত্যাদি পরিমাণ মতো মিশিয়ে যেটা বানানো হয় সেটাই হল সিড মিক্স। এছাড়া কলমি শাক, সজনে পাতা, ফলমূলও লাভ বার্ড খায়। বাসায় এগফুড বানিয়ে খাওয়ালে ভালো হয়। বাজারের খাবারে প্রচুর ধুলাবালি ও ময়লা থাকে। তাই ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে। ডিম দেবার আগে ক্যালসিয়াম, ভিটামিনের পর্যাপ্তটা নিশ্চিত করতে হবে। লাভ বার্ডের বাচ্চা যখন ছোট থাকে, সেই সময়টাতে এগফুড, পাওয়াটি রুটি ভিজিয়ে খেতে দিলে পাখির উপকার হয়। বাচ্চারা ভালো খাবার পাবে। অ্যাপেল সিড ভিনেগার, এলোভেরা, মধু পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। সব সময় না। মাঝে মাঝে। এই খাবার পাখির শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাভ বার্ডের সব খাবারই সহজলভ্য। শীতকালে একটু দাম বেশি থাকে এই যা। খুব সকালে এবং বিকালে লাভ বার্ড খেতে পছন্দ করে। রাতে সব খাবার সরিয়ে রাখা ভালো। প্রতিদিন খাবার পানি পরিবর্তন করতে হবে। ঈদুর, তেলাপোকা, পিঁপড়া মুক্ত রাখতে হবে লাভ বার্ডের খাঁচা।
চ্যালেঞ্জ : মেইল ফিমেইল চেনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লাভ বার্ডের ছেলেমেয়ে দেখতে একই রকম। পাখির আচার-আচরণ, ভেন্ট পরীক্ষা করে চিনতে হয়। যেটা নতুনদের পক্ষে কঠিন হবে। সেজন্য একবার ডিম দিয়েছে এমন লাভ বার্ড কেনা উত্তম। লাভ বার্ডের মেইল ফিমেইলের চাইতে দেখতে সুন্দর হয়। এদের ডাকাডাকিতেও কিছুটা ভিন্নতা আছে। পৃথিবীতে নয় জাতের লাভ বার্ড রয়েছে। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়, লুটিনো, ফিসার, রোজি ফেসড, পিচ ফেসড, চিক মাস্ক ইত্যাদি প্রজাতি।
অসুখ-বিসুখ : লাভ বার্ডের অসুখ হয় না বললেই চলে। এরা খুব শক্ত শরীরের পাখি। বদহজম, শীতের সময় ঠাÐা লাগতে পারে। এজন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে। ঢাকার নীমতলীতে পাখির ডক্টর রয়েছেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা সেখানে রয়েছে। পাখি পালনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খুব দরকারী। নতুনরা অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখতে পারেন।
লাভ বার্ড কেনা-বেচা : ফেসবুকে পাখির বিক্রির অনেকগুলো গ্রæপ রয়েছে। সেখানে ফ্রি অ্যাড দিয়ে পাখি বিক্রি করা যায়। কেনাও যায়। এ বিষয়ে লাভ বার্ড স্পেশালিস্ট মির্জা ইসকান্দার বলেন- ভালো ব্রিডারের কাছ থেকে পাখি না কিনলে ঠকতে হতে পারে। পাখির স্বাস্থ্য ভালো কিনা বয়স অনুপাতে, ভেন্ট পরিষ্কার কিনা, আচার-আচরণ স্বাভাবিক কিনা এসব দেখতে হয়। পরিবেশ এবং অতিরিক্ত ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারণে অনেক সময় দোকানের পাখি ভালো হয় না। জাত ভেদে লাভ বার্ডের দাম বিভিন্ন রকম। লাভ বার্ডের সর্বনি¤œ বাচ্চার দাম ৩০০০। বাংলাদেশে এমনও লাভ বার্ড আছে যার ২টা (এক পেয়ারের) দাম লক্ষাধিক টাকা। ফেসবুকে লাভ বার্ড স্পেশালিস্টদের সাথে লিংক করতে পারলে ভালো হয়। কাটাবনের দোকানদারদের কাছেও পাখি বিক্রি করা যায়।
অভিজ্ঞতা : বাংলাদেশে যে কজন হাতেগোনা ব্যক্তি দুর্লভ প্রজাতির লাভ বার্ড পালন করেন। তাদের মধ্যে একজন মির্জা ইসকান্দার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে কর্মরত আছে। থাকেন ঢাকার শেওরাপাড়া। সেখানেই তার লাভ বার্ডের মনোমুগ্ধকর পক্ষিশালা। ৩৫ জোড়া লাভ বার্ড তার খামারে রয়েছে। সুদূর স্পেন থেকেও তিনি লাভ বার্ড আনিয়েছেন। শখে এবং ভালোবেসে তিনি লাভ বার্ড পালন করে থাকেন। তিনি বলেন, লাভ বার্ড লাভারদের আমি সব রকমের সহযোগিতা করি। তার মতে, বাংলাদেশ লাভ বার্ড পালনের জন্য খুবই সম্ভবনাময়। পড়াশোনার পাশাপাশি লাভ বার্ড পালন করে অর্থ উপার্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। যারা লাভ বার্ড পালন করতে চান তারা মির্জা ইসকান্দার পক্ষিশালা ঘুরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
১ মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন